Published : 02 Jun 2025, 08:20 PM
পবিত্র ঈদুল আযহা সামনে রেখে চাঁদপুরের সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী সফরমালি পশুর হাট জমে উঠেছে।
সপ্তাহের প্রতি সোমবার বসা এই হাটে এখন কোরবানির পশু কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পর করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
ঈদ দরজায় কড়া নাড়ছে। ফলে সপ্তাহের এই হাট এখন পরিণত হয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতার এক বিশাল মিলনমেলায়। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে জনসমাগম।
সোমবার দিনভর সফরমালি হাটে গরু কেনা-বেচায় ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা গেছে সেখানে আগত ক্রেতা-বিক্রেতাদের। সকালেই কয়েক হাজার গরু ও ছাগল নিয়ে হাজির হন বেপারি, খামারি ও গৃহস্থরা।
হাটে প্রচুর গরু দেখা গেলেও বিক্রি তুলনামূলক কম বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
হাটে আগত বিক্রেতা নুরুল আমিন বলেন, “গত বারের তুলনায় এ বছর গরুর দাম লাখে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা কম। গরু লালন-পালনে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ন্যায্য দাম নিয়ে শঙ্কিত খামারিরা।”
আব্দুল কাদির নামে আরেক বিক্রেতা বলছিলেন, “এই হাটে গরু সরবরাহ বেশ ভালো। কোনো ধরনের সংকট নেই। ক্রেতাদেরও আনাগোনা আছে। তবে দাম খুব বেশি ভালো পাওয়া যাচ্ছে না।”
এই গরু বিক্রেতা আক্ষেপ করে বলেন, “গরুর খাবার, লালন-পালনে অনেক টাকা খরচ হয়। দাম যদি ভালো না পাওয়া যায়, তাহলে খামারিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গরু কিনতে আসা আব্দুস সালাম বলেন, “গরুর আমদানি ভালো। দামও সহনশীল। ঈদের বেশিদিন বাকি নেই। তাই গরু পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব।”
মো. কালাম ও আবু তাহের নামের দুইজন ক্রেতার সঙ্গেও হাটে কথা হয়। তারা বলছিলেন, গরুর হাটটি দীর্ঘদিনের পুরনো। এর বেশ নাম-ডাক রয়েছে। এখানে আসা ক্রেতারা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দে গরু-ছাগল কিনেন।
এদিকে হাটে গরুর ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে হাট ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সি সি ক্যামেরা বসিয়ে বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে নজরদারি রাখা হচ্ছে।
সফরমালি হাটের ব্যবস্থাপক মো. আজাদ খান বলেন, “হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে ব্যাপক ব্যবস্থা। সিসি ক্যামেরায় বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক টিম কাজ করছে।
“হাটে জাল টাকা রোধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো গরু বা ছাগল অসুস্থ হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”
আজাদ খান বলেন, “সফরমালি পশুর হাট ঐতিহ্যবাহী বাজার। ৩৮ বছর যাবত নিয়মিত প্রতি সোমবার এই পশুর হাটটিতে গরু ও ছাগল বেচা-কেনা হয়ে আসছে।”
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় তালিকাভুক্ত খামারি রয়েছে ৩ হাজার ৭৭০ জন। খামারগুলোতে গরু উৎপাদন হয়েছে ৪২ হাজার ৪৯৭টি। ছাগল ভেড়া ও অন্যান্য পশু উৎপাদন হয়েছে ১৯ হাজার ৬০১টি। সব মিলিয়ে মোট উৎপাদন হয়েছে ৬২ হাজার ৯৮টি।
কোরবানির জন্য গবাদি পশু প্রয়োজন ৭৬ হাজার ৩৫৪টি। হিসেব মতে গবাদি পশুর সংকট রয়েছে ১৪ হাজার ২৫৬টি। চলতি বছর জেলায় ষাঁড় উৎপাদন হয়েছে ২৪ হাজার ২৪৭, বলদ ৭ হাজার ৭৮১, গাভি ১০ হাজার ৪৬৯টি। সর্বমোট গরু উৎপাদন হয়েছে ৪২ হাজার ৪৯৭টি। মহিষ ২১৭, ছাগল ১৮ হাজার ৪৫৮, ভেড়া ৮৩০ ও অন্যান্য পশু ৯৬টি।
চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, “এ বছর আমরা কোরবানির পশু প্রস্তুত করার ব্যাপারে সার্বিক তত্ত্বাবধান করেছি। যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। আর পশুগুলো প্রাকৃতিক খাবারে বেড়ে উঠেছে।”
তিনি বলেন, “জেলায় দুই শতাধিক কোরবানির পশুর হাট বসবে। চাহিদার আলোকে পশুর সংকট হবে না। কারণ, কোরবানির হাটে অন্য জেলার পশু এলে চাহিদা মিটে যায়। সংকট অবশ্য কাগজে কলমে।”
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, কোরবানির পশুর হাটগুলোতে আর্থিক লেনদেন ও ক্রেতার নিরাপত্তায় পুলিশ বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া পুলিশের টহল সদস্যরাও কাজ করবে।