Published : 12 May 2025, 05:10 PM
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে গিয়ে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি), বিচারপতি নিয়োগসহ নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে বিপাকে পড়েছেন গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।
সোমবার দুপুরে জাতীয় সংসদের এলডি হলে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের নেতারা। পরে তারা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই সংলাপ করছে ঐকমত্য কমিশন।
আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে এক সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদকে প্রশ্ন করেন, এনসিসি নিয়ে আপনাদের পরামর্শ কী ছিল?
অবাক হয়ে কালাম বলেন, “এনসিসি?”
তখন ওই সাংবাদিক আবার বলেন, “জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল নিয়ে কী পরামর্শ দিয়েছেন- যার কথা ঐক্যমত্য কমিশন বলেছে, এই ব্যাপারে আপনারা কী মত দিয়েছেন?”
তখন কালাম বলেন, “এখানে তো ৭০টা (সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ) ইয়ে ছিল।”
সাংবাদিক আবার বলেন, “এনসিসি তো ভিন্ন জিনিস, ৭০ না।”
তখন কালাম বলেন, “এনসিসির বিষয়ে আলোচনা এখানে হয়নি। আমরা শুধু আলোচনা করেছি ৬টা কমিশন নিয়ে। এর মধ্যে পাঁচটা সংস্কার কমিশনের স্প্রেডশিট পেয়েছি, এর উপরে আলোচনা হয়েছে।”
সাংবাদিক আবার বলেন, “স্প্রেডশিটে তো এনসিসি ছিল”
সোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক কালাম বলেন, “ওটা তো সংবিধান সংস্কার কমিশনে।”
সাংবাদিক বলেন, “না এখানেই ছিল।” তখন চুপ করে থাকেন কালাম।
সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলীয় প্রভাবমুক্ত থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এনসিসি গঠনের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।
আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আপনারা কী মতামত দিয়েছেন?”
তখন গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক কালাম বলেন, “উনারা (ঐকমত্য কমিশন) বিচারপতি নিয়োগে জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কথা বলেছে, আমরা বলেছি জাতীয় সংসদের মাধ্যমে করতে হবে।”
সাংবাদিক আবার বলেন, “বিচারপতি নিয়োগে জাতীয় সংসদের ভূমিকা থাকবে?”
কালাম বলেন, “জি।”
পরে সাংবাদিকরা আর প্রশ্ন রাখেননি।
পরে ব্রিফিংয়ে এসে নিজেদেরকে ঐকমত্য কমিশনের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফেলেন কালাম।
তিনি বলেন, “আপনারা জানেন যে- বাংলাদেশে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন হয়েছে, যার সভাপতি আমাদের সম্মানিত প্রধান উপদেষ্টা, সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ ভাই এবং আমরা সকলেই তার সদস্য। সেখান থেকেই আমরা রাষ্ট্রের যে সংস্কার- যার চূড়ান্ত পর্যায়ে যাব।
“তার আজকে দ্বিতীয় ধাপ, সেই দ্বিতীয় ধাপে তারা যে প্রস্তাব দিয়েছে ১৬৬টা, সেই ১৬৬টার মধ্যে আমরা ১৩৪টি প্রস্তাবে আমরা একমত হয়েছি। শুরুতেই আমরা বলেছি, আমরা হতাশ হয়েছি। সেই হতাশাটুকু সংবিধানের যে চার মূলনীতি- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ। সেখানে সমাজতন্ত্রের কোনো রূপরেখা ছিল না, সেটা নিয়ে আমাদের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।”
গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “সমাজতন্ত্রের রূপরেখা কী হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে আমরা একটা জায়গায় আসছি। সমাজতন্ত্রের রূপরেখা এই আলোচনার একটা পর্যায়ে আমাদের কারও যেন হতাশা না থাকে। রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির উপর দাঁড়িয়ে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”
পরে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সভাপতি হারুন চৌধুরী বলেন, “আমরা গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের চারটা দল পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছি, সংসদ নির্বাচন আগে হবে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরে হবে।
“অনেক দল সংসদ পরে, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাইছে; আমরা আগে সংসদ চাইছি। নির্বাচনে টাকার খেলা এবং পেশিশক্তির খেলা বন্ধ করতে বলেছি। আর দুর্নীতির কথা বলেছি, সেখানে দুর্নীতি যারা করবে- রাজনৈতিক ব্যক্তি হোক আর সরকারের রাষ্ট্রপতি হোক; দুর্নীতির কারণে তাদের আইনের মাধ্যমে আনতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার ও ইফতেখারুজ্জামান।