Published : 21 May 2025, 08:43 PM
২০ মে, মহান চা শ্রমিক দিবস— একটি দিন, যা শুধু একটি স্মরণ নয়; এটি একটি জাতির শ্রমজীবী মানুষের আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ের ইতিহাস বহন করে। ১৯২১ সালের এই দিনেই চাঁদপুরের মেঘনা নদীর তীরে সংঘটিত হয়েছিল উপমহাদেশের ইতিহাসে চা শ্রমিকদের ওপর পরিচালিত এক ভয়াবহ গণহত্যা। সেই গণজাগরণ ‘মুল্লুকে চলো’ আন্দোলন বা ‘চরগোলা এক্সোডাস’ নামে ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে। এই আন্দোলন ছিল শত শত বছরের ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার চায়ের বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য চা বাগানের গোড়াপত্তন করে। শ্রমঘন এই শিল্পে স্থানীয় জনশক্তির অভাব মেটাতে দালাল নিয়োগের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত, বিশেষ করে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ ও দক্ষিণ ভারত থেকে শ্রমিক আনতে শুরু করে। এই দালালরা ‘আরকাট্টি’ নামে পরিচিত ছিল এবং তারা গরিব ও নিম্নবর্ণের মানুষদের মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে চা বাগানে নিয়ে আসে— ‘গাছ নড়লে টাকা পড়ে’, ‘মাটি খুঁড়লে সোনা পাওয়া যায়’— এমন সব বিভ্রান্তিকর আশ্বাসে। কিন্তু শ্রমিকদের জন্য বাস্তবতা ছিল ভয়াবহ। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে বিষাক্ত প্রাণী, অনুন্নত আবাসন, অনাহার, রোগব্যাধি আর মালিকদের চরম নিপীড়ন ছিল নিত্যসঙ্গী। নামমাত্র মজুরি, অমানবিক কাজের পরিবেশ এবং বন্দিদশার মতো জীবন চা শ্রমিকদের ধীরে ধীরে ক্ষোভে উত্তাল করে তোলে।
এই শোষণের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের প্রতিবাদ সময়ের সঙ্গে রূপ নেয় বৃহত্তর আন্দোলনে। ১৯২০ সাল নাগাদ করিমগঞ্জ, ধলই, সিলেট ও কাছাড় ভ্যালির চা বাগানগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ তীব্রতর হয়। অবশেষে ১৯২১ সালের মে মাসে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক সিদ্ধান্ত নেন— তাঁরা আর চা বাগানে থাকবেন না; ফিরে যাবেন নিজ জন্মভূমিতে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ও বাগান মালিকদের যোগসাজশে বন্ধ করে দেওয়া হয় রেল যোগাযোগ। বিকল্পহীন হয়ে শ্রমিকেরা রেলপথ ধরে হেঁটে রওয়ানা দেন চাঁদপুর স্টিমারঘাটের দিকে। নেতৃত্বে ছিলেন পণ্ডিত গঙ্গাচরণ দীক্ষিত, দেওশরণ ত্রিপাঠী ও হরিচরণ প্রমুখ। ২০ মে, চাঁদপুরে পৌঁছানোর পরই ইতিহাস সাক্ষী হয় এক নির্মম গণহত্যার। আসাম রাইফেলসের গোর্খা বাহিনী ব্রিটিশ প্রশাসকের নির্দেশে গুলি চালায় নিরস্ত্র, ক্লান্ত ও প্রতিবাদী শ্রমিকদের ওপর। শত শত শ্রমিক প্রাণ হারান, কেউ কেউ বলেন সংখ্যাটি হাজার ছাড়িয়েছিল। অনেক লাশ মিশে যায় মেঘনার ঢেউয়ে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে রেলশ্রমিক, স্টিমার শ্রমিক ও আসাম-বাংলার বহু শ্রমজীবী মানুষ ধর্মঘটে সামিল হন। জাতীয় নেতারা যেমন, মহাত্মা গান্ধী, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু—দৌড়ে আসেন চাঁদপুর। এই রক্তাক্ত বিদ্রোহ শুধু শ্রমিক অধিকারের প্রশ্নকেই তুলে ধরেনি, বরং একটি সর্বভারতীয় শ্রমিক আন্দোলনের বীজ বপন করেছিল বাংলার বুকেই।
