Published : 13 Feb 2025, 04:39 PM
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় পদ্মার পাড়ে জেগে ওঠা নতুন চর থেকে এক হিমালয়ান শকুন উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা।
বুধবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার বয়ড়া ইউনিয়নের দড়িকান্দি গ্রাম সংলগ্ন এলাকা থেকে অসুস্থ অবস্থায় শকুনটি উদ্ধার করা হয় বলে জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা জানান।
জেলা প্রশাসক মনোয়ার হোসেন বলেন, “স্থানীয় একজন বুধবার রাতে শকুন উদ্ধারের বিষয়ে জানালে সঙ্গে সঙ্গে প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ করি। তারা শকুনটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং খাবার দিয়েছে।”
হরিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো.জহুরুল ইসলাম বলেন, “ অসুস্থ শকুনটিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে নিয়ে আসলে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর তাকে খাবার হিসেবে চিকেন দেওয়া হয়েছে।”
শকুন উদ্ধারকারী দড়িকান্দি গ্রামের রাজিব বলেন, “আমি , সাইফুল ও বাবু আমরা তিনজন শকুনটি দড়িকান্দি পদ্মার চরে অসুস্থ অবস্থায় দেখে সাংবাদিক ভাইয়ের পরামর্শে উদ্ধার করে হরিরামপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবিদ ভাইয়ের কাছে দেই।”
উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবিদ হাসান বলেন, “স্থানীয়রা শকুনটি দেখে আমাকে ফোন দিলে আমি সতর্কতার সঙ্গে উদ্ধারের পরামর্শ দেই। তারপর আমি নিজে গিয়ে উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নাম্বারে ফোন করে জানালে তারা অবহেলা করে অনীহা প্রকাশ করেন। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে ভিডিও আর ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করি। পরে জেলা প্রশাসককে জানালে তার নির্দেশে শকুনটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উপজেলা প্রাণীসম্পদে দায়িত্বে থাকা লোকজনের কাছে রেখে আসি।”
তিনি বলেন, “এ ছাড়া পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘হরিরামপুর শ্যামল নিসর্গের’ সাধারণ সম্পাদক প্রণব পাল অ্যানিমেল রেসকিউ টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন।”
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এর ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের পরিচালক সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া বলেন, “শকুনটি হিমালয়ান শকুন। এটাকে ছেড়ে রেখে, উষ্ণ স্থানে বড় গামলায় পানি খেতে দিয়ে রাখলে ৪-৫ দিনে উড়ে যাবে। কুয়াশায় দীর্ঘ সময় উড়তে থাকায় ক্লান্ত হয়ে নিচে এসেছে। বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে।
“আমাদের একজন উদ্ধারকর্মী ২০২০ সালে নয়টা শকুন উদ্ধার করছিলেন। এই টাইমে ওরা প্রচুর ফ্লাই করে এসে একদম টায়ার্ড হয়ে যায়, উড়তে পারেনি এজন্যই চরে নেমেছে । এনার্জির জন্য মাটিতে নেমে আসে, এই অঞ্চলে ওদের প্রেডেটর কম, তাই ৫-৭ দিন থেকে রেস্ট নিয়ে আবার ফ্লাই করে।”
এটি একটি হিমালয়ান গ্রিফন শকুন। এটির বৈজ্ঞানিক নাম জিপস হিমালয়েনসিস (Gyps himalayensis)। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ বা আইইউসিএনের লাল তালিকায় হিমালয়ান গ্রিফন শকুনকে রাখা হয়েছে ‘প্রায়-বিপদগ্রস্ত’ ক্যাটাগরিতে। এর মানে হল, এই প্রাণীর প্রজাতি নিকট ভবিষ্যতে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, “হরিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার আমরা রেসকিউ করব। প্রণব পাল বুধবার রাতে জানালে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।”