Published : 09 May 2025, 01:47 AM
বিচারক নয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
বৃহস্পতিবার বিকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এই কথা করেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা যেই ইনডিপেনডেন্স অব জুডিশিয়ারি সম্পর্কে কথা বলছি, সেই ইনডিপেনডেন্স অব জুডিশিয়ারি এনশিওর কীভাবে হবে, কখন হবে, কী কী আইন ও সংবিধান সংশোধন করতে হবে, সে ব্যাপারে আমাদের চিন্তা করার এখনই সময়।
“ আমরা কী বিচারকদের স্বাধীনতার জন্য ইনডিপেনডেন্স অব জুডিশিয়ারি চাই? আমরা ইনডিপেনডেন্স অব জুডিশিয়ারি চাই জুডিশিয়ারির ইনডিপেনডেন্সের জন্য। শুধুমাত্র এই কথাগুলো যদি আমরা বলে শেষ করে দিই যে- আমরা জুডিশিয়ারির ইনডিপেনডেন্স এনশিওর করব, অবশ্যই করব, করতে হবে এবং দিস ইজ দ্য চান্স। এবার যদি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারি, আর কখনো হবে না।”
বিচারাঙ্গনে ‘ফ্যাসিস্টদের দোসর’ যেসব বিচারক আছেন, তাদের অপসারণ দাবি করেন সালাহউদ্দিন।
তিনি বলেন, “ যারা রাতের কোর্ট বসিয়ে প্রায় ২ হাজার ৩৬ জনকে সাজা দেওয়া হল, তাদের বিরুদ্ধে এখনো কিছু করতে পারেননি, সেক্রেটারিয়েট প্রতিষ্ঠা হলে তাদের বিরুদ্ধে আপনারা কি কিছু করতে পারবেন?”
সালাহউদ্দিন বলেন, “আমি একটা তালিকা বলতে পারি… ১৬৮ জন অধঃস্তন আদালতের বিচারক এবং ’ল মিনিস্ট্রিতে চাকরি করেছেন; তারা বিরোধী দলকে দমন করার জন্য বিভিন্নভাবে শত শত মামলায় সাজা দিয়েছেন। তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৫ বছরের নিম্ন আদালতের সাজা ১০ বছর করেছেন।”
তিনি বলেন, “আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য প্রচার করা যাবে না, সেই রায় তারা এখানে দিয়েছে এবং বিভিন্ন স্লোগানকে এনডোর্স করেছে- তারা এখনও আদালতে বহাল আছেন। আমি নাম বলব না, আপনারা সবাই তাদেরকে চেনেন। কিন্তু আমি শুনেছি, তাদের কাছে রিট বেঞ্চ দেওয়া হয়েছে, তারা কারা?”
বিচারকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘‘অসদাচারণের জন্য, দুর্নীতির জন্য, অন্যান্য ইনডিভিজুয়াল ক্রিমিনাল লায়াবেলেটিজের জন্য তাদেরকে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আনা হবে সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাহলেই পরে উচ্চ আদালত বলেন, অধঃস্তন আদালত বলেন, সব জায়গায় সেই জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
“আপনারা যদি শুধুমাত্র মনে করেন, বিবেকের কাছে জবাবদিহি করবেন, সেই ভাষা পরিত্যাগ করতে হবে। সবখানে জবাবদিহি থাকবে, লেজিসলেটিভে অ্যাকাউন্টেবিলিটি, পলিটিশিয়ানদের অ্যাকাউন্টেবিলিটি থাকবে, অন্যান্য এক্সিকিউটিভের অ্যাকাউন্টেবিলিটি থাকবে, আপনাদেরও অ্যাকাউন্টেবল হতে হবে।
“কারণ জডিশিয়ারি ক্লিন করতে হবে এবং তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। শুধুমাত্র সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের মধ্য দিয়ে তাদেরকে অপসারণ করলে- সেটা এনাফ হবে না। তাতে বরং তারা খুশি হবে। তারা তাদের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তি তারা ভোগ করতে পারবে।”
‘এরা জাস্টিস ছিলেন না, ইনজাস্টিস ছিলেন’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “এখানে আইনাঙ্গনে একটা কথা প্রায় শুনি যে, শপথবদ্ধ রাজনীতিক নামে কিছু কিছু বিচারক এখানে ছিলেন এবং সেজন্য আইনজীবীদের কনটেম্পট করা হয়েছে। আমি নাম নিতে চাই না…।
“হ্যাঁ আমি তাদেরকে জাস্টিস বলতে চাই না, দে আর ইনজাস্টিস। ইনজাস্টিস খায়রুল হকের মত একদল ইনজাস্টিস এখানে ছিল, তারা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচয় দিতে খুশি হতেন। তারা এই জুডিশিয়ারিকে কলুষিত করেছে, তারা এ জুডিশিয়ারিকে নষ্ট করেছে।”
তিনি বলেন, “ এই যে একটা সুযোগ এসেছে আমি মাননীয় চিফ জাস্টিসকে অনুরোধ করব, আপনি তাদেরকে ক্লিন করুন। এটা আপনার দায়িত্ব, আমরা আপনাদের সমর্থন করব।
“আপনি কীভাবে করবেন জানি না, আপনার চারপাশে কিছু লোক বসে আছে -আমি এখানে যদি নামগুলো বলি...হোক কনটেম্পট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন বলেন, “ তারা তো চিফ জাস্টিসের আশেপাশে আছে- যারা লোয়ার জুডিশিয়ারির ট্রান্সফার-পোস্টিং ইত্যাদি করছে। এখানে আরও ৪/৫ জনের নাম আছে…। এখানে তো সব লইয়ার… হাই কোর্টে প্র্যাকটিস করেন, কেউ নারাজ হতে পারে, সেজন্য হয়তো উনারা এসব বলতে চায় না।”
দেশ ও জাতির স্বার্থে যেকোনো কিছু বলার স্বাধীনতা রাজনীতিবিদদের আছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ওই ইনজাস্টিস খায়রুল হক (সাবেক প্রধান বিচারপতি) বলে গেছেন সেইফটি অব দ্য কান্ট্রি অ্যান্ড সেইফটি অব দি পিপল ইজ দা সুপ্রিম ল‘.. সেই হিসেবে বলে গেলাম। ক্ষমা করবেন।”
এরপর রসিকতা করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘জুডিশিয়ারির পক্ষে কিছু বলতে গিয়ে যদি কারো কারো বিপক্ষে যদি কিছু বলি, আমার বিরুদ্ধে যদি কনটেম্পট অব কোর্ট হয়, আপনারা সিনিয়র লইয়াররা দয়া করে একটু দেখবেন।”
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, প্রয়াত এজে মোহাম্মদ আলীর সহধর্মিনী ফারজানা আলী।