Published : 28 Dec 2023, 04:00 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া শত কোটি টাকার মালিকদের নিয়ে বিএনপি প্রশ্ন তুললেও সামগ্রিকভাবে দেশের মানুষের আয় বাড়ার কথা বললেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তার ভাষায়, “গত ১৫ বছরে বাজেট বেড়েছে ১২ গুণ, মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৫ গুণ। বাংলাদেশ এখন ৩৩তম অর্থনীতি। মানুষের আয় তো বাড়ে।”
বৃহস্পতিবার ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মঙ্গলবার জানায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের ২৭ শতাংশ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। আর ১৮ জন প্রার্থী শত কোটি টাকার বেশি সম্পদের হিসাব দিয়েছেন তাদের হলফনামায়।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, হলফনামা অনুযায়ী বছরে কোটি টাকা আয় করেন, এমন প্রার্থীর সংখ্যা ১৬৪ জন। তবে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামায় প্রদর্শিত সম্পদ কোন উপায়ে অর্জিত, তা যাচাই করা হয় না।
এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বুধবার দলীয় এক অনুষ্ঠানে বলেন, “এত কোটিপতি আসে কোত্থেকে বাংলাদেশে?”
তিনি বলেন, “সরকার কি জানে না, সরকার কি তাদের ধরতে পারে না? কিন্তু ধরে না। কারণ তারা হয় সরকারি দলের, আর সরকারি দলের পক্ষের লোক।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ অবশ্য টিআইবির দেওয়া ওই হিসাবে ‘গরমিল রয়েছে’ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, এই হিসাব দিয়ে জনগণকে ‘বিভ্রান্ত করার কোনো সুযোগ নাই’।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, “অস্বাভাবিকভাবে কারও আয় দৃষ্টিকটূ মনে হলে সেটা তো এই মুহূর্তে সরকারের কিছু করণীয় নাই। এখন সরকার রুটিন ওয়ার্ক করছে। সময়মত দেখবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেবেন।”
‘প্রার্থীদের আয় ২১’শ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে’- সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমি এভাবে প্রার্থীর সম্পর্কে বলতে চাই না। কিছু বলার থাকলে পরবর্তীতে কোনো ফোরামে সুযোগ হলে অবশ্যই বলব।”
বিএনপি ‘পথহারা পথিকের মত’
বিএনপিকে ‘লুটপাটের দল’ আখ্যায়িত করে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “হাওয়া ভবন হয়েছে লুটপাটের জন্য। যারা নিজেরা লুটপাট করে, অন্যদের কীভাবে বলে? তারা আন্দোলন পথ হারিয়ে পথহারা পথিকের মত। কখন যে কী বলে, কী করে, তাদের কথায় জনগণ কান দেয় না।”
জনসমর্থনের অভাবে বিএনপি আন্দোলনে ‘ব্যর্থ হয়েছে’ মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সর্বশেষ ২৮ অক্টোবরে নগ্ন নৃশংসতা প্রদর্শনের পর বিএনপি জনগণ থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মানুষ তাদের কোনো কর্মসূচি বিশ্বাস করে না৷
“হরতালে না, অবরোধে না, এইসব কর্মসূচি জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রত্যাখ্যান করেছে বলেই জনসমর্থণের অভাবে তারা সন্ত্রাসের দিকে ঝুঁকে পড়েছে এবং তারা আগুন সন্ত্রাস করছে। আজকে তারা বাস পোড়াচ্ছে ট্রেন পোড়াচ্ছে, মানুষ মারছে, আজকে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে।”
পৃথিবীর কোথাও জনসমর্থন ছাড়া আন্দোলন সফল হয়নি মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “তারা গুপ্তসন্ত্রাস, গুপ্তহত্যা… এই দিকে কেন তারা ঝুঁকে পড়বে? জনসমর্থন হচ্ছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার সরকার হটানোর জন্য, সবচেয়ে বড় অস্ত্র। সেই অস্ত্রে মরিচা ধরে গেছে। এটা কাজে লাগছে না। জনসমর্থনের যে হাতিয়ার, সেই হাতিয়ারে মরিচা ধরে গেছে, সেজন্য অবরোধও সফল হয় না, ধর্মঘটও সফল হয় না। কাজেই চোরাগোপ্তা হামলা, বোমা হামলা, ককটেল, আগুন লাগানো এই সন্ত্রাসী পথ তারা বেছে নিয়েছে। তাদের রাজনীতি সন্ত্রাসযুক্ত হয়ে পড়েছে।”
নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও আমেরিকার ভিসানীতি নিয়ে এক প্রশ্নে কাদের বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুস্পষ্টভাবে কথা বলেছে, এখন এ প্রশ্নটা তাদেরকেই করা উচিৎ। এ প্রশ্নের জবাব আমার দেওয়ার কিছু নাই। সেটার জবাবে তারা কোন কৌশল অবলম্বন করেছে জানি না। আমরা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার, পিসফুল, ক্রেডিবল ইলেকশন চাই।”
আমেরিকার ভিসা নীতি ‘ভুয়া’ কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখনও সময় আছে। তারা যা বলেছে কথার সাথে কাজের মিল আছে কি না, সেটা দেখার এখনও সময় আছে। একটু ধৈর্য্য ধরুন। সেটা দেখার এখনও সময় আছে।”
অনেক স্থানে নৌকার প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উপর হামলা করছে, প্রচার কেন্দ্র ভেঙে দিচ্ছে, সেক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন বয়কট করলে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া কী হবে, জানতে চান এক সাংবাদিক।
জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থী, নৌকার প্রার্থী কেউ বয়কট করবে না। ইলেকশনে এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে, সেজন্য বয়কট করতে হবে না।”
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরায়জী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।