Published : 18 Jun 2024, 11:01 PM
কোরবানির চামড়ার প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে যশোরের বেনাপোলে এতিমখানা ও কওমি মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকরা হতাশ।
প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ার জন্য ভারতে চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। এই শঙ্কা থেকে নজরদারি বাড়িয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।
এতিমখানা, হেফজখানা ও কওমি মাদ্রাসার আয়ের যেসব উৎস আছে, তার মধ্যে একটি এই কোরবানির পশুর চামড়া।
যশোরের বাগআচড়া হেফজখানার তত্ত্বাবধায়ক খায়রুল বাসার বলেন, বছরের তিন থেকে চার মাসের ব্যয়ের অর্থ কোরবানির চামড়া বিক্রি থেকে আসত। তবে এবার সেটি সম্ভব হবে না।
তাদের মাদ্রাসায় এতিম ও গরিব শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের লিল্লাহ বোর্ডিং থেকে বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “এবার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও থাকা-খাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।”
সামটা মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক (খাদেম) আবুল বাসার জানান, এবার ঈদে তারা ৪৮টি গরুর পেয়েছেন। ছোট বড় মিলে গড়ে ৫৫০ টাকা দাম পেয়েছেন।
এতিমখানার সভাপতি লিয়াকত আলি বলেন, “চামড়ার দাম কম হওয়ায় এতিমখানার বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।”
বেনাপোল চেকপোস্টের বাগে জান্নাত কওমি মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল ওহাব বলেন, “এবার গরুর চামড়া পেয়েছি ১২৬টি আর খাসির ৬৪টি। গরুর চামড়া ছোট বড় মিলে গড়ে ৬৫০ টাকা দাম পেয়েছি। ছাগলের চামড়ার দাম দিয়েছে প্রতিটি ৫০ টাকা।”
তিনি বলেন, “হয়ত খুব বেশি বড় নয় কিন্তু তারপরও চামড়া বিক্রির খাত থেকে টাকা আসত। চামড়ার দাম কমতে থাকা তাই আমাদের জন্য চাপ।”
নাভারনের সিরামকাটি ওয়ালুম কওমি হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রধান আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, নাভারন কাজিরবেড় ও সিরামকাটি গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের কোরবানির চামড়া তারা পেয়ে থাকেন।
“এবার চামড়া সংগ্রহও কমেছে এবং তারপরও সেটার দাম নেই। বেচাবিক্রির চেষ্টা করছি কিন্তু এখনো বেচতি পারিনি।”
চামড়ার প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় গরিব মানুষদের আয়েও ভাটা পড়েছে। কারণ, কোরবানিদাতারা তাদের চামড়া বিক্রির টাকা বিলিয়ে দেন।
বসতপুরের বাসিন্দা ৮৫ বছর বয়সী জয়নব খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রত্যেক বার ঈদির পর চামড়ার কিছু টাকা পাই। এবার পালাম না।”
পানবুড়িয়া গ্রামের ৯০ বছর বয়সী সজ্জোত আলি বলেন, “চামড়ার কডা টাকা পাতাম, তাও পালাম না। কচ্ছে চামড়া বিক্রি নেই।”
শার্শার বালুন্ডা বাজারের মাংস বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম কোরবানি ঈদে গ্রাম থেকে চামড়া কিনে থাকেন। এবারও কিনেছেন, তবে সতর্কতার সঙ্গে।
তিনি বলেন, “গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত দাম দিছি। ছাগলের চামড়া কিনিছি ১৫/২০ টাকায়। কিছু চামড়া লোক দেছে ‘বিক্রি করতি পারলি তারা টাকা পাবে’, এই শর্তে।
রাজাপুর গ্রামের আক্তারুজ্জামান ৭৫ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া তিনশ টাকায় বিক্রি করতে পেরেছেন।
বেনাপোলের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী মশিয়ার রহমান পাঁচ মণ মাংস হওয়া ষাঁড়ের চামড়া বিক্রি করেছেন পাঁচশ টাকায়।
উপজেলার নাভারন বাজারে চামড়া বেচাকেনা করেন মির্জাপুর গ্রামের শফিউর রহমান এবং দক্ষিণ বুরুজবাগান গ্রামের চঞ্চল হোসেন।
‘ঢাকার ট্যানারি মালিকরা চামড়া নিচ্ছে না’ শুনে তারা চামড়া কেনার সাহস হারিয়েছেন। বড় গরুর চামড়া ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনছেন। ছাগলের চামড়ার দাম ২০ টাকার উপরে কেনেননি।
অনেকে ছাগলের চামড়া ফেলে রেখে চলে যাচ্ছে বলেও জানান তারা।
সীমান্তে নজরদারি
সীমান্তের ওপারে ভারতে যেখানে গরু জবাইয়ের চল কম, সেখানে মাংসের দাম বাংলাদেশের চেয়ে কম হলেও চামড়ার দাম কিন্তু বেশি। তাই প্রতি বছর কোরবানির পরেই চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার কথা বলাবলি হয়, যার ব্যতিক্রম হয়নি এবারও।
চামড়া পাচার ঠেকাতে কঠোর নজরদারির কথা জানিয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিও।
যশোর ৪৯ বিজিবি বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জামিল আহমেদ বলেছেন, “যেসব সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচারের আশঙ্কা থাকে সেসব এলাকা বেশি নজরদারিতে রাখা হয়েছে।”
বেনাপোলের গাতীপাড়া, বড়আঁচড়া, সাদিপুর, রঘুনাথপুর, ঘিবা, ধান্যখোলা, পুটখালী ও শার্শার গোগা, কায়বা, অগ্রভুলোট, রুদ্রপুর, কাশিপুর, শিকারপুর, শালকোনা এবং শাহজাতপুর সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে বলে বলে জানান তিনি।
বিজিবি কর্মকর্তা বলেন, “২৪ ঘণ্টা কড়া নজরদারি ও পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; যাতে দিনে কিংবা রাতে কোনোভাবেই কোরবানির পশুর চামড়া ভারতে পাচার না হয়।”