Published : 19 Jul 2023, 10:51 AM
ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন নদী পারাপারে ২০টি গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো; সেটিও নিজেদের উদ্যোগে তৈরি করে নিয়েছেন স্থানীয়রা।
সদর উপজেলার নারগুন ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া টাঙ্গন নদী পারাপারেই এই সেতু তৈরি করে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ৫০ বছর ধরে এভাবেই নিজ উদ্যোগে নদী পার হচ্ছেন তারা। প্রতিবার নির্বাচনের আগেই সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেতুটি আর বাস্তবে রূপ নেয় না। তাই নিজেরাই সেতু তৈরি করে নেন, নিজেরাই সংস্কার করেন আর প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে তা সেতু পার হন।
প্রতিদিন শিক্ষার্থীসহ হাজারো নারী-পুরুষ মাতৃগাঁও ঘাটের এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন।
সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় এক হাজার ফুট। এর পূর্ব দিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন এবং পশ্চিম দিকে মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন।
স্থানীয়রা জানান, এই সাঁকো থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে একটি সেতু আছে। কিন্তু সেখান দিয়ে যাতায়াতে এলাকাবাসীর এক ঘণ্টারও বেশি সময়ের অপচয় হয়ে যায়।
মাতৃগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আলিম উদ্দীন বলেন, “প্রায় ৫০ বছর ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নারগুন ইউনিয়নের পোকাতি, উত্তর বোচাপুকুর, দক্ষিণ বোচাপুকুর, পূর্ব নারগুনসহ ১০টি গ্রাম ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মাতৃগাঁও, রামপুর, মোহাম্মদপুর মধ্যপাড়া, বটতলি, পূর্ব মাতৃগাঁওসহ ১০টি গ্রামের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ এবং মোটরসাইকেল ও সাইকেল এভাবেই চলাচল করছে।”
প্রত্যেক বছর নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বাঁশের এই সাঁকো ভেসে যায়। বন্যার পানি নেমে গেলে আবারও তা তৈরি করেন স্থানীয়রা।
কথা হয় সাঁকো ব্যবহার করে মোটরসাইকেল নিয়ে পার হওয়া পোকাতি গ্রামের আব্দুল্লাহ হকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয়। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু দুই ইউনিয়নের মধ্যে সহজে যোগাযোগের আর কোনো পথ নেই। তাই এই সাঁকো ব্যবহার করতেই হয়। ”
কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী সাইফুল আলম জানান, একবার একজন শিক্ষার্থী সাঁকো পার হতে গিয়ে নদীতে পড়ে গিয়েছিল; পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে। তারপরেও এই পথেই রোজ পারাপার হতে হয় তাদের।
মোহাম্মদপুর মধ্যপাড়া গ্রামের প্রবীণ নজরুল ইসলাম বলেন, “এই বাঁশের সাঁকো বদলে এখানে একটি ব্রিজের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরাও ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি এখনো আশার আলো দেখেনি। তাই চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দুই ইউনিয়নের ২০ গ্রামের মানুষ লাখো মানুষ।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেরেকুল ইসলাম বলেন, “এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য সরকারি দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ব্রিজ নির্মাণ হবে।”
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদের জানান,স্থানীয়দের দুর্ভোগ নিরসনে এরই মধ্যে টাঙ্গন নদীর মাতৃগাঁও ঘাটে ৩০০ মিটার অর্থাৎ ৯৮৪ ফুট দৈর্ঘের একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
দ্রুতই এই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।