Published : 29 Nov 2024, 12:36 PM
যাত্রীসেবার মান বাড়াতে দুই বছর আগে রাজবাড়ীর জৌকুড়া-পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌরুটের তত্ত্বাবধানের দ্বায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে বিআইডব্লিউটিসিকে হস্তান্তর করা হয়।
কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সহজ যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ এই রুটে সেবার মান তো বাড়েইনি, বরং ফেরির সংখ্যা কমে যাওয়ায় বেড়েছে ভোগান্তি।
পদ্মা নদীর এই নৌপথ দিয়ে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ থেকে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, নাটোরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় যাতায়াত করে যানবাহন ও যাত্রীরা। দূরত্ব কম হওয়ায় এই পথে জেলাগুলোর মধ্যে পণ্য পরিবহণে খরচও অনেকটা কম হয়।
কিন্তু নানা কারণে এই সহজপথে যাতায়াত এখন যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তি হয়ে উঠেছে। ‘করবি’ নামে মাত্র একটি ফেরি দিয়ে পারাপার করায় ঘাটে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এর উপর রাতের বেলায় নেই পারাপারের কোনো ব্যবস্থা। এছাড়া ট্রলারে বাড়তি ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে রাজবাড়ীর জৌকুড়া ফেরি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টায় ফেরির যাতায়াত শুরু হবে। তাই মধ্য রাত থেকে অর্ধশত যানবাহন ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় বসে আছে।
ট্রাক চালক কুদ্দুস খান বলেন, “রাত ১টা থেকে বসে আছি। সকাল ৯টা না বাজলে ফেরি চলবে না। সারা রাত গাড়িতে বসেই কাটিয়ে দিলাম। এখানে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই, খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। দিনে খাওয়ার হোটেল পাওয়া গেলেও রাতে কিছুই নেই। আমাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।”
এই পথে চলাচলকারী রাজবাড়ির বাসিন্দা দেবব্রত সরকার বলেন, “নিয়মিত এই পথে পাবনা যাই। যখন সড়ক বিভাগের অধীনে ফেরি চলতো তখনও ভোগান্তি হতো এখনো ভোগান্তি হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসি ঘাট নেওয়ার পর বলেছিল ২৪ ঘণ্টা ফেরি চলবে। কিছুদিন চলেও ছিল।
“কিন্তু এখন একটিমাত্র ফেরি, সারা দিনে চলে চারটি ট্রিপ। তাও সন্ধ্যার পর ফেরি চলে না। কোনো যাত্রীর নদী পার হতে হলে তখন ভরসা ইঞ্জিন চালিত ট্রলার। অনেক সময় দুই হাজার টাকা ভাড়া দিতে চাইলেও তা পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, “আমাদের দাবি ফেরি যেন ২৪ ঘণ্টাই চলাচল করে। সেই সাথে ফেরি যেন আরও দু একটি বাড়ায়।”
সুমন নামে আরেক যাত্রী বলেন, “যোগাযোগ সহজ হওয়ায় এই নৌপথেই এখনও ভরসা মানুষের। কিন্তু এ পথে পারাপারের ভোগান্তির মূল কারণ ফেরি। মাত্র একটি ফেরি দিয়ে পারাপার করায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। তাই ফেরির সংখ্যা বাড়াতে হবে। ”
ট্রাক চালক কুদ্দুস খানের দাবি ২৪ ঘণ্টা ফেরি সার্ভিস চালুর। তিনি বলেন, তাহলে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। যত সময় আমি ঘাটে বসে আছি, রাতে ফেরি চললে এখন আমি নাটোর পৌঁছে যেতাম।
জানা যায়, জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুটে যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ঘাটের দ্বায়িত্ব বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনকে (বিআইডব্লিইটিসি) হস্তান্তর করে। তারপর থেকেই ঘাটে ফেরি পরিচালনা করছে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। আগে এই পথে দুটি ফেরি চললেও কথা ছিল তা আরও বাড়ানো হবে। করা হবে নৌপথ ও যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন ।
এরপর কেটেছে দুই বছর। তবে এই নৌরুটে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। বরং বর্তমানে নাব্য সঙ্কটে বেড়েছে ভোগান্তি। একই সঙ্গে কমেছে চলাচলকারী ফেরির সংখ্যা।
চন্দনী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক শিকদার বলেন, “জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুটি দক্ষিণাঞ্চলের সাথে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের সহজমাধ্যম। এই নৌরুটে এক সময় প্রচুর যানবাহন যাতায়াত করতো। দুই পাড়ে গাড়ির সিরিয়াল লেগে থাকত।
“কারণ হলো এই পথে পণ্য আনা নেওয়া করলে খরচ কম হয়। আর এই নৌপথ ছাড়া অন্যভাবে পণ্য আনা নেওয়া করলে দেড়-দুইশ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হবে। ফলে খরচটাও বেড়ে যায়। তাই আশপাশের জেলার অনেক ব্যবসায়ী তাদের পণ্য এ পথে আনা-নেওয়া করেন।”
বিআইডব্লিউটিএ বলছে ভিন্ন কথা
তবে বিআইডব্লিউটিসির জৌকুড়া ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. জাহিদুল ইসলামের দাবি যানবাহন ও যাত্রী না থাকাতেই তাদের একটি ফেরি চালাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, “যানবাহন কম থাকায় একটি ফেরি চলাচল করে। ফেরিটি প্রতিদিন চারটি টিপ দিচ্ছে। এর মাধ্যমেই যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। গাড়ির চাপ বাড়লে ফেরিও ২৪ ঘণ্টা চালানো হবে।”
ঘাটটিকে সচল রাখতে খননকাজ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “নাব্যতা সঙ্কটে চ্যানেল সরু হওয়ায় ফেরি চলাচল ব্যহত হচ্ছিল। ঘাটে ভিড়তে ফেরি ডুবো চরে আটকে যেতো। চ্যানেল ঠিক রাখতে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং কাজ করছে। ”
অপর প্রশ্নের জবাবে জাহিদুল ইসলাম বলেন, “যাত্রী সেবার মান কমেছে এ অভিযোগ ঠিক না। কারণ ফেরি যদি যানবাহন না পায় তাহলে তো খালি ছেড়ে যাবে না।”
এ বিষয়ে চন্দনী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক শিকদার বলেন, “এখন ফেরির জন্য বসে থাকতে হয়, তাই চালকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। কিন্তু যদি ফেরি সার্ভিস বাড়ানো হয়, রাতে যদি একটি-দুটি গাড়িও আসে তাহলে সেগুলো পার করার ব্যবস্থা করা হয়, এভাবে যদি কিছুদিন সার্ভিস দেওয়া হয় তাহলে যানবাহনের চাপ বাড়বে।
“কারণ চালকেরা জেনে যাবে রাতদিন যখনই ঘাটে যাওয়া যাক না কেন ফেরি পার হওয়া যায়। তা না হলে ধীরে ধীরে যানবাহনের চাপ আরও কমে যাবে এই নৌপথে।”