Published : 18 May 2025, 11:37 AM
ফরিদপুরে পদ্মার দুর্গম চরে মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন নিত্যদিনের চ্যালেঞ্জ। সেখানে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মালামাল পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম ঘোড়ার গাড়ি।
দেশের মধ্যঞ্চলের জেলা ফরিদপুরের সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদী বয়ে চলেছে।
এই নদীগুলোতে জেগে ওঠা চরে এ তিন উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলার ডিক্রির চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু।
এসব চরে বছরের শুধু বর্ষা মৌসুমের কয়েক মাস পানির প্রবাহ থাকে। আর বাকি সময়টা পরিনত হয় ধু-ধু বালুচরে। প্রতিবছর বাড়ে বাড়ে নতুন নতুন চরের সংখ্যা। এ কারণে প্রতিবছর চরের পথও দীর্ঘ হচ্ছে।
চরভদ্রাসন উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এই চরগুলোর মানুষ একসময় তাদের চলাচল ও পণ্য শহরের আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহার করতো গরুর গাড়ি। কিন্তু এই বাহনটি নিয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া ছিল কষ্টসাধ্য।
“এর বিকল্প হিসাবে গত কয়েক বছর চরবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঘোড়ার গাড়ি ও মোটরসাইকেল।”
সরেজমিনে দেখা যায়, চরভদ্রাসন উপজেলার চরহরিরামপুর পদ্মা চরাঞ্চলের মানুষরা যোগাযোগের ব্যবস্থা ভাল না থাকায় নিরুপায় হয়ে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য ঘোড়ার গাড়ির আর মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভর করেছেন।
চরভদ্রাসন উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের চর সালেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “বিরুপ আবহাওয়ার কারণে চরাঞ্চলে কৃষি উৎপাদন তেমন হয় না। আর নদীতে কাঙ্খিত পানি না থাকায় আগের মতো মাছের দেখাও মেলে না।
“ফলে এখানকার বাসিন্দরা অনেকেই জীবিকার তাগিদে বদলেছেন পেশা। আর এ কারণেই ঘোড়ার গাড়ি ও মোটরসাইকেল চরের বাসিন্দাদের জন্য ভরসার বাহন হয়ে উঠেছে।”
ঘোড়ার গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালক রাকিব শেখ বলছিলেন, “চরে পাকা রাস্তা না থাকায় ঘোড়ার গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালানো চ্যালেঞ্জিং। তারপরেও এখানে এই বাহন ছাড়া যোগাযোগের আর কোনো উপিায় নেই।”
চরহরিরামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোল্লা ইব্রাহিম মাতুব্বরসহ অনেকেই বলেন, বালুর মধ্যে দিয়ে যাত্রী বা পণ্য নিয়ে চলাচল কষ্টকর। এছাড়াও চরের বিভিন্ন জায়গায় কাদা মাটি থাকায় যাববাহনের চাকা দেবে যায়।
চরের গাড়ি চালকরা বলেন, ঘোড়ার গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন এক থেকে তিন হাজার টাকা বা তারও বেশি রোজগার করা সম্ভব হয়। একটি মোটরসাইলের একজন যাত্রী, কখনও কখনও দুজন যাত্রী বহন করা যায়। অন্যদিকে ঘোড়ার গাড়িতে করে ১৫ থেকে ২০ মণ পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করা যায় ।
৫০ নম্বর শালেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবা পারভিন বলেন, “চরের মূল চ্যালেঞ্জই হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা। এখানকার বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে ঘোড়ার গাড়ি আর মোটরসাইকেলে যাতায়াত করে।”
তবে বালুর মধ্যে এই বাহন নিয়ে চলাচল অনেক সময় ঝুকিপূর্ণ হয়ে ওঠে বলে জানান জাকিবর হোসেন নামে চরের এক বাসিন্দা।
ফরিদপুরের সাংস্কৃতিক কর্মী ও পরিবেশবাদী খন্দকার মাহফুজুল আলম মিলন বলেন, “বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শুধু এদেশে নয়, গোটা বিশ্বেই শুরু হয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে উন্নত দেশগুলোর আগ্রহটা খুব জরুরি।”
তিনি বলেন, “পদ্মায় জেগে ওঠা চরে মানুষের জীবন-মান পরিবর্তন করতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সবল সেক্টরের মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। আর যারা নদীগুলো থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে নদীর প্রবাহ বিঘ্ন সৃষ্টি করছে তাদের কঠোর আইনের আওতায় আনতে হবে।”