Published : 28 Jun 2025, 12:13 AM
মব তৈরি করে কোনো ব্যক্তির গলায় জুতার মালা পরানোর যে উদাহরণ তৈরি হচ্ছে তা ‘ফেরত আসবে’ বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
পাশাপাশি ‘জনগণকে অন্ধকারে রেখে’ চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়ার সরকারি পরিকল্পনারও বিরোধিতা করেছেন তিনি।
সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তারের আগে কথিত মবের হেনস্তার প্রসঙ্গ ধরে শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সাকি বলেন, “মব আক্রমণ হচ্ছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি বললেন যে, মব না প্রেশার গ্রুপ। মানেটা কি? প্রেশার গ্রুপ জিনিসটা কি?
“আপনি যদি মনে করেন যে অমুক ব্যক্তি অন্যয় করেছে তার শাস্তি হওয়া দরকার, তো আপনার সভা-সমাবেশ করার জায়গা আছে। তার বাড়িতে হামলা করা আপনার এখন কর্তব্য না।”
সাকি বলেন, “তাহলে সরকার কি নিজে এটা উসকে দিচ্ছে? যে অমুককে আমার ধরতে হবে, ধরার আগে একটা নাটক করতে হবে। এ কি আশ্চর্য ব্যাপার!
“শেখ হাসিনা যেমন করত। কাউকে গ্রেপ্তার করার আগে নানান ছক তৈরি করত। বহুজনের ক্ষেত্রে এটা বলা যাবে। আগে তাকে একটু খলনায়ক ধরনের বানিয়ে নিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে দু-তিনদিন ধরে তাকে বেশ একটা ইয়ে চলেছে, তারপর যেয়ে তাকে গ্রেপ্তার অ্যারেস্ট করেছে। তাহলে তো একই পদ্ধতি প্রয়োগ করছেন।”
তিনি বলেন, “তিনটা নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য বহু আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো বলেছে। আমরা বলেছি, সকলেই বলেছে। জবাবদিহির আওতায় আনেন। আপনারা সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেন। তারপর তাদের যদি বিচারিক জায়গায় নিতে হয় তাহলে বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢোকেন।
“আপনি কোনো ব্যক্তির গলায় জুতার মালা পরাবেন, এটা একজন ব্যক্তির যে মানবিক অস্তিত্ব, তাকে আপনি অপমান করছেন। এটাকে বলে বিমানবিকীকরণ। একজন সর্বোচ্চ অপরাধীকেও তা করা হয় না কিন্তু। কারণ কোনো অপরাধীকে ফাঁসি দিলেও তারও কতগুলো মানবিক অধিকারকে স্বীকার করে নিয়ে কিন্তু সে কাজটা করা হয়।”
গণসংহতি আন্দোলনের নেতা সাকি বলেন, “আপনি এটা করতে পারেন না। এই যে উদাহরণ তৈরি হচ্ছে, উদাহরণ কিন্তু ফেরত আসবে। এই উদাহরণগুলো কোনো কারণেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”
বন্দর নিয়ে ‘অন্ধকারে’
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ব্যবস্থাপনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে।
এ বিষয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেয়ার বিরুদ্ধে বহুদিন ধরে আন্দোলন হয়েছে। সেসময় আমরা নিজেরাই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। আমরা একটা কথাই বলেছিলাম যে, বন্দরের মত একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যেটাকে অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড হিসেবে বর্তমান প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন। সেটা যেমন অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড আবার একই সাথে এটা নিরাপত্তা ও কৌশলগত দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।
“ফলে এই বন্দরের উপর সার্বভৌম কর্তৃক আমাদের জনগণের, সরকারের থাকা দরকার। তারপরে এর অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত দিক উন্নতির জন্য সরকার নানা পরিকল্পনা করতে পারে। সেখানে প্রয়োজন হলে প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য কাঠামোগত সহযোগিতা যদি বিদেশ থেকে নিতে হয়, সেটাও নেওয়া যেতে পারে।”
কিন্তু সেটা স্বচ্ছতা ও স্পষ্টতার সাথে হতে হবে দাবি করে তিনি বলেন, “জনগণকে জানিয়ে জনগণের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে হতে পারে। এই সরকার কি জনগণকে জানাতে পারত না যে, প্রকৃত অর্থে কি করা হচ্ছে। এবং সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা করতে পারত না?
“এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে আন্দোলন চলছে সেটা কি স্রেফ সরকার ক্ষমতায় আছে বলে আমরা ক্ষমতা বলে করে ফেলব? এই পদ্ধতির সাথে আমরা একেবারেই একমত না।”
তিনি বলেন, “সরকার কি প্রস্তাব করছে এটা এখন পর্যন্ত আসলে জনগণ অন্ধকারে। সরকার মনে হচ্ছে একটা বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে দিচ্ছে। কি জায়গা দিচ্ছেন, কোন শর্তের ভিত্তিতে দিচ্ছেন, কত বছরের জন্য দিচ্ছেন সমস্ত আলাপ আলোচনা জনগণের জানার অধিকার ছিল।
“জনগণ না জানলে এরমধ্যে যে আশঙ্কাগুলো আছে যে, এটা কি বিদেশিদের কর্তৃত্বে চলে যাবে? আমরা কি নানান দিক থেকে সার্বভৌমত্ব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে? এমনকি যে বন্দরের সমস্ত বিনিয়োগ আমাদের দেশের টাকায় হয়েছে এবং সেটা এখন কাজ করছে।”
এনসিটি বিষয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, “হ্যাঁ, সেখানে একটা অলরেডি মাফিয়াতন্ত্র কায়েম হয়েছে। নানা দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম হয়েছে। সেগুলো বদলানো যাবে কীভাবে সেটা একটা বিশেষ আলোচনা। কিন্তু সেটা বদলানোর একমাত্র প্রতিষেধক হচ্ছে একটা বিদেশি কোম্পানিকে এনে দিয়ে দেওয়া–এই প্রতিষেধক যে কোথাও কোথাও কাজ করে নাই, সেই বিষয়েও তো আলোচনা আছে।
“কাজেই আমাদের বক্তব্য হচ্ছে যে, যদি বিদেশি কোম্পানি আনতে হয়, প্রযুক্তিগত সহায়তা লাগে সেটা একটা বিবেচনা করা যাবে। কিন্তু বন্দরে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই একলাফে কেবল একটা বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া এবং কোনরকম জনগণকে যথেষ্ট পরিমাণে ব্যাখ্যা না দেওয়া। সেটা মানুষের মধ্যে সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন নিয়ে, বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে এবং দেশের এতদিনকার বিনিয়োগকৃত লাভজনক প্রতিষ্ঠানকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।”
বন্দর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “স্পষ্টতার সাথে যাওয়া দরকার। এবং জনগণের আলোচনার ভিত্তিতে যে রায়টা আসবে সেখানেই সিদ্ধান্তে যাওয়া দরকার।”