Published : 09 Jan 2023, 07:01 PM
কারাগার থেকে বেরিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জেলের ভয় দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। গণতন্ত্র ফেরানোর এ আন্দোলন সফলও হবে বলে তার আশা।
সোমবার বিকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এক মাস পর জামিনে ছাড়া পান মির্জা ফখরুল। নাকশতার মামলায় তার সঙ্গে আটক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও এসময় মুক্তি পান।
কারাগার থেকে বেরিয়ে ফটকের সামনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির মহাসচিব তার এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
অন্য নেতাকর্মীদেরও মুক্তি দাবি করে তার অভিযোগ, ‘‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমানোর জন্য এদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করছে। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমি অবিলম্বে আমাদের নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করছি।
“আমি বিশ্বাস করি, অবিলম্বে জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সফল হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
বিরোধীদের প্রতি ‘সরকার জুলুম-অত্যাচার’ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, জেলের ভয় দেখিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।
এসময়ে তাকে স্বাগত জানাতে কারাফটকে আসা নেতাকর্মীরা ‘জ্বালাও জ্বালাও আগুন জ্বালাও’ শ্লোগান দিতে থাকে।
উচ্চ আদালতের ছয় মাসের জামিনের আদেশ সোমবার কারাগারে পৌঁছানোর পর বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকাল ৫টা ৫৫ মিনিটে ফখরুল ও আব্বাস ছাড়া পান।
বিএনপি মহাসচিব সাদা পাজারো গাড়িতে করে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে থেকে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।
এরপর আরেকটি গাড়িতে কারাগারের প্রধান ফটকে আসেন মির্জা আব্বাস। তিনিও গাড়ির ওপর থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, ‘‘৩২টা দিন এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। আমাদের জীবনে এই বয়সে অসুস্থ অবস্থায় আমরা দেশের কথা বলতে গেছি, আমরা দেশের মানুষের ভাগ্যের কথা বলতে গেছি, আমরা দেশের মানুষের ভোটাধিকারের কথা বলতে গেছি। আমরা দেশের মানুষের খাদ্যের কথা বলেছি, আমরা বাজারদরের কথা বলেছি। এটা কী আমাদের অন্যায় হয়ে গেছে?”
এ মুক্তি আনন্দের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘তবে জেলখানায় আমাদের হাজার হাজার ছেলে রয়ে গেছে বন্দি। এই ছেলেদের দুঃখ-দুর্দশা আপনাদের আমি বর্ণনা করতে পারব না এ মুহূর্তে।”
তিনি কারাবন্দি নেতাকর্মীদের প্রতি সদয় হওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
পরে ফখরুল ও আব্বাস নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। সেখানে অনেক নেতাকর্মী বিকাল থেকে কারামুক্ত নেতাদের অপেক্ষায় ছিলেন। তারা করতালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানান।
ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ও স্থান নির্ধারণ নিয়ে উৎকন্ঠা-উত্তেজনার মধ্যে গত ৭ ডিসেম্বর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জমায়েত হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
ওই দিন রাতে উত্তরার বাসা থেকে মির্জা ফখরুল এবং শাহজাহানপুরের বাসা থেকে মির্জা আব্বাসকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।
পরদিন ৮ ডিসেম্বর নাশকতার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর পর থেকে জামিনের প্রক্রিয়া শুরু করেন আইনজীবীরা। এক মাস ধরে নিম্ন আদালত পেরিয়ে হাই কোর্টে জামিনের আবেদন উঠলে আদালত তাদের ছয় মাসের জন্য জামিনের আদেশ দেয়।
এরপর গত রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাইকোর্টের দেওয়া ছয় মাসের জামিন আদেশ বহাল রাখে। এতে ফখরুল ও আব্বাসের কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পথ খুলে যায়।
এক মাস পর ছাড়া পেলেন ফখরুল-আব্বাস
ফখরুল ও আব্বাসের জামিন টিকবে? শুনানি রোববার