Published : 06 Jul 2024, 05:52 PM
গাজীপুর মহানগরে তিতাস গ্যাসের দীর্ঘদিনের পুরানো সরবরাহ লাইনে ছোট-বড় অসংখ্য ছিদ্র সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষাকালে ছিদ্র দিয়ে পানি ঢুকে সরবরাহ লাইন পূর্ণ ও খরায় লিকেজ দিয়ে গ্যাস বেরিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ফলে চুলা জ্বালানোর মত পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছে না নগরবাসী। নগরীর ভোগড়া শিল্পনগরীর মধ্যপাড়া এলাকায় এ সংকট বেশি দেখা দিয়েছে।
যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, সরবরাহে ঘাটতি থাকায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে।
এ দিকে নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও গ্যাস না পেয়ে লকড়ি কিংবা সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে রান্নার কাজ করতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
এতে রান্নার কাজ করতে গিয়ে এক দিকে যেমন অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে তেমনি প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী।
ভোগড়া পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. আলম বলেন, “৩০-৩৫ বছর আগে প্যাগাসাস জুতা কারখানার সামনে দিয়ে ভোগড়া বাজারের দিকে একটি (চার ইঞ্চি ব্যাসের) গ্যাস সরবরাহ লাইন পোঁতা হয়। কয়েক বছর ধরে ওই লাইনটির স্থানে স্থানে ছোট-বড় ছিদ্র সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বর্ষায় সরবরাহ লাইনের ছিদ্র পথে পানি ঢুকে পূর্ণ হয়ে যায় এবং খরায় লিকেজ দিয়ে গ্যাস বেরিয়ে মাঝে-মধ্যেই অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
“ফলে চুলা জ্বালানোর মত গ্যাস পাচ্ছে না এলাকাবাসী। এর মধ্যে কিছু অংশের পাইপ তিতাস কর্তৃপক্ষ বদলে দিলেও বাকি ৮০ শতাংশ এলাকায় পুরানো ছিদ্রযুক্ত সরবরাহ লাইন রয়ে গেছে এখনও।“
তিনি বলেন, এ সংকট নিরসনে ২০২২ সালে রাজধানীয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর করা আবেদনে গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান সুপারিশও করেছেন।
এর আগে-পরে একাধিকবার স্থানীয় তিতাস কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছে। তারপরও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসী।
ভোগড়া মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, “প্রতিমাসে বিল জমা দিয়ে গ্যাস পাচ্ছি না। কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোনো ফল পাচ্ছি না। এতে আমাদের রান্না করতে হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাস কিংবা লকড়ি দিয়ে।
“অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করা ছাড়া চরম ভোগান্তির মধ্যে আছি। এমতাবস্থায় বাড়ির ভাড়াটিয়ারা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।”
ওই এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান বলেন, “ভোগড়া মধ্যপাড়া জামে মসজিদের পাশে, ভোগড়া মধ্যপাড়া বাজার, ভোগড়া মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে, ওসমান আলীর মার্কেটের সামনে, বাইপাস সড়কের পশ্চিম পাশসহ কয়েক স্থানে তিতাস গ্যাসের সরবরাহ লাইনে ছোট বড় ছিদ্র রয়েছে।”
তিনি বলেন, “এসব ছিদ্রপথে অনর্গল গ্যাস বের হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে ভোগড়া বাজারের পাশে, স্কুলের সামনে ও ওসমান আলীর মার্কেটও এসব ছিদ্র দিয়ে নির্গত গ্যাসে সৃষ্ট আগুনে শুধু মার্কেট নয়, গাছপালাও পুড়েছে।
“তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে অবগত করলেও এখনও এর প্রতিকার পায়নি এলাকাবাসী। ফলে যেকোনো সময় আরও বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।”
ভোগড়ার বাসিন্দা শাহানা সুলতানা বলেন, “গেল ঈদে এলাকার কলকারখানা বন্ধ থাকার সময় লাইনে গ্যাসের কিছু চাপ ছিল। এ সময় লাইনে জমে থাকা (বৃষ্টির) পানিসহ কিছু পরিমাণের গ্যাস চুলার ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসত।
“কিংবা বিকল্প পথে গ্যাস লাইনের পানি বের করে রাতের কোনো কোনো সময় রান্নার কাজ করা যেত। কিন্তু ঈদের পর থেকে চুলায় কোনো গ্যাস আসছে না।”
তিতাসের আঞ্চলিক বিপণন কার্যালয় জয়দেবপুরের ব্যবস্থাপক মামুনুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “এ বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে। কিছু অংশের কাজও হয়েছে। বাকি অংশের কাজও করা হবে।”
তবে এই মুহূর্তে গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতিই মূল সমস্যা বলে দাবি করেন তিতাসের এ কর্মকর্তা।