Published : 09 Oct 2023, 09:13 PM
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে ইউরেনিয়াম ঢেলে বিরোধী দলটির কয়েকজন নেতার ‘মাথা ঠান্ডা করার’ কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেন, "ইউরেনিয়ামের দুইটা চালান এসে গেছে। পুতিন (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট) প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছেন। বাংলাদেশে সাংঘাতিক আলো ঝলমলে পরিবেশ হবে। এতে ফখরুলের অন্তর্জ্বালা, মঈনুদ্দিন খানের (মঈন খান) অন্তর্জ্বালা।"
সোমবার রাজধানীর গাবতলীতে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত মিছিল পূর্ব শান্তি সমাবেশে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
চার দিন আগে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়া থেকে আনা জ্বালানি ইউরেনিয়ামের চালান ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপরে বিএনপির পক্ষে থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রেকে ‘সরকারের অপরিণামদর্শিতার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ’ বলা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, "জ্বালানি নিরাপত্তার নামে মেগা দুর্নীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতি এবং জীববৈচিত্র্যকে চূড়ান্ত হুমকির সম্মুখীন করার জন্য, অপরিণামদর্শী শেখ হাসিনার সরকারকে একদিন ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।"
এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইউরেনিয়াম এমন একটি রাসায়নিক, যেটি বিস্ফোরিত হলে মাইলের পর মাইলে পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাবে।
বিএনপি নেতাদের এসব বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা বলছি রূপপুর যারা বন্ধ করতে চায় সে ফখরুল, মঈন খানের মাথায় রাশিয়ার ইউরেনিয়াম ঢেলে দেব।
“দুই চালান এসেছে। সেটা আমরা কিছু ফখরুলের মাথায়, কিছু গয়েশ্বরের মাথায়, কিছু আব্বাসের মাথায়, কিছু মঈন ইউ আহমেদের (মঈন খান) মাথায়, কিছু রিজভী পাগলার মাথায়. . যে লাফাবে মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে ঠান্ডা করে দেব। ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করব না, ইউরেনিয়াম মাথায় ঢেলে ঠান্ডা করে দেব।"
‘খেলা’ জানুয়ারিতে
জানুয়ারিতে ভোট হবে জানিয়ে ‘কোয়ার্টার ফাইনাল’ নভেম্বরে আর ‘সেমিফাইনাল’ ডিসেম্বরে খেলার কথাও বলেন আওয়ামী লীগ নেতা।
“ভোট হবে, খেলা হবে। বিএনপির সঙ্গে খেলা ছাড়া উপায় নেই। বিএনপির বিরুদ্ধে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, ভোট চোরের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারে বিরুদ্ধে খেলা হবে।
“সারা বাংলায়, সারা ঢাকায় খেলা হবে। জোরে জোরে খেলা হবে। ফাউল করলে লালকার্ড, ফাউল করলে হলুদ কার্ড।"
‘অচল করতে এলে নিজেরাই অচল হয়ে যাবে’
অক্টোবর মাসে সরকার পতনে বিএনপির আন্দোলনের যে পরিকল্পনার কথা গণমাধ্যমে উঠে আসছে, তা নিয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ফখরুল বলেন, ঢাকা অচল করে দেবে অক্টোবর মাসে। ঢাকা অচল করতে আসলে ঢাকাবাসী বিএনপিকে অচল করে দেবে। অচল করতে আসলে নিজেরা অচল হয়ে যাবে।"
বিএনপি ‘কবে আসবে’ সেই তারিখ জানতে চেয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “ডেট দেন, লাফালাফি, নাচানাচি, বাড়াবাড়ি বন্ধ করেন। ভালো হবে না। বেশি লাফালাফি করলে অবস্থা খারাপ হবে। আমরা প্রস্তুত।"
‘মশার ভালো ওষুধ আনেন’, মেয়র আতিকুলকে পরামর্শ
সবামেশে অংশ নেওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামকে উদ্দেশ করে ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, "ডেঙ্গু থামছে? মেয়র সাহেব নকল ওষুধ আনিয়েন না, ভালো ওষুধ আনেন। মানুষ অস্থির হয়ে গেছে।
“আপনি দৌড়াদৌড়ি করেন ভালো। ছোটাছুটি করেন ঠিক আছে। কিন্তু ঠিকমত মশাকে আঘাত করেন। মানুষ বড় কষ্টে আছে।”
জিনিসপত্রের দাম বেশি হলেও ‘একটা মানুষও না খেয়ে মরেছে’ কি না সেই প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “শেখ হাসিনা মানুষের জন্য আছেন। কাউকে না খেয়ে মরতে দেবেন না।”
“আমি খাব না, তবু মানুষকে খাওয়াব। মানুষ বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধ বাঁচবে”, বলেন তিনি।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচির সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেনও।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য শেষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের নেতৃত্বে নেতা কর্মীরা মিছিলে অংশ নেন। মিছিলটি গাবতলী, টেকনিক্যাল মোড়, দারুস সালাম, কল্যাণপুর হয়ে শ্যামলীতে এসে শেষ হয়।
রাস্তা বন্ধ করে শান্তি সমাবেশে যানজট
গাবতলী থেকে টেকনিক্যাল মোড়ের সড়কের হানিফ বাস কাউন্টারে কিছুটা সামনের প্রধান সড়কের ওপর টেকনিক্যাল মোড়মুখী করে একটি খোলা ট্রাকে শান্তি সমাবেশের অস্থায়ী মঞ্চ করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ।
বিকেল তিনটার দিকে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এর আগ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতা কর্মীরা মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন।
নেতা কর্মীরা প্রধান সড়কে অবস্থান করেন। এতে গাবতলী হতে টেকনিক্যালমুখী রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কিছু বাস গাবতলী-সদরঘাট (বেড়িবাঁধ রোড) ডাইভারশন করে দেওয়া হয়। তবে ঢাকার প্রবেশমুখ গাবতলী বন্ধ থাকায় আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, সাভারের দিকে যানজট সৃষ্টি হয়।