Published : 05 Jun 2025, 03:00 PM
সিলেটে বৃষ্টিপাত কমলেও উজানের পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকার কারণে নদ-নদীর পানি কমছে ধীর গতিতে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, “পাহাড়ি ঢল থাকায় বর্তমানে পানি আস্তে-আস্তে নামছে। তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর পানি দ্রুত গতিতে নেমে যাবে।
“আর কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে। দ্রুতই সিলেটের নদ-নদীর পানি নেমে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সিলেটের জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ওসমানীনগর ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় এখনও পানি রয়েছে। গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও বালাগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার বেশ কিছু রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় চলাচলে দুর্ভোগ হচ্ছে।
সিলেট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবদুল কুদ্দুস বুলবুল বলেন, “বুধবার বিকাল পর্যন্ত সিলেট জেলার জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ওসমানীনগর ও গোলাপগঞ্জে ১৮ হাজার ৬৬১ জন মানুষ বন্যাকবলিত ছিলেন। এ চার উপজেলার ২৮০ জন বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। বন্যার্তদের মধ্যে ৩৪ মেট্রিক টন চাল ও ১৩২ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
“বর্তমানে নদ-নদীর পানি কমতেছে। আশা করছি দুই একদিনের মধ্যে পরিস্থতি স্বাভাবিক হবে।’’
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কুশিয়ারা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৭১ সেন্টিমিটার, জকিগঞ্জ পয়েন্টে ১ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার, বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৬৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে সুরমা নদীসহ জেলার অন্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৭ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর আগের গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন মাহবুবুর রহমান বলেন, “আগের থেকে উপজেলার পানি কমেছে। উপজেলায় ৪৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে চারটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০টি পরিবারের মোট ১৭৪ জন আশ্রয় নিয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ত্রাণ কার্যক্রম চালু আছে।”
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, “বুধবার পানি কমেছে, পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আর বৃষ্টি না হলে শুক্রবার থেকে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় জরুরি ভিত্তিতে ২২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৬৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে; এর মধ্যে দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঁচটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।’’
জেলার ৪১ হাজার ৫৮৩ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত:
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সিলেটের ১৩টি উপজেলা ও নগর এলাকায় ১ হাজার ১৮৭ দশমিক ৫৫ হেক্টর জমিতে আউশ বীজতলা ছিল। এর মধ্যে বিশ্বনাথ উপজেলা ছাড়া সবকটি উপজেলা ও নগরের বীজতলায় কমবেশি পানি উঠেছে। মোট ২৪২ দশমিক ৫ হেক্টর বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৯৩ হেক্টর জমির বীজতলা। আংশিকসহ মোট ক্ষতিগ্রস্ত বীজতলার পরিমাণ ২২৮ হেক্টর। এতে প্রায় ১২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হচ্ছেন ৫ হাজার ৭০০ জন। জেলায় ৬ হাজার ২৬৯ হেক্টর জমিতে আউশ ধান রয়েছে।
জেলার ১৩টি উপজেলা ও নগরে পানিতে ডুবেছে ১ হাজার ১২১ হেক্টর জমির ধান গাছ। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৬৪ হেক্টর। আংশিকসহ মোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯৬৮ হেক্টর জমি। মোট ধানি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২২৩ লাখ টাকার; ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হচ্ছেন ৭ হাজার ৭৪৪ জন। এছাড়া সবজিসহ অন্য ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি চলমান থাকায় কারণে, আমরা এখনও চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ করেনি। এটা আমাদের প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির তালিকা। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনা প্রদান করবে।”
তিনি বলেন, “গত ৩১ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত দুর্যোগে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী জেলার ১৩টি উপজেলা ও নগরে দুর্যোগে আক্রান্ত জমির পরিমাণ ২ হাজার ৫২৪ হেক্টর। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৮২ হেক্টর।
“আংশিকসহ ক্ষতিগ্রস্ত মোট জমির পরিমাণ ২ হাজার ৩০৯ হেক্টর। মোট ৪১ হাজার ৫৮৩ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্থদের সংখ্যা আরও বাড়বে।’’