Published : 08 May 2025, 09:22 AM
স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের বহরমপুর-মির্জাপুর নদীঘাটে নির্মিত হয়নি কোনো সেতু।
ফলে বছরের পর বছর ধরে করতোয়া নদীর উপর বাঁশের নড়বড়ে সাঁকো কিংবা খেয়া নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন ১২টি গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
ভুক্তভোগীরা জানান, বর্ষার প্রায় ছয়-সাত মাস এই ঘাট দিয়ে যাতায়াত করতে হয় খেয়া নৌকায়। আর শুকনো মৌসুমে নদীর ওপর অস্থায়ীভাবে তৈরি বাঁশের সাঁকোতে চলাচল করতে হয় তাদের।
তবে সাঁকোটি সরু এবং নড়বড়ে হওয়ায় সামান্য ভারী মালামাল হলেই ভারসাম্য হারিয়ে নদীতে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় শিশু, বৃদ্ধ, রোগী, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের।
বিন্যবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, “বর্ষায় নদী ভরা থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নৌকায় পার হতে হয়। তখন খেয়া নৌকার জন্য কখনো কখনো ৩০ মিনিটও অপেক্ষা করতে হয়। আর শীতকালে যখন বাঁশ দিয়ে সাঁকো বানানো হয়, তখন সেটা এতটাই দুর্বল থাকে যে ভয়ে ভয়ে পার হতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, “অসুস্থ রোগী, গর্ভবতী নারী কিংবা শিশুদের নিয়ে নদী পার হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে এখনে পাকা সেতু নির্মাণের দাবি করে আসলেও তা প্রশাসনের নজরে পড়েনি।”
এই পথে চলাচল করেন নদীর পশ্চিম পাড়ের বহরমপুর, মামাখালী, বিন্যাবাড়ি, গৌড়নগর, করকোলা, বরদানগর, চিনাভাতকুরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষ এবং পূর্ব পাড়ের মির্জাপুর, নিমাইচড়া, গৌড়িপুরের বাসিন্দারা।
এসব এলাকায় আছে নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদ, মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ব্যাংক এবং মির্জাপুর হাট। এই সব স্থানে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন দুই পাড়ের হাজারো মানুষ।
বরদানগর গ্রামের ইকবাল বাহার বলেন, “করতোয়া নদীর ওপর সেতু না থাকায় প্রতিদিন কষ্ট করে পারাপার হতে হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ, কলেজ, ভূমি অফিস কিংবা হাটবাজারে যেতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। এমনকি অনেক সময় শিক্ষার্থীরা ক্লাস মিস করে। আমাদের দাবি, অবিলম্বে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হোক।”
তিনি বলেন, “বিশেষ করে বৃষ্টি, কুয়াশা বা অন্ধকারে এই সাঁকোটি মোটরসাইকেল নিয়ে পাড়ি দেয়াটা অনেক বড় ঝুঁকির। নদী পারাপারে কোনো স্থায়ী সেতু না থাকায় এখানকার মানুষদের জন্য চলাচল করা যেন অভিশাপ।”
“বর্ষাকালে নৌকা না চললে অনেক সময় রোগীকে নদীর পাড়েই আটকে থাকতে হয়। শিক্ষার্থীরা বিপজ্জনক সাঁকো পার হয়ে প্রতিদিন স্কুলে যায়। সেতুর অভাবে এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম কিংবা জরুরি সেবাগুলোও ব্যাহত হচ্ছে।”
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, “খোঁজ খবর নিয়ে সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করা হবে। আগে যদি কোনো প্রকল্প তৈরি করে জমা দেওয়া থাকে সে বিষয়েও খোঁজখবর নিব।”
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে দ্রুত সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতির কথাও জানান এই প্রকৌশলী।