Published : 21 Aug 2024, 09:33 PM
বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের সাতটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
এর মধ্যে বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন টঙ্গীর পশ্চিম থানাধীন চেরাগাআলী এলাকায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সহস্রাধিক শ্রমিক।
বুধবার সকাল থেকে শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু হলেও বিকালের মধ্যে কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয় বলে জানান গাজীপুর শিল্পপুলিশ-২ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন।
পুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, সকাল ৮টায় কাজে যোগদান না করে বকেয়া বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে বেক্সিমকো ফার্মার সহস্রাধিক শ্রমিক কারখানার সামনে কাঁঠালদিয়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
বেলা ১২টায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (জিএম) অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার মেহবুব হক সাংবাদিকদের জানান, সকাল ৮টা থেকে কিছু ঝামেলা ছিল। দুপুরে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়।
একই সময় টঙ্গীর সাতাইশ এলাকায় প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা জুলাইয়ের বকেয়া বেতনের দাবিতে কাজ বন্ধ করে যার যার জায়গায় বসে পড়েন।
শ্রমিকদের অভিযোগ, শুধুমাত্র জ্যাকার্ড সেকশনের (৯০ জন) শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বাকিদের বেতন দিচ্ছে না। কারখানা কর্তৃপক্ষ এর আগেও দুই-তিনবার বেতন পরিশোধের দিন ধার্য করেছিল কিন্তু পরে আর দেয়নি।
প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার কারখানার মালিক হাজী সাইফ উদ্দিন বলেন, “কিছু শ্রমিককে বেতন দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে সমস্যা হওয়ায় বাকিদের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। পরে তাদের বিষয়টি বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।”
এদিকে জুলাইয়ের বেতনের দাবিতে সকাল ৮টা থেকে টঙ্গীর বড় দেওড়া এলাকায় মাইশা মীম এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। দুপুর পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে কারখানার মালিক আলী আজম সরকারকে একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি কল কেটে দেন।
অপরদিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুরের ছয়দানার পাশে মালেকের বাড়ি এলাকায় টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভের কারণে মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে এক পাশ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ঢাকা ও ময়মনসিংহগামী যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
শ্রমিকরা জানান, টিএনজেড গ্রুপে তিন হাজার ৩০০ শ্রমিক কাজ করেন। মঙ্গলবার জুলাইয়ের বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ তা করেননি।
বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন গাজীপুরের দুটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
বুধবার দুপুর ১টার দিকে গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকার মাহমুদ জিন্স লিমিটেড কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীরা কর্মস্থল থেকে বের হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
শ্রমিকরা জানান, এ কারখানার কর্মচারীদের পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে শ্রমিকদেরও। মালিকপক্ষের কাছে একাধিকবার বকেয়া বেতন আবেদন করলেও তারা বিষয়টি সমাধান করেননি।
বুধবার সকালে শ্রমিক ও কর্মচারীরা কারখানায় গিয়ে বেতন দাবি করেন। পরে মালিকপক্ষ থেকে সাড়া না পেয়ে তারা কারখানা ত্যাগ করে মহাসড়কে নেমে পড়েন।
নাওজোড় হাইওয়ে থানার ওসি মো. শাহাদাত হোসেন জানান, বকেয়া বেতনের দাবিতে চন্দ্রায় শ্রমