Published : 27 Oct 2024, 09:19 PM
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার, জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালকের পদত্যাগসহ কয়েকটি দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার সকাল ৯টা থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিভিন্ন প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা দিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন তারা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা এদিনও পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জন করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ‘বহিরাগতদের’ হামলার পর শিক্ষার্থীরা মারামারিতে জড়ালে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। সেদিন আহত হন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
পরে রাত ২টার দিকে সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পাসে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রদলের কমিটি কেন্দ্রীয়ভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থী বলছেন, সিলেট নগরীর টিলাঘর রোডে অবস্থিত এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে লাগানো পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে মাঝরাতে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোজাম্মেল হক ওই সংঘর্ষকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ড’ এবং মারধরের শিকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘ছাত্রলীগ’ সমর্থিত বলে অ্যাখ্যা দিয়ে বক্তব্য দেন। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার, জনসংযোগ ও প্রকাশনা কর্মকর্তা সালাউদ্দিনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা আরও জোরালো এবং সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।
মধ্যরাতে ‘বহিরাগতদের’ হামলা, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মারামারি
এছাড়া ২৪ অক্টোবর রাতের সংঘর্ষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত ছাত্রদলের হামলার বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করে দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভুয়া বিবৃতি প্রত্যাহার করে সত্য ও সঠিক বিবৃতি দেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের অ্যানোনিমাস মার্কিং ও পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যে ফেল করা বিষয়ের মানোন্নয়ন পরীক্ষা নিতে হবে।
শুধু রিক্যারির (একটি বিষয়ে দুবার ফেল) মাধ্যমে ইয়ার ড্রপ ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে; অন্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি পরীক্ষায় ৪০ নম্বরে পাশমার্ক নিশ্চিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র সার্বক্ষণিক খোলা রাখার দাবিও রয়েছে শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থী ইমাম হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সারাদিন একাধিকবার ভিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি; সুযোগ হয়নি। এ জন্য কর্মসূচি অর্থাৎ প্রশাসনিক ভবন ও সকল অনুষদে তালাবদ্ধ রেখে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন চলমান রয়েছে।
“আট দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। সোমবার সকালে আবার ক্যাম্পাসে অবস্থান করব।’’
এ বিষয়ে রোববার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মুখপাত্র হিসেবে মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক সুলতান আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলছিলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বসার জন্য বলেছি। বর্তমানেও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনে তালা রয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে সংষর্ষের ঘটনাকে রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মাকাণ্ড বলার বিষয়ে সুলতান আহমেদ বলেন, “ওই বিজ্ঞপ্তিতে ভাষাগত ত্রুটি রয়েছে, তাই এটি হয়েছিল। যারা তৈরি করেছিলের তারা ভালোভাবে না দেখেই ছেড়ে দিয়েছিলেন।”
এদিকে সংঘর্ষের রাতেই কেন্দ্রীয় তাৎক্ষণিকভাবে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ উল্লেখ করে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক এক নেতাকে সংগঠনের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি এই সংঘর্ষের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে কেন্দ্রীয় কমিটি দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
শনিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আতাউর রহমানের সাক্ষর করা এক চিঠিতে তদন্ত কমিটির বিষয়টি জানানো হয়েছে। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানোনো হয়ছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের ছাত্র, তাদের কথা শোনা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের সঙ্গে বসার জন্য শিক্ষার্থীরা মিটিং করছে। যেকোনো সময় আলোচনার জন্য দরজা খোলা রয়েছে।''