Published : 24 May 2025, 05:10 PM
সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা হলে তার ফল যে আখেরে ভালো হবে না তা মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
তিনি বলেছেন, “সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করলে একটা স্বাধীন দেশ বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আমরা সেই সমূহ বিতর্ক থেকে আমাদের প্রিয় গর্বিত সেনাবাহিনীকে আমরা মুক্ত রাখতে চাই।
‘‘আল্লাহ তালা এই কাজে সকলকে সহযোগিতা করুন। যার যার জায়গা থেকে এই বিষয়টা উপলব্ধি করার তওফিক আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দান করুন।”
শনিবার মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে দলের মজলিশে শূরার উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শফিকুর রহমান বলেন, “সেনাবাহিনী আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনী; ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে তাদের অনেক মর্যাদাপূর্ণ অবদান রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের এ সেনাবাহিনী গড়ে উঠেছে।
“কোনোভাবে কোনো কার্যক্রমের মাধ্যমে, কারো কোনো পদক্ষেপের মাধ্যমে আমাদের এই গর্বের প্রতিষ্ঠান বিতর্কিত হোক- এটা আমরা চাই না। আমরা চাই যে, এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে তারা দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত থাকবেন…এতে দেশের গৌরব, সেনাবাহিনীর গৌরব।”
জামায়াত আমির বলেন, “আমরা সেনাবাহিনীকে সেই গৌরবের জায়গায় রাখতে চাই। এই জায়গা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না- সেই দিকে আমরা আশা রাখতে চাই।
“সেনাবাহিনী সম্পর্কে যেকোনো ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি। এই বিষয়টা একটা দেশের সার্বিক নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট।”
সংলাপ আহ্বান
রাজনৈতিক সংকট কাটাতে সংলাপ আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শফিকুর রহমান।
তিনি বলেছেন, “সংঘাত এবং কাঁদা ছোড়াছুড়ির মধ্য দিয়ে জাতিকে আর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া কোনো অবস্থায় সমীচীন হবে না। এই সংস্কৃতির অবসান হওয়া উচিত।
‘‘এর জন্যে প্রয়োজন অর্থবহ ডায়ালগ। এই দায়িত্বটা মূলত বর্তমান সরকারকেই নিতে হবে এবং তাদেরকেই ডায়ালগের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সমস্যা যত বড়ই হোক, আমরা এটা বিশ্বাস করি- আলোচনার মধ্য দিয়ে সন্তোষজনক সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব।”
শফিকুর রহমান বলেন. ‘‘ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার নিজস্ব অবস্থান থেকে ইতিমধ্যে কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রথমত, নির্বাহী পরিষদের বৈঠক থেকে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানিয়েছি সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করার জন্যে। জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা আশা করি সেই বৈঠকে ভালো কিছু বের হয়ে আসবে।”
দুই রোডম্যাপ দাবি
শফিকুর রহমান বলেন, “বিপুল পরিমাণে জানমালের ত্যাগ, কোরবানির মাধ্যমে এই অর্জন… সুতরাং নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য। এরজন্যে শুরু থেকে জামায়াতে ইসলামী একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দুইটা রোডম্যাপ সরকারের কাছে আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, দাবি করেছিলাম।
“নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার লাগবে। আমরা বলেছিলাম সংস্কারের জন্য একটা রোডম্যাপ দেয়া হোক যে- এই মাসের ভেতরে সংস্কার সম্পন্ন হবে।”
তিনি বলেন, “এরপরেই নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ তার পাশাপাশি দেওয়া হোক। তাহলে জনগণের স্বস্তি ও আস্থা তৈরি হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দুইটি রোডম্যাপের কোনোটাই জনগণের সামনে আসে নাই।
“এখান থেকে কিছু সন্দেহ-সংশয় জন্ম নিয়েছে। আমরা এখনো সরকারকে অনুরোধ করব, দুইটি রোড ম্যাপ যথাসম্ভব শিগগিরই এটা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক। তাহলে জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।”
‘আমরা তাকে বাধ্য করতে চাই না’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘‘ প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন এই বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে চান।আমরা বারবার বলেছি, তার এই কথার ওপরে আমরা আস্থা রাখতে চাই এবং আস্থা রেখে আমাদের বিবেচনায় সুইটেবল টাইম কী হতে পারে আমরা ফ্লেক্সিবলি বলেছি।
“আমরা তাকে(অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) বাধ্য করতে চাই না। আমরা কেন বাধ্য করতে যাব? কারণ তিনি তো সকল দলের দ্বারা সমর্থিত “
‘ফ্যাসিস্টদের বিচার দৃশ্যমান হতে হবে’
শফিকুর রহমান বলেন, “আমাদের দাবি ছিল, এই দেশে ১৫ বছর যারা গুম-খুন করেছে, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে- তাদের বিচারের প্রক্রিয়াটা দৃশ্যমান হতে হবে। আমরা জানি, বিচারের জন্য সময় লাগবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে পুরো বিচার হয়ে যাবে- এটা কেউ দাবি করে না। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য দৃশ্যমান কিছু কাজ তো সামনে আসতে হবে।
‘‘সেরকম কিছুই এখনো জনগণ দেখতে পারছে না। এই জায়গায়ও জনগণের আশঙ্কা যদি অপরাধীদের বিচার সুষ্ঠুভাবে না হয়, তাহলে অপরাধের চক্র বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশ ভবিষ্যতে গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যেতে পারে। আমরা এটা হতে দিতে পারি না।”
মানবিক করিডোর প্রসঙ্গ
শফিকুর রহমান বলেন, “সম্প্রতি কয়েকদিন ধরে অনেক কিছু হয়ে গেল। আমরা আশা করি যে, সামনে বাড়বে না। দুইটি স্পর্শকাতর বিষয় আছে- একটি হচ্ছে মানবিক করিডোরের উদ্যোগ। আমরা সর্বপ্রথম এটি আমাদের নলেজে আসার সাথে সাথে আমরা বলেছি এটির সাথে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় জড়িত। এই বিষয়টি ভেবে চিন্তে আগাতে হবে-হুট করে এটাতে কিছু করা যাবে না।
‘‘এখন দেশে সংসদ নাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উপদেষ্টা পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। উপদেষ্টা পরিষদ মেনে নিলাম যে, তারা মন্ত্রিপরিষদের বিকল্প। কিন্তু সংসদ তো নাই। সেই পার্লামেন্টটা হতে পারতো জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী দেশপ্রেমিক সংগঠনগুলো। সরকার তাদের সাথে এই ব্যাপারে ডায়ালগে বসা উচিত এবং সকল পক্ষের সাথে না বসে কোনো উদ্যোগ এদেশের জন্য কল্যাণকর হবে না।”
তিনি বলেন, “বন্দর ব্যবস্থাপনার একটা বিষয় সামনে এসেছে। এটা একটা বিশাল বিষয়। আমাদের দেশের লাইফ লাইন হলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারা দেশ। এটি আমাদের প্রধান সমুদ্র বন্দর। এই বন্দরের উপরে নির্ভর করছে বাংলাদেশের অনেক কিছু। গোটা বৈদেশিক বাণিজ্য ৭০ ভাগের ওপরে এই বন্দরের ওপর নির্ভরশীল।
“এই রকম একটা বন্দর ব্যবস্থাপনার ওপর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হঠাৎ করে এটা সমীচীন হবে বলে আমরা মনে করি না। এ বিষয়ে ভেবে চিন্তে আরও অংশীজনের সাথে আলাপ করে কি করা যায় সেই বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসা উচিত।”