Published : 30 May 2025, 05:47 PM
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ফেনীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলায় চলতি মৌসুমে এক দিনে এটি সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড।
ঝড়-বৃষ্টির কারণে সীমান্তবর্তী পরশুরাম উপজেলার মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকায় মোবাইল যোগাযোগ অনেকটা বন্ধ রয়েছে। গাছপালা উপড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অপরদিকে সমুদ্র উপকূলীয় সোনাগাজীতে জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উচ্চমান পর্যবেক্ষক) মো. মজিবুর রহমান বলেন, শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা এ বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের কারণে শনিবার পর্যন্ত জেলাজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় প্রায় একশত মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে ভারি বৃষ্টিপাত এবং নিম্নচাপের ফলে জেলার উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীর চারটি ইউনিয়নের কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। তবে পানি ইতোমধ্যে নেমে গেছে।
সংশ্লিষ্ট বলছেন, যদি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে এবং ভারতের উজানে পানি বৃদ্ধি পায়, তাহলে মুহুরি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিয়া হোসেন বলেন, “ভারি বৃষ্টিপাত ও নিম্নচাপের ফলে অস্বাভাবিক জোয়ার ও তীব্র স্রোতের কারণে বৃহস্পতিবার বিকালে সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া, চরদরবেশ, বগাদানা ও মতিগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। তবে শুক্রবার দুপুরে সেসব এলাকার পানি নেমে গেছে।
“দুর্যোগ মোকাবিলায় উপজেলায় সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। মাঠে রেড ক্রিসেন্ট (সিপিপি) ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।”
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পুর) ওয়াসিম আকরাম বলেন, শুক্রবার বেলা ৩টায় মুহুরী নদীতে পানি ১০ দশমিক ২৫ মিটারে অবস্থান করছে। এই নদীতে পানি বিপদসীমা (ডেঞ্জার লেভেল) ১৩ মিটার। নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ২ দশমিক ৭৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, “মুষলধারে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এবং ভারতের উজানে বৃষ্টিপাত বাড়লে মুহুরি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। সম্ভাব্য বন্যার আশঙ্কায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পরশুরামে ২১টি ও ফুলগাজীতে ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ চিহ্নিত করে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ঝড় বৃষ্টির কারণে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব স্থানের গ্রামীণফোনের অধিকাংশ সাইট ডাউন। রবি ও বাংলালিংকের কিছু কিছু সাইট ডাউন রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে মোবাইল আপারেটরদের কন্টাক্ট পয়েন্ট শেয়ার করা হয়েছে। নেটওয়ার্ক পুনস্থাপনের জন্য কাজ চলমান আছে। পরশুরাম উপজেলা সদরে দ্রুত সময়ের মধ্যে নেটওয়ার্ক পুনস্থাপিত হবে।”
ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়ো হাওয়ায় কিছু গাছ ও ডালপালা ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সঙ্গে জেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে। তিনি আশা করছেন, পর্যায়ক্রমে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, “আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে শনিবার বিকাল পর্যন্ত জেলায় ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এতে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।”
২০২৪ সালে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনী জেলায় ব্যাপক ক্ষতিক্ষতি হয়েছিল। জেলার ৬ উপজেলায় ভয়াল ওই বন্যায় ২৯ জনের প্রাণহানি হয়। দীর্ঘ এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে পানিবন্দি ছিলেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যানবাহন, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রায় সব খাত। সেই বন্যায় জেলায় প্রায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ২০ লাখ ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছিল বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছিল।