Published : 05 Jun 2025, 06:11 PM
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে চলছে কোরবানির ঈদের জামাতের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবার মাঠ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, রং লাগানো, কাতারের দাগ টানা, পানি নিষ্কাশনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ চলছে। সংস্কার করা হয়েছে ওজুখানা এবং টয়লেট।
কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা থাকায় কোরবানির ঈদের জামাতে লোক সমাগম রোজার ঈদের তুলনায় কম হয়। কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে কিশোরগঞ্জে। এ কারণে বৃষ্টির পানি জমে যেন কাদা না হয়, সেজন্য মাঠে ফেলা হচ্ছে বালু। ঠিকঠাক করা হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও।
১৮২৮ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতের হিসাবে এটি হবে কোরবানির ঈদের ১৯৮তম জামাত। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে আসা মানুষদের সুবিধায় ঈদের দিন কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ এবং ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রোডে ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল ৮টায়। আরেকটি বিশেষ ট্রেন ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় ছেড়ে এসে সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছবে। পরে দুটি ট্রেনই দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে।
সকাল ৯টায় ঐতিহ্য ও রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে পর পর তিনবার বন্দুকের ফাঁকা গুলি করে শোলাকিয়া ময়দানে শুরু হবে ঈদের জামাত। জামাতে ইমামতি করবেন কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বড় বাজার মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। এ ছাড়া বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন জেলা শহরের হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদরাসার প্রভাষক মাওলানা জুবায়ের ইবনে আব্দুল হাই।
এরই মধ্যে কয়েক দফা শোলাকিয়া মাঠের প্রস্তুতি পরিদর্শন করেছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফৌজিয়া খান, র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক মো. আশরাফুল কবির ও ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামেজ উদ্দীন।
মাঠের সার্বিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান সাংবাদিকদের বলেছেন, “এরই মধ্যে মাঠে দাগ কাটা, দেয়ালে রং করাসহ মাঠের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আশা করছি, উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।”
পুলিশ সুপার কাজেম উদ্দীন বলেছেন, নিরাপত্তার দিক থেকে কোনো ঝুঁকি না থাকলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই শোলাকিয়ায় প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ২০১৬ সালের ঈদুল ফিতরে রক্তাক্ত জঙ্গি হামলার পর থেকে শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে নিরাপত্তার দিকটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। যেন লোকজনের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো অস্বস্তি না থাকে। মাঠে থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাছাড়া শোলাকিয়া মাঠ ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হবে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, দুই প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিশ্চিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
শহরসহ মাঠের প্রবেশ পথগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ তল্লাশি করা হবে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। থাকবে পাঁচটি আর্চওয়ে। তাছাড়া শোলাকিয়া মাঠ ও শহরের যত অলিগলি আছে, সবখানে বসানো হবে নিরাপত্তা চৌকি।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ইংরেজি ১৮২৮ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির উপর এ ঈদগাহ মাঠ প্রতিষ্ঠা করেন। সে বছর শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসুল্লি অংশগ্রহণ করেন বলে মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে নাম ধারণ করেছে আজকের ‘শোলাকিয়া’ মাঠ। মাঠে একসঙ্গে দুই লাখেরও বেশি মানুষ জামাতে নামাজ আদায় করেন। প্রায় সাত একর আয়তনের মাঠটিতে ২৬৫টি কাতার রয়েছে।
রেওয়াজ অনুযায়ী, শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট আগে শটগানে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি ও এক মিনিট আগে একটি গুলির আওয়াজ করা হয়। এটি নামাজ শুরু করার সঙ্কেত বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।