Published : 10 Oct 2023, 08:08 PM
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জ্বালানি হিসেবে যে ইউরেনিয়াম আনা হয়েছে, তার দর ‘বেশি পড়েছে’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীতে এক আলোচনায় তিনি এই অভিযোগ করেন। তার অভিযোগ, অন্যান্য দেশের তুলনায় যে ‘বাড়তি দর’ দেওয়া হয়েছে, সেটি ‘ভাগাভাগি হবে।’
বিএনপি নেতা বলেন, “রূপপুরে পারমাণবিক পাওয়ার প্লান্ট করেছে। সব দেশেই এই প্লান্টে যত খরচ হয়েছে তার থেকে চার গুণ বেশি পয়সা দিয়ে রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম কেনা হয়েছে।
“কারণ কী? ওই যে চার গুণ বেশি খরচ, তা ভাগাভাগি হয়ে যাবে। ওদের (রাশিয়া) কমিশন ওরা নিয়ে যাবে, ব্যাস।”
কেবল এই প্রকল্প নয়, পদ্মা সেতুতেও এভাবে ‘চার গুণ’ খরচ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, “পদ্মাসেতু করেছে ভালো কথা। সেখানে খরচ সর্বোচ্চ যেটা হওয়ার কথা তার চেয়ে বেশি চার গুণ বেশি পয়সা দিয়ে করা হল। এখন সেতুর ওপর রেললাইন করা হয়েছে, আজকে উদ্বোধন হয়েছে। কত টাকায় এটা করেছেন বলেন? এগুলো বললে ওদের মাথা খারাপ হয়েছে।”
যারা সরকারে আছে, তাদের জনগণের প্রতি কোনো ‘মায়া বা দরদ নেই’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তাদের কোনো স্বচ্ছতা নেই, তাদের কোথাও জবাবদিহি করতে হয় না। তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে, আমদানি করবে, যত খুশি চুরি করবে, তাদেরকে প্রশ্নও করা যায় না। তাদেরকে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে।”
‘লুটপাটে সর্বনাশ’
‘লুটপাটে’ বাংলাদেশের সর্বনাশ হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, “আমার কথা না, পত্রিকাগুলো খুলে দেখুন। অর্থনীতির সূচকগুলো নামতে শুরু করেছে নিচের দিকে।
রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে, গার্মেন্টস রপ্তানি কমে যাচ্ছে, বৈদেশিক টাকা আসছে না। এমন একটা অবস্থা করেছে যে, আর কয়েক মাস পরে আমদানি করার জন্য যে টাকা রিজার্ভে দরকার, সেই টাকাও থাকবে না। রিজার্ভ একদম নিচে নেমে যাবে।”
আওয়ামী ঘরোনার বড় বড় অর্থনীতিবিদরাই ‘ভয়ংকর অবস্থা’ বলতে শুরু করেছেন উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “এটা যদি ঠিক না করা যায়, অবিলম্বে যদি ব্যবস্থা নেওয়া না যায়, ভয়াবহ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার খেসারত দিতে হবে।”
ক্ষমতাসীনরা দেশকে ‘লুটেরাদের স্বর্গরাজ্যে’ পরিণত করেছে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, “ছোটকালে আমাদের মায়েরা আমাদের ঘুমাতে নিয়ে একটা গান গাইত, ‘ছেলে ঘুমাল, পাড়া জোরাল, বর্গী এল দেশে’ ... এরা (আওয়ামী লীগ) হল সেই বর্গী। তারা আসবে, লুট করবে, নিয়ে চলে যাবে।”
ওবায়দুল কাদেরের এই করুণ অবস্থা!
মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে ঠান্ডা করে দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটি নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “ওবায়দুল কাদের সাহেব, ব্যক্তিগতভাবে তাকে চিনি। আওয়ামী লীগের মধ্যে যে কয়েকজন পড়াশোনা করা মানুষ, তার মধ্যে তিনি একজন.. আমরা তাই জানতাম।
“তার যে এই করুণ অবস্থা! ইউরেনিয়াম কী জিনিস তাই জানেন না। এটার জন্য তো বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না।”
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিবাদ না করতে দলের এক নেতার কাছ থেকে পরামর্শ পাওয়ার কথাও জানান ফখরুল। জানান, সেই নেতা তাকে বলেছেন, “এটা তো আমাদের জন্য বিনোদনের ব্যাপার হয়ে গেছে।”
রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও রোহিঙ্গা সংকট: শহীদ আবরার ফাহাদের প্রেরণা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
এতে এবি পার্টির চেয়ারম্যান এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদের এই অংশের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ফারুক হাসানও বক্তব্য রাখেন।