মুল্লুকে চলো আন্দোলন বা চরগোলা এক্সোডাসের ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ, গবেষণা ও প্রতিবেদনে উঠে আসে চা শ্রমিকদের মানবিক বিপর্যয়ের চূড়ান্ত পরিণতি। একদিকে আসাম গোর্খা কমান্ড বাহিনীর গণহত্যা ও অপরদিকে কলেরা মহামারীর মাঝে চা শ্রমিকদের বাঁচার আর কোনো উপায় ছিল না।
ইতিহাসবিদ কে. চট্টপাধ্যয়ের মতে, আসামের চা বাগানগুলোতে শোষণ দীর্ঘদিন ধরে অজ্ঞাত থেকে গিয়েছিল, কারণ অঞ্চলটি ভৌগোলিকভাবে দুর্গম ছিল। তবে, পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায় যখন কলকাতার কিছু মিশনারি ও সমাজ সংস্কারক এই চা বাগানগুলোর অবস্থান ও শ্রমিকদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানার জন্য আগ্রহ দেখান। সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের কিছু 'উৎসাহী' সদস্য আসামের চা বাগানগুলো পরিদর্শন করেন এবং সেখানে শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন বাংলার প্রধান দৈনিক ও পত্রিকায় প্রকাশ করেন।
এস এন মুখোপাধ্যায়ের ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ সোশ্যাল ওয়ার্কের ‘লেবার আনরেস্ট ইন টি প্ল্যান্টেশন’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয় এসময়েই ভারতে স্বরাজের জন্য জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তুঙ্গে উঠছিল। শিলচর এবং আসামের অন্যান্য শহর থেকে আসা স্থানীয় নেতারা চা বাগানে অনুষ্ঠিত অসহযোগ আন্দোলনের সভায় বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। প্রতিবেশী চা বাগান থেকে অনেক শ্রমিক ১৯২১ সালের ১ ও ২ মে তারিখে চারগোলা উপত্যকার রাতাবাড়িতে আয়োজিত সভাগুলোতে অংশ নেন । বক্তারা ব্রিটিশ চা বাগান মালিক ও ব্যবস্থাপকদের শ্রমিকদের শোষণের জন্য দায়ী করেন এবং তাঁদেরকে শয়তানের সঙ্গে তুলনা করে অসহযোগের ডাক দেন। এর পরদিনই ৭৫০ জন শ্রমিক তাঁদের পরিবারসহ অনিপুর ছেড়ে করিমগঞ্জের দিকে রওয়ানা দেন ।
ইতিহাসবিদ নিতিন বর্মার ‘কুলিজ অফ ক্যাপিটালিজম’ বই ও চরগোলা এক্সোডাস নিয়ে প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা যায় তাঁরা চা বাগানে ঔপনিবেশিক শোষণ ও দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে মধ্যপ্রদেশে নিজেদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই শ্রমিকরা মহাত্মা গান্ধীর নামে জয়ধ্বনি দিতে দিতে মধ্যভারতের দিকে যাত্রা শুরু করেন । এই প্রতিবাদে অন্যান্য চা বাগানেও ব্যাপক সাড়া পড়ে এবং জুন ১৯২১-এর মধ্যে অনেক বাগান জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে। চারগোলা উপত্যকার দুটি বাগান প্রায় সমস্ত শ্রমিক হারায় এবং অধিকাংশ বাগানে ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শ্রমিক সংকট দেখা দেয়।
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ কানাডার উইন্ডসোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক কল্যাণ কে সরকারের ১৯৮৭ সালে 'কুলি এক্সোডাস ফ্রম আসাম'স চরগোলা ভ্যালি, ১৯২১' শীর্ষক গবেষণা থেকে জানা যায় চারগোলা নির্বাসন বা ‘মুলুক চলো’ আন্দোলন ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। 'মুলুক চলো' বা 'চলো চলো মুল্লুকে চলো' এই স্লোগান আসামের সুরমা উপত্যকার চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
বিকাশ নাথের 'টি প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স অব আসাম অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল মুভমেন্ট' বইয়ে উল্লেখ করা হয় ১৯২১ সালের মে মাসে আসামের ১৭টি চা বাগান থেকে ৮,৭৯৯ জন শ্রমিক পালিয়ে যান। এই নির্বাসন ছিল চা বাগান-নির্ভর শোষণ ব্যবস্থা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে অভিবাসী শ্রমিকদের প্রাথমিক ও সংগঠিত প্রতিরোধ। চারগোলা উপত্যকার চা বাগানগুলোতে অত্যন্ত নিম্ন মজুরি ছিল শ্রমিক অসন্তোষের অন্যতম প্রধান কারণ। ১৯২০-২১ সালে পুরুষদের মাসিক মজুরি ছিল ৬.৪৪ থেকে ৯.৩৬, নারীদের জন্য ৩.৪৪ থেকে ৬.৫৬ এবং শিশুদের জন্য ২.৪৪ থেকে ৪.৫৬ রুপি। তবে এই নির্বাসনের ফলে ব্রিটিশ সরকার ও মালিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে কারণ এটি ঔপনিবেশিক অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারত। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের এই উত্তেজনার জন্য দায়ী করেন। অন্য এক হিসাবে, অধ্যাপক কল্যাণ কে. সরকার উল্লেখ করেন চারগোলা উপত্যকা থেকে ৭,০০০ থেকে ১০,০০০ শ্রমিক পলায়ন করেন।
নিতিন বর্মা উল্লেখ করেন দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি ব্রিটিশ মালিকদের দ্বারা উপেক্ষিত হয়; তাঁরা বলেন এতে বাগানের অর্থনৈতিক টিকে থাকা সম্ভব হবে না ।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে অর্ণব দে একটি গবেষণায় বলেন, শ্রমিকদের থামাতে সরকার দমনমূলক ব্যবস্থা নেয়। পদ্মা নদীর তীরে চাঁদপুরে যাত্রাপথে শ্রমিকদের ওপর ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনী আক্রমণ চালায়। ১৯২১ সালের ২০ মে রাতে চাঁদপুর রেলস্টেশনে ঘুমন্ত শ্রমিকদের ওপর গুর্খা রেজিমেন্ট হামলা চালায়। শত শত শ্রমিক নিহত হন এবং হাজারের বেশি আহত হন।
দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক রানা বেহালের ১৯৮৫ সালের 'ফর্মস অফ লেবার প্রোটেস্ট ইন আসাম ভ্যালি টি প্ল্যান্টেশন ১৯০০-১৯৩০' শীর্ষক গবেষণায় উল্লেখ করেন চা বাগানের শ্রমিক আন্দোলন ঔপনিবেশিক শাসনের কঠোর নিয়ন্ত্রণ, গোপন নজরদারি, ও শ্রমিকদের বিচ্ছিন্ন অবস্থানের কারণে একটি সমন্বিত ও সংগঠিত আন্দোলনে পরিণত হতে পারেনি । তবুও, এই আন্দোলন কলকাতার বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী নেতা, মুক্তিযোদ্ধা এবং সংবাদপত্রগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সরকার ১৯২০–১৯২২ সালের ঘটনাবলি তদন্তে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। ২০২১ সালে চারগোলা নির্বাসনের একশো বছর পূর্ণ হয়। এটি ছিল চা বাগানে দাসত্ব ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহগুলোর একটি।
২৭ জুন ১৯২১ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে মুল্লুকে চলো আন্দোলন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। হাউজ অব কমন্সের রেকর্ডবুকে ‘চারগোলা ও লঙ্গাই উপত্যকার চা-বাগান থেকে কুলিদের স্থানান্তর’ প্রসঙ্গে আলোচনাটি নথিভুক্ত আছে।
মুল্লুকে চলো আন্দোলনের প্রাক্বালে আসাম ও বেঙ্গল সরকারের পৃথক দুটি বিবৃতিতে চা-বাগান থেকে ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে আনা চা-শ্রমিকদের (তৎকালীন ভাষায় ‘কুলি’) পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।
আসাম সরকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই কুলিরা প্রথম ধর্মঘটে বসে ২ মে তারিখে, এবং এরপর অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বাহ্যিকভাবে ধর্মঘটের কারণ ছিল মজুরি বৃদ্ধির দাবি। যদিও সরকার ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়, তা সত্ত্বেও আন্দোলন থামেনি। মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ৬,০০০ থেকে ৭,০০০ কুলি চা-বাগান ছেড়ে চলে যায়। তারা করিমগঞ্জ শহরে জড়ো হয়, যার ফলে পৌর কর্তৃপক্ষকে চরম সমস্যায় পড়তে হয় এবং কুলিরাও চরম দুর্ভোগে পড়ে। সরকার তাদের জন্য খাদ্য সরবরাহ করে, একবার চাল বিতরণও হয়। এরপর কুলিদের মধ্যে ধারণা ছড়িয়ে পড়ে যে, সরকারি খাদ্য গ্রহণ করলে তাদের আবার বাগানে ফেরত পাঠানো হবে। ধীরে ধীরে অধিকাংশ কুলি ট্রেনের টিকিট ছাড়াই জোর করে চড়ে টিপ্পেরার চাঁদপুরে চলে আসে। এ ঘটনায় কুলিদের দুঃখ-কষ্ট ও কষ্টের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়নি এবং অনেকবার অভিযোগ তোলা হয়েছে যে এই বিদ্রোহ স্বতঃস্ফূর্ত ছিল, কম মজুরি ও নিষ্ঠুর আচরণের ফল ছিল। অন্যদিকে মালিকরা মনে করেন, কিছু কু-প্ররোচক ব্যক্তি কুলিদের মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে বিভ্রান্ত করায় তারা বাগান ছেড়ে পালিয়েছে। যারা প্রথমে বাগান ছেড়ে যায় তারা ‘মহারাজ গান্ধী’র নাম নিয়ে বলেছিল, তারা তাঁর আদেশ পালন করছে।
প্রতিবেদনের পরবর্তী অংশে চা শিল্পের অবস্থা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই অঞ্চল থেকে যে চা উৎপন্ন হয় তা সাধারণ মানের এবং গত বছর কম দামের কারণে এই শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকার জানায়, যুদ্ধকালীন সময়ে যেসব মজুরি পাওয়া যেত, তা এই সময় পাওয়া যাচ্ছিল না, কিন্তু অতিমাত্রায় কম মজুরির অভিযোগ সত্য নয়। যদিও অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ কমে গিয়েছিল, তথাপি শ্রমিকরা আইনগতভাবে নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি অন্তত পাচ্ছিল। কোনও নির্দিষ্ট নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি, কারণ বাগানগুলো নিয়মিত সরকারি পরিদর্শনে থাকে। সরকার কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ তদন্তে আগ্রহী, এবং যেসব গল্প ছড়ানো হয়েছে তার অনেকগুলোকে "ইচ্ছাকৃত মিথ্যা" বলে অভিহিত করেছে। গৃহপথে ফেরার পথে শ্রমিকদের অবস্থা দেখেই তাদের ক্ষুধার্ত বলা যায় না। এছাড়াও, সরকার নিশ্চিত যে কিছু ব্যক্তি, যারা চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত নয়, তারা বেশ কিছুদিন ধরে ইউরোপীয় ও সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে কুলিদের উসকানি দিয়ে আসছে, যদিও তারা ফৌজদারি আইনের আওতার বাইরে থেকে কাজ করছে। কুলিদের অনেকেই অর্থনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিক বা আদর্শগত কারণে এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছে বলে জানিয়েছে। সরকার মনে করে, জোর করে কুলিদের বাগানে ফেরত পাঠানো অনুচিত ও সম্ভব নয়, এবং যারা স্বেচ্ছায় কাজ ছেড়ে চলে গেছে তাদের সরকারি খরচে বাড়ি ফেরানোর কোনও পরিকল্পনা ছিল না। তবে অসুস্থ, দরিদ্র, নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সরকার ও চা শিল্প মজুরি বৃদ্ধির প্রয়োজন স্বীকার করেছিল এবং তা নিয়ে তদন্তও প্রায় শেষের পথে ছিল।
চাঁদপুরে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির ভুল ব্যাখ্যা হওয়ায়, বঙ্গ সরকার গভর্নর স্যার হেনরি হুইলারকে তদন্তে পাঠায়। তিনি ৩ জুন দার্জিলিং ফিরে এসে রিপোর্ট দেন। ৯ মে থেকে কুলিদের আগমন চাঁদপুরে শুরু হয়। তখন টিপ্পেরার কালেক্টর মি. ওয়্যারস এক হাজার কুলিকে তাদের বাড়ি পৌঁছে দিতে বিশেষ স্টিমারের ব্যবস্থা করেন; খরচ সরকার অনুমোদিত দাতব্য তহবিল থেকে দেয়া হয়। ১৬ ও ১৭ মে আবারও কয়েকশ কুলিকে একইভাবে পাঠানো হয়। কিন্তু ১৭ মে সরকারের মতামত ছিল, এগুলোর ব্যয়ভার তারা নিতে পারবে না। এরপর আর কোনও কুলিকে সরকারি খরচে পাঠানো হয়নি। ১৯ মে, চাঁদপুরে প্রায় ১,৫০০ কুলি রেল স্টেশনে অবস্থান করছিল। আরও ৫০০ আসার কথা ছিল। তাদেরকে একটি ফুটবল মাঠে স্থানান্তরের চেষ্টা হয়, অস্থায়ী আশ্রয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তারা স্টেশন ছাড়তে রাজি ছিল না, ভয়ে যে তাদের ফেরত পাঠানো হবে। এদিন রাতেই প্রায় ৪০০ জন কুলি গোয়ালন্দগামী স্টিমারে জোর করে উঠে পড়ে, আর কিছু উঠে পড়ে নারায়ণগঞ্জগামী নৌকায়। জনতা গান্ধীজির নামে জয়ধ্বনি দিতে থাকে, কয়েকজন ব্রিটিশও আক্রান্ত হন। পরের দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। ২০ মে স্বাস্থ্য বিভাগের মত ছিল, সেখানে অবস্থান করলে জনস্বাস্থ্যের ভয়ানক ক্ষতি হবে। ইতোমধ্যেই কলেরা ছড়িয়ে পড়েছে– রেলওয়ের ৫ জন কর্মী এবং ৯ জন কুলি আক্রান্ত হয়। দাক্ষা থেকে ৫০ জন সীমান্ত রাইফেলস সেনা পাঠানো হয়। পুলিশ স্টেশন খালি করতে গেলে কুলিরা বাধা দেয়। পুলিশ প্রথমে অনুরোধ করে, পরে হালকা বলপ্রয়োগ করে ফুটবল মাঠে স্থানান্তরিত করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, জোর প্রয়োগ ছাড়া তারা সরত না, এবং বলপ্রয়োগ অতিরিক্ত ছিল না।
২১ মে চাঁদপুরে হরতাল ডাকা হয়, কারণ সরকার শ্রমিকদের ফেরানোর ব্যয় নেয়নি। ২৪ মে রেল ধর্মঘট, ২৫ মে চট্টগ্রামে ধর্মঘট, ২৭ মে স্টিমার সার্ভিসেও ধর্মঘট শুরু হয়। অন্যান্য অঞ্চলেও সহানুভূতিশীল হরতাল হয়। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের স্বাক্ষরযুক্ত চিট ছাড়া দোকানদার পণ্য বিক্রি বন্ধ করে। ইউরোপীয় ও সরকারি কর্মচারীরা চরম সমস্যায় পড়ে যান, অনেকে তাদের গৃহকর্মী হারান। ভয়ভীতি ছড়ানোর অভিযোগও আসে। মে মাসের শেষার্ধে কলেরা ও রোগে মৃত্যু হয় অন্তত ১৬০ জনের, বলে জানায় তৎকালীন চাঁদপুর স্বাস্থ্য বিভাগের ডা. বাত্রা।
স্যার হেনরি হুইলার উল্লেখ করেন যে তিনি তদন্তের সময় তিনটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন:
(ক) ২০শে মে-র ঘটনায় কতজন আহত হয়েছেন এবং তাদের আঘাতের প্রকৃতি কী,
(খ) স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা কতটা কার্যকর ছিল,
(গ) হরতাল ও ধর্মঘটের পেছনে কী কারণ ছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবল দুটি ঘটনা ছিল যেগুলোকে গুরুতর বলা যেতে পারে, এবং কোথাও বেয়নেটের আঘাতের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এরপর ডা. বাত্রা যেসব স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন, তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয় এবং এই কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় নেতাদের পক্ষ থেকে তিনি যেসব বাধার মুখে পড়েন, তাও উল্লেখ করা হয়।
চাঁদপুরে থাকা এক হাজার কুলিকে পরিত্যক্ত পাট গোডাউনে স্থান দেওয়া হয় এবং সেখানেই তাদের যত্ন নেওয়া হয়। কিন্তু প্রায় ৫০০ জন কুলি শহরের মধ্যেই থেকে যায়। ডা. বাত্রা বারবার অনুরোধ করার পরও স্থানীয় নেতারা তাদের স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে অক্ষমতা প্রকাশ করেন, যদিও শহরে মহামারীর আশঙ্কা ছিল। এই কুলিরা নিঃসন্দেহে জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপদের উৎস ছিল। কমিশনার ও কালেক্টর দুজনেই ডা. বাত্রার উদ্যোগ ও দক্ষতার প্রশংসা করেন। তবে দেখা গেছে, অসহযোগ আন্দোলনকারী দলের কারণে তিনি বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হন। ২১ মে হরতালের ফলে সবকিছু সংগ্রহে বিঘ্ন ঘটে, বিশেষ করে দুধ ও শাকসবজি সংগ্রহে। স্থানীয় নেতাদের স্বাক্ষর ছাড়া কোনও কিছু কেনা সম্ভব ছিল না। ২৮ মে পরিস্থিতি চূড়ান্তে পৌঁছায়, যখন ডা. বাত্রা দুধ খাদ্য চেয়ে চেয়ে অসহযোগ নেতা বাবু হরদয়াল নাগকে চিঠি পাঠান, এবং উত্তরে পান:
"আমাদের চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকদের পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ আসায় আমরা কুলিদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা নিয়েছি; ফলে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের আপনার হাসপাতাল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।" এরপর ডা. বাত্রা তার কর্মীদের নিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম থেকে সরে আসেন। তবে স্যার হেনরি স্থানীয় নেতাদের জানান, ডা. বাত্রা ও তার দল এখনও সাহায্য করতে প্রস্তুত।
স্যার হেনরি হুইলার এরপর হরতাল ও ধর্মঘটের পেছনের কারণ নিয়ে স্থানীয় নেতাদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে নিচের মন্তব্য করেন:
১) কুলিদের রেলওয়ে চত্বর থেকে সরানো জরুরি ছিল। এখানে যে বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল তা অতিরিক্ত ছিল না। বেয়নেট ব্যবহারের যে গল্প ছড়িয়েছে, তা ভিত্তিহীন।
২) স্থানীয় ত্রাণ কর্মকর্তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।
৩) ২১ মে হরতাল ও পরবর্তী দুটি ধর্মঘট কুলিদের কল্যাণকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সরকারের কর্মকর্তারা যারা কুলিদের সাহায্যে নিযুক্ত ছিলেন, তাদের সময় ও শক্তি অন্য দিকে ব্যয় করতে হয়েছে। ফলে ত্রাণ কাজ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
৪) বর্তমান যে হরতাল ও ধর্মঘট চলছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সরাসরি আন্দোলনের একটি রূপ। কুলিদের কল্যাণ এখন স্থানীয় নেতাদের কাছে গৌণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
৫) স্থানীয় নেতারা অন্তত দুবার কুলিদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রয়াসকে ব্যাহত করেছেন। স্টিমার ধর্মঘট চলতে থাকলে কুলিদের আর কোথাও পাঠানো সম্ভব হবে না।
স্যার হেনরি আরো উল্লেখ করেন মিশনারি রেভারেন্ড সি. এফ. অ্যান্ড্রুজ, যার কাছে নিজস্ব তহবিল রয়েছে, তিনি চাইলে এই কুলিদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে পারেন। সুতরাং এখন তাদের আটকে রাখার পূর্ণ দায়ভার স্থানীয় নেতাদের ওপর।
চা-শিল্পের উৎপত্তি পূর্ব ভারতে এক পুঁজিবাদী শোষণের প্রকল্প হিসেবে শুরু হয়, যার নেতৃত্বে ছিল ঔপনিবেশিক শাসকেরা। এই বাগানগুলো মূলত সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থে গড়ে তোলা হয়, যাতে বিশ্ববাজারে চায়ের ওপর চীনের আধিপত্য হটিয়ে দেওয়া যায়। স্থানীয় বনভূমি ও পতিত জমিকে জোরপূর্বক দখল করে, তাকে বাণিজ্যিক উৎপাদনের খামারে পরিণত করা হয়; এবং সেই উৎপাদন চালানোর জন্য তৈরি করা হয় এক নির্মম শোষণের কাঠামো। চা-বাগান হয়ে ওঠে শ্রমিকশ্রেণীর নিপীড়নের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে অভিবাসী শ্রমিকদের অমানবিকভাবে কম মজুরিতে নিয়োগ করা হয়, তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন চলে, এবং এক ধরনের নজরদারিমূলক দমনব্যবস্থার ভেতরে বসবাস করতে বাধ্য করা হয়। এই উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে সৃষ্ট মুনাফা স্থানান্তরিত হয় পুঁজিপতি ও ঔপনিবেশিক ক্ষমতাকেন্দ্রে, আর শ্রমিকদের জন্য থেকে যায় কেবল দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও বঞ্চনা।
বিশেষ করে সিলেটের চা-বাগানগুলোতে এই শ্রেণি-শোষণের রূপ ছিল চূড়ান্ত। এতটাই অমানবিক ছিল বাস ও কাজের পরিবেশ যে, উনিশ শতকে শ্রমিকেরা একাধিক বিদ্রোহে জড়িয়ে পড়েন। ঐতিহাসিক মুল্লুকে চলো আন্দোলন ছিল এই শ্রেণিসংগ্রামের প্রতীক। কিন্তু সেই বিদ্রোহের এক শতাব্দী পরেও চা-বাগানের কাঠামো মূলত অপরিবর্তিত থেকে গেছে—শ্রমিকরা এখনো সেই একই ঔপনিবেশিক শোষণমূলক ব্যবস্থায় আবদ্ধ। স্বাধীনতার বাংলাদেশেও চা-বাগানভিত্তিক আদিবাসী শ্রমিক সমাজ আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে মূলধারার সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। তারা জমির মালিকানার অধিকার পায়নি, যা তাদের প্রতি পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ও পুঁজিপতিদের ঐক্যবদ্ধ অবহেলার বহিঃপ্রকাশ। শ্রমিক ও তাদের পরিবারের অধিকাংশই এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছেন—অসুস্থ জীবনযাত্রা, অস্বাস্থ্যকর আবাসন, নিম্ন শিক্ষার হার এবং পুষ্টিহীনতা তাদের নিত্যসঙ্গী।
