Published : 17 May 2025, 06:35 PM
গাজীপুর মহানগরীর একটি তৈরি পোশাক কারখানায় পানি পান করে শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ একদিনের ছুটি ঘোষণা করে।
শনিবার সকালে নাওজোড় এলাকার ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিক কম্পোজিট কারখানায় এ ঘটনা ঘটে বলে গাজীপুর মহানগর পুলিশের বাসন থানার ওসি শাহিন খান জানান।
অসুস্থ শ্রমিকদের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, সিরাজুল হক জেনারেল হাসপাতাল, নাওজোড়ের সিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে ভর্তিও করা হয়।
শ্রমিকরা জানান, ছয়তলা কারখানাটিতে কমপক্ষে চার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সকাল ৮টায় তারা কারখানায় প্রবেশ করেন। পরে অনেকেই ট্যাপ থেকে পানি পান করেন। এর আধ ঘণ্টা পর থেকেই একে একে শ্রমিকরা অসুস্থ হতে শুরু করেন। তখন সহকর্মীরা তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান।
সিরাজুল হক জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মোর্শেদ বলেন, “শ্রমিকদের মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, পেটব্যথার মতো লক্ষণ রয়েছে। চিকিৎসা দেওয়ার পর বেশিরভাগই সুস্থ হয়েছেন।”
অসুস্থরা আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে নাওজোড়ের সিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আব্দুল হামিদ বলেন, “এখন পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। অসুস্থদের পেটের পীড়া, বমি বমি ভাব রয়েছে।”
ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিক কম্পোজিট কারখানার নির্বাহী পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, “কারখানার সব ট্যাংক, তিনবার করে পরিষ্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এজন্য ঢাকা থেকে লোক আনা হয়েছে। আমাদের পানি পানের জন্য আলাদা পাম্প আছে। এ ছাড়া পাম্পের পানি সরবরাহের জন্য ফিল্টার মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। আজ রাতের মধ্যে এসব ফিল্টারও পরিবর্তন করা হবে।
“শ্রমিকরা পানি পান করে কেন অসুস্থ হয়ে পড়েছে তা পরীক্ষার জন্য আমরা ট্যাংকের পানির নমুনা মহাখালীর আইসিডিডিআরবি এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে জনস্বার্থ প্রকৌশল অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, “পানি খেয়ে অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাদের সহযোগিতার জন্য দুই থেকে তিনশ শ্রমিক বিভিন্ন হাসপাতালে গেছেন। একজন রোগীর সঙ্গে তিনজনও গেছেন।”
এ ব্যাপারে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, “কারখানায় অসুস্থদের অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন, আবার অনেকে ভর্তি হয়েছেন। শ্রমিকরা জানতে পেরেছেন, চিকিৎসার সমস্ত খরচ কারখানা কর্তৃপক্ষ দেবে। এ সুযোগে অনেকে পুরনো রোগেরও চিকিৎসা করিয়ে নিয়েছেন।
“পাঁচটি হাসপাতালে তিন থেকে চারশর মত শ্রমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। বেশিরভাগই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। আবার অনেক হাসপাতাল বিল পাওয়ার আশায় অনেক শ্রমিককে দুই-তিন ঘণ্টা ভর্তি করে রাখে। তবে তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক কেউ নেই।”
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকরা এই ট্যাংকের পানি খান। এর আগে কারও কোনো সমস্যা হয়নি। তবে কী কারণে আজকে এরকম হল তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় নমুনা পাঠানো হয়েছে।”