Published : 27 May 2025, 09:14 PM
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পরেও সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট রূপরেখা না আসায় হতাশ বিএনপি।
মঙ্গলবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “রাজনৈতিক দল সমূহের সাথে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনার প্রসঙ্গে তার প্রেস সচিবের মাধ্যমে সরকারের যে বক্তব্য পাওয়া গিয়েছে তাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় আমরা হতাশ হয়েছি।
“বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল কোনেসা সময়েই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি এবং এখনও চায় না।”
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস তার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’য় গত ২৪ মে প্রথমে বিএনপি, এরপরে জামায়াতে ইসলামী এবং ন্যাশনাল রিপাবলিক পার্টি(এনসিপি) সাথে এবং পরদিন এলডিপি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ, ইসলাম আন্দোলনসহ ২০ টি দলের সাথে বৈঠক করেন।
‘নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বরই উপযুক্ত’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি শুধু এই কয়েকদিন নয়, এটা আগের থেকেই বলছি। ডিসেম্বরকে আমরা মনে করছি নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময়। সেজন্য আমরা ডিসেম্বরের কথা বলেছি। এখনো আমরা সেই কথার মধ্যেই আছি।”
সোমবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে দলের প্রতিক্রিয়া জানাতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করা যাবে, এমনটা কেউ বলতে পারে না বলে মন্তব্য করেন
বিএনপিনেতা মোশাররফ।
তিনি বলেন, “নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য কিছু উসিলা বের করা হচ্ছে। যেমন- একটা উসিলা হলো বিচার শেষ করতে হবে। আমরাও তো বিচার চাই।
“এই আওয়ামী লীগ স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে তারা আমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য কী করে নাই। তারা বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে শুরু করে কেউ বাকি নাই, যারা মিথ্যা মামলার আসামি ছিলাম না জেল খাটি নাই বিভিন্ন সময়। এরপরে কেন প্রশ্ন আসে যে, আমরা তাদের বিচার চাই না?”
তিনি বলেন, “বিএনপি সবচাইতে বেশি তাদের বিচার চায়। তবে আমরা এটা বিশ্বাস করি যে, বিচার হতে হবে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার মধ্যে। আমি স্বাধীন বিচারও চাইব আবার ওমুক দিনের মধ্যে এই বিচার করতে হবে, এটা তো সাংঘর্ষিক। সেজন্য আমরা বলছি, এই সংস্কার, নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও বিচারের প্রক্রিয়া, এটা পৃথক, আলাদা। সেজন্য এখানে কোনো সাংঘর্ষিক কিছু নাই। তাই এই তিনটা কাজই একসাথে চলতে পারে এবং সেটা চলা উচিত।”
‘উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি বিভ্রান্তিকর’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি, গত ২৪ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে যে বক্তব্য জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে তা অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব পালনে আমরা প্রথম থেকে অদ্যাবধি সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করে আসছি।
“সরকার পরিচালনায় নিরপেক্ষতার ঘাটতি এবং দূর্বলতার কারণে জনমনে সংশয় ও সন্দেহের উদয় হওয়া স্বাভাবিক। বিভিন্ন মহলের অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি-দাওয়া এবং এখতিয়ার বর্হিভূত বক্তব্য সরকারের স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার যে অভিযোগ সরকারের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে, সেটা মূলত সরকারের নিজস্ব অর্জন।”
তিনি বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, যথাশিগগিরই একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমেই পরাজিত শক্তির ইন্ধন এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র বন্ধ করা সম্ভব। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ প্রদান করা জরুরি, এর কোনো বিকল্প নেই।”
বিএনপি সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ডকে আমরা সকল সময়ে নিরুসাহিত করি এবং প্রতিরোধ করার অঙ্গিকারাবদ্ধ। অথচ উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে ‘কোনো কোনো মহল তাদের উপরে অর্পিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তুলছে’ মর্মে একটি বিমূর্ত অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।”
ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের গ্রহণের ব্যস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।