Published : 26 Feb 2025, 11:12 PM
রাজনৈতিক দলের গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রধান চারটি পদ বহাল রেখে জাতীয় নাগরিক কমিটির বাকি সব সেল ও শাখা বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
বুধবার বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংগঠনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার হটানোর সফল আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল শুক্রবার আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।
এর আগে ১১তম সাধারণ সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিল।
কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির বাকি সব নেতৃত্ব কাঠামো, নির্বাহী কমিটি, সেল ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়।
এর পর ৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র পুনর্গঠন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও ‘নতুন বাংলাদেশের’ রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সফল করার লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করে নতুন জাতীয় নাগরিক কমিটি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক ও গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে এই নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক। আর কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির ১১তম সাধারণ সভার অন্য সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, নতুন রাজনৈতিক দলে যোগদানকারী সব কেন্দ্রীয় সদস্যের সদস্যপদ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি দলের আত্মপ্রকাশের আগ পর্যন্ত বহাল থাকবে।
রাজনৈতিক দলে অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যপদ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। আর যারা দলে যোগ দিচ্ছেন না তাদের সদস্যপদ বহাল থাকবে।
নাগরিক কমিটির আহবায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক শুক্রবার থেকে পরবর্তী ১৫ দিন অনানুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
তাদের উদ্যোগে জাতীয় নাগরিক কমিটির ফোরাম পরবর্তী নেতৃত্ব কাঠামো নির্ধারণ করবেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার তাদের উদ্যোগে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশের পর জাতীয় নাগরিক কমিটি ‘সিভিল-পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে থেকে যাবে। আর কোনো দল গঠনের উদ্যোগ নেবে না।
এতে বলা হয়, “আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জনগণের স্বার্থে জাতীয় নাগরিক কমিটি সর্বদা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাবে।”
থাকছেন না রিফাত-জুনায়েদ
এদিকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যেই জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ও যুগ্ম আহ্বায়ক রাফে সালমান রিফাত ও আলী আহসান জুনায়েদ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় না থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
বুধবার নিজেদের ফেইসবুক আইডি থেকে দেওয়া পোস্ট তারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়াকে শুভকামনা জানান।
নতুন রাজনৈতিক দলে ‘সম্মানজনক’ অবস্থান নিয়ে এই দুই নেতার সঙ্গে অন্য একটি অংশের মতবিরোধের কথা সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
রিফাত তার পোস্টে লিখেছেন, “২৮ তারিখে ঘোষিত হতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলে আমিও থাকছি না। তবে, আমার রাজনৈতিক পথচলা থেমে থাকবে না। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার যে জোয়ার তৈরি হয়েছিল তাতে শর্ট টার্মে খুব ভালো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা রাখি না আপাতত।
“কিন্তু, একই সাথে এটাও মনে রাখি যে, রাজনীতি একটা লম্বা রেইস। ধৈর্য নিয়ে লম্বা সময়ের জন্যই আমাদেরকে এই রেইসে টিকে থাকতে হবে। আমরা নতুন সেই বাংলাদেশের প্রত্যাশী যেটা হবে সত্যিকার অর্থেই ডেমোক্রেটিক, ইনক্লুসিভ, বৈষম্যহীন এবং আধিপত্য মুক্ত।
“ঐক্যবদ্ধতা ও মধ্যমপন্থাই হবে আমাদের শক্তি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের জিহাদ চলবে। আঞ্চলিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও আমাদের লড়াই চলবে। বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য আমরা জান দিয়ে লড়ব। নতুন দলের জন্য দোয়া এবং শুভকামনা রইলো।”
আলী আহসান জুনায়েদ তার পোস্টে লিখেছেন, “আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি তরুণদের নেতৃত্বে যেই নতুন রাজনৈতিক দলটি আসছে, সেখানে আমি থাকছি না৷ সে কথা আমি আরো সপ্তাহখানেক আগেই জানিয়েছি দলের নেতাদের।
“বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে ও জাতির নজর নতুন দলের উপর নিবদ্ধ রাখতে নীরবতা বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু, চারপাশের গুঞ্জন থামছে না। তাই, স্পষ্ট করে রাখছি।”
“…নতুন দল, নাহিদ ইসলাম এবং নব নেতৃত্বের জন্য শুভকামনা রইলো,” লিখেছেন জুনায়েদ।