Published : 22 May 2025, 12:45 AM
ঢাকার লালবাগের আমলীগোলার বাসিন্দা মাহবুব ইসরাইলের নাতির জন্মনিবন্ধন সনদে একটি ভুল রয়েছে। সেটা ঠিক করতে নির্ধারিত ফরমে সংশোধন করেছেন। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসে জমা দিতে পারছেন না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি তিন দিন গেছি। তারা ফিরাইয়া দিছে। বলে নগর ভবনে কি নাকি গণ্ডগোল হইতেছে। কিন্তু নাতির জন্ম নিবন্ধন সনদ তো ঠিক করে রাখতে হবে, সামনে ওকে স্কুলে ভর্তি করাব।”
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে তার সমর্থকদের আন্দোলনে এক সপ্তাহ ধরে কার্যত অচল হয়ে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবন।
গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন ইশরাক সমর্থকরা। নগর ভবনের বিভিন্ন অফিসে তালা দেওয়া হয়েছে, আঞ্চলিক কার্যালয়ের কার্যক্রমও বন্ধ।
ফলে সিটি করপোরেশনের দাপ্তরিত কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। কিছু কিছু সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী।
ডিএসসিসির অঞ্চল-৪ এর স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সব অঞ্চলেই একই অবস্থা। অফিসে কাজ না থাকায় তিনিও বাড়িতে চলে গেছেন।
“আমাদের অফিসে তালা দেওয়া। কেউ আসে না, কোনো আবেদনও জমা নেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে কয়দিন ধরে গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছি।”
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নগর ভবনে যেতে না পারায় হিসাব বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ আছে। এ অবস্থা চললে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা আটকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন একজন কর্মকর্তা।
“বেতন রিলেটেড কাজ করতে পারছি না। এতে কর্মীরা ঝামেলায় পড়বেন। তাদের বেতন পেতে দেরি হবে।”
ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগের একজন কর্মকর্তা বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করদাতাদের অনেকেই অফিসে এসে কর দেন। এখন তারা পারছেন না। এতে কর আদায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অফিস নগর ভবনে থাকায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও গত কয়েক দিন কার্যালয়ে আসতে পারেননি।
চলমান আন্দোলনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে তেমন কোনো প্রভাব এখনো পড়েনি। তবে সেই কাজও বন্ধের হুমকি ইতোমধ্যে এসেছে।
রাফাত হোসেন নামে ডিএসসিসির একজন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জরুরি সেবা হিসেবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সচল আছে। সিটি করপোরেশেনর পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কাজ করছেন, এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করছেন। বর্জ্য পরিবহনের যানবাহনও কাজ করছে।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চলমান কর্মসূচির কারণ আমাদের কিছু দাপ্তরিক কাজে বিঘ্ন হচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের প্রধান কার্যালয় এবং আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে।
“তবে আমাদের পরিচ্ছন্নতা কাজ, মশক নিধন এবং বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিল অফিসের কাজ চলমান আছে। আশা করছি শর্ট টাইমের মধ্যেই চলমান সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”
আন্দোলনকারীরা মঙ্গলবার ঘোষণা দেন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানো না হলে, আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
পাশাপাশি ডিএসসিসি এলাকার সব নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি আসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্মচারী ইউনিয়নের কাছ থেকে।
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হওয়ায় বুধবার সকাল ১০টার পর নগর ভবনের সামনে থেকে চলে আসেন ইশরাক সমর্থকরা। তারপর তারা মৎস্যভবন ও কাকরাইল মোড় ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন।
রাসেল মাহমুদ নামে ইশরাক হোসেনের একজন সমর্থক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আজ ১০টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার আমাদের দাবি পূরণে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ কারণে আজ আলাদা আলাদা জায়গায় আমরা অবস্থান নিয়েছি। দাবি আদায় করেই ছাড়ব।"
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাককে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তবে তার শপথ অনুষ্ঠান এখনও হয়নি।
সে কাণে ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে এ জন্য তার সমর্থকরা অবস্থান কর্মূসচি পালন করে আসছেন।