Published : 07 Dec 2023, 07:48 AM
ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের মতো তার ছেলে সোলায়মান সেলিমও কোটিপতি।
বাবার আসনে নৌকা নিয়ে লড়তে যাওয়া ছেলে তার মনোনয়নপত্রের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, তাতে দেখা যায় তার বছরে আয় প্রায় দেড় কোটি টাকা, অস্থাবর সম্পদ আছে ১২ কোটি টাকার বেশি।
১৯৯৬ সাল থেকে এই আসনটিতে সোলায়মানের বাবা হাজী সেলিম নৌকা নিয়ে ভোট করেছেন তিনবার। একবার হেরেছেন, জয় পেয়েছেন দুইবার।
এবারও ভোটে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা ছিল সেলিমের। বাধা হয়ে দাঁড়ায় দুর্নীতির মামলার দণ্ড। মনোনয়ন দিলে টেকে কি না, এই প্রশ্নের মধ্যে সোলায়মান ছাড়াও ছোট ছেলে ইরফান সেলিমের নামেও কেনা হয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম। পরে বড় ছেলেকে প্রতীক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ক্ষমতাসীন দল।
সোলায়মান মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, সেখানে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, আয় ও সম্পদসহ দিতে হয়েছে বিভিন্ন তথ্য। তবে তিনি অতীতে সংসদ সদস্য ছিলেন না বলে নির্বাচনি অঙ্গীকার পূরণের ঘরটি প্রযোজ্য ছিল না তার জন্য।
সোলায়মান সেলিম শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে লিখেছেন, ‘ব্যাচেলর অব ল’। অর্থাৎ তিনি আইনে স্নাতক (সম্মান) পাস করেছেন।
তবে আইনে পড়লেও সোলায়মান এই পেশায় জড়াননি। তার আয়ের উৎস ব্যবসা। এই খাত থেকে বছরে তিনি পান এক কোটি ৪৬ লাখ এক হাজার ৯৩৮ টাকা।
ব্যবসায়ী হাজী সেলিমের ছেলে কোন কোন ব্যবসায় জড়িত, তা হলফনামায় উল্লেখ নেই। জানিয়েছেন, তার ‘অন্যান্য ব্যবসায়’ মূলধন ৩ কোটি ২৭ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা।
হলফনামায় অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৭০ হাজার ৯২২ টাকার। এর বাইরে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ৯ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।
সঞ্চয়পত্র কেনা আছে রয়েছে দুই লাখ ১৫ হাজার ৫৫৮ টাকার।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সোলায়মানের জমা করা অর্থের পরিমাণ ২০ লাখ ৫৫ হাজার ১৮২ টাকা। স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৩১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৭৭ টাকা।
বাবার সঙ্গেই বসবাস করা সোলায়মান হলফনামায় স্থাবর কোনো সম্পদ দেখাননি। তবে মোটর গাড়ি দেখিয়েছেন ৫৫ লাখ টাকার।
পুরান ঢাকার দেবীদাস ঘাট লেনের বাসিন্দা সোলায়মান সেলিমের কোনো কৃষি জমি নেই, ব্যাংক ঋণও নেই। স্ত্রীর নামে কোনো সম্পদ দেখাননি তিনি, নেই কোনো স্বর্ণালংকার। নিজের নামে ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ও আসবারপত্রও নেই।
বাবার ঠিকানায় থাকা সোলায়মানের আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক সামগ্রীর হিসাবও নেই হলফনামায়।
সোলায়মানের বিরুদ্ধে অতীতেও কোনো মামলা ছিল না, এখনও নেই।
নির্বাচনি আইন অনুযায়ী হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে মনোনয়নপত্র বাতিলের বিধান রয়েছে। তবে যাচাইবাছাইয়ে সোলায়মানের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা হয়েছে।
অবশ্য রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের যে সুযোগ আছে, তাতে বৈধ ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধেও আবেদন করতে পারবেন সংক্ষুব্ধ যে কোনো ব্যক্তি।
হলফনামার তথ্য ওয়েবসাইটে ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। পছন্দের প্রার্থী বাছাইয়ে এসব তথ্য প্রচারের জন্যও বলা হয়েছে নির্বাচন বিধিতে।
সোলায়মানের বাবা হাজী সেলিম ঢাকা-৮ আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৯৬ সালে। বিএনপিতে যোগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করা এই ব্যবসায়ী সেই নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন ধানের শীষ নিয়ে। মনোনয়ন না পেয়ে চলে আসেন আওয়ামী লীগে।
২০০১ সালে সেলিম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপির নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর কাছে হেরে যান অল্প ভোটে।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সেলিমকে মনোনয়ন না দিয়ে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে প্রতীক দেয় আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের পরের নির্বাচনেও তিনিই পান মনোনয়ন।
তবে দলের মনোনয়ন না পেয়ে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়ে যান হাজী সেলিম। জয়ও পান। পরে ১৬ জন স্বতন্ত্র সদস্যকে নিয়ে জোট গঠন করেন।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন হাজী সেলিম।
এই আসনে জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন ও জাতীয় পার্টির তারেক আহমেদ আদেল, এনপিপির মো. মাসুদ পাশা, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্র্টির মোহাম্মদ আফসার আলী ও জাকের পার্টির বিপ্লব চন্দ্র বণিকের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
কমলা ছিটিয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দিলেন হাজী সেলিম ও দুই ছেলে