চা-বাগান এলাকাগুলো বর্তমানে মানবিক বিপর্যয়ের হটস্পটে পরিণত হয়েছে। ঔপনিবেশিক আমলে নির্ধারিত যে মজুরি কাঠামো ছিল, তা প্রায় অপরিবর্তিত থেকেছে। এই অবস্থা দেখেও রাষ্ট্র কার্যত নির্বিকার—চা-বাগানের সমাজকল্যাণ ও নিরাপত্তার দায় বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দিয়ে রাষ্ট্র একটি নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। চা-বাগানের ভেতরে বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা না থাকায়, শ্রমিকেরা বাধ্য হচ্ছেন শহরে গিয়ে সস্তা শ্রমিক হিসেবে বিক্রি হতে। এই শ্রম-অভিবাসন আসলে এক ধরনের আধুনিক দাসত্ব, যার চক্র থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন একটি সামাজিক বিপ্লব।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্রে এই অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হলো চা-বাগান কাঠামোর বৈপ্লবিক রূপান্তর। বাগানের ভূমি শ্রমিকদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে—কারণ উৎপাদনের মূল চালিকাশক্তি তারাই। ‘ঘোষিত নয় এমন দাসত্ব’ নির্মূল করতে হলে, জমির ওপর শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং রাষ্ট্রকে শ্রমিকের প্রতি দায়বদ্ধ করতে হবে। চা শ্রমিকদের জন্য বৈষম্যমূলক লেবার অ্যাক্ট পুনঃপর্যালোচনা করে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। কেবল বেসরকারি বাগান মালিকদের ওপর নির্ভর করে নয়, রাষ্ট্রকেই শ্রমিকশ্রেণীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে এবং পঞ্চায়েতভিত্তিক বিকেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে, চা-বাগানগুলোতে প্রকৃত গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। চা-বাগান হতে হবে শ্রমিক-নিয়ন্ত্রিত উৎপাদন ব্যবস্থার একটি মডেল, যেখানে শোষণের বদলে থাকবে যৌথ মালিকানা, সম্মানজনক জীবন এবং শ্রেণিমুক্তির পথ।
এই রূপান্তর চা শ্রমিকদের শুধু দারিদ্র্য থেকে নয়, শোষণ ও বঞ্চনার চিরস্থায়ী চক্র থেকে মুক্ত করার পথে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আজকের দিনটি তাই শুধুই স্মরণ নয়, এটি প্রতিবাদ ও পুনরাবৃত্ত না হওয়ার শপথ। চা শ্রমিকদের ত্যাগ ও সংগ্রামের মুল্লুকে চলো আন্দোলনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এটি একটি রক্তিম বেদনাবিধুর গৌরবগাথা—যেখানে জড়িয়ে আছে শ্রমিকের ঘাম, অশ্রু, রক্ত আর তাদের বাঁচার আকুতি। মুল্লুকে চলো আন্দোলন বা চা শ্রমিক দিবস কেবল অতীতের কোনো ঘটনা নয়, এটি একটি চলমান ইতিহাস, যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদই একমাত্র মুক্তির পথ।