Published : 25 May 2025, 08:30 PM
দেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক বলেছেন, তিনি প্রত্যাশা করেন-জনগণ ‘ডিসেম্বরের মধ্যে’ সংসদ নির্বাচন দেখতে পাবে।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পরদিন রোববার বিকালে এক আলোচনায় সভায় তারেক রহমান এই প্রত্যাশার কথা জানালেন।
প্রধান উপদেষ্টার ‘পদত্যাগ ভাবনার’ গুঞ্জনে সৃষ্ট অস্থিরতার মধ্যে তিনি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করে। যার ধারাবাহিকতায় রোববার আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক বিএনপি বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন ও ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের পথনকশা দাবি করেছেন। দলটি ইউনূসকে তার দায়িত্ব পালনে সমর্থনও দিয়েছে।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধানের সঙ্গে দেখা করে রাজনৈতিক দলগুলো আবারও জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। বিএনপির দাবি আগামী ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
“জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপিসহ আমরা যারা এক সঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করেছি, আমাদের সর্বাত্মক সমর্থন অব্যাহত রেখেছি।
“সুতরাং দেশে-বিদেশে সম্মানিত, দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের নেতৃত্বে জনগণ অবিলম্বে দেশের ইতিহাসের সবেচেয়ে অবাধ নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচন দেখতে পাবে… আজকে এনপিপির এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই প্রত্যাশা আমি রাখছি।”
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন বিএনপি সাথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই আয়োজনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন তারেক রহমান।
‘অন্তর্বর্তী সরকার জবাবদিহিমূলক নয়’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “হাজারো শহীদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নৈতিক ও রাজনৈতিক বৈধ্যতার হয়ত সংকট নেই। তবে অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক নয়।
“সরকার যেহেতু জবাবদিহিমূলক নয়, সেহেতু নৈতিক কারণেই সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জনগণের সামনে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। জনগণকে অন্ধকারে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনিশ্চয়তায় রেখে শেষ পর্যন্ত কেনো পরিকল্পনাই কার্যকর ও টেকসই হয় না, হবেও না।”
‘অনিশ্চিত অবস্থার সৃষ্টি’
তারেক বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের যোগ্যতা অযোগ্যতা বিষয় নয়, দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় একদিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অপরদিকে এক অনিশ্চিতকর রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে একরকমের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন।”
“একারণে জনগণ প্রতিদিন, আমরা দেখছি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে আসছেন। যদিও দুর্ভাগ্যবশত তাদের এই দাবি-দাওয়া শোনার কেউ নেই এই মুহূর্তে।”
‘হঠাৎ এনবিআর সংস্কার অর্থনীতির জন্য ভালো নয়’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, “বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের হয়ত সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই। তবে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের ভূমিকা মূখ্য।
“এমন বাস্তবতায় বাজেট পাসের ঠিক আগ মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকার হঠাৎ করেই এনবিআরের সংস্কার চাপিয়ে দিয়ে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে যে একটি অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে… এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য খুব ভালো বিষয় নয়। এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে সকলেই বিশ্বাস করে এবং বিশেষ করে গণতন্ত্রকামী জনগণ।”
‘গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখা’
তারেক বলেন, “সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকার, অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সরকারের চরিত্র যাই হোক, সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা না গেলে ক্ষমতাসীন সরকার হয়তো নিজেদের অজান্তেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে।
“এই কারণে হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে হলেও নাগরিকদের সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখতে হবে। প্রতিটি নাগরিকদের নিজেদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার থাকতে হবে। দেশের জনগণ সরকারের করুণার পাত্র নয়। সরকার অবশ্য জনগণের ন্যায্য দাবি শুনতে ও মানতে বাধ্য।”
‘স্বৈরাচারের মাথাচাড়ায় সর্তক থাকুন’
জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় গড়িমসির সুযোগ নিয়ে পরাজিত ‘স্বৈরাচার’ মাথাচাড়া দিয়ে উঠার অপেক্ষায় রয়েছে বলে সতর্ক করেন তারেক।
তিনি বলেন, “এটি আজকে এখানে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যেও ফুটে উঠেছে। তবে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট তাবেদার অপশক্তির পুনর্বাসনের পথরোধ করা সম্ভব।”
আদর্শিক ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দৃশ্যমান বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তবে নিজের বিশ্বাসের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “দেশ ও জনগণের স্বার্থে ফ্যাসিবাদ মোকাবিলায় একতরফা ইস্যুতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ বিগত ৫ অগাস্টের মতোই ঐক্যবদ্ধ।”
এনপিপি সভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন দলের মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা।
সেখানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার একাংশের খন্দকার লুৎফুর রহমান, গণদলের এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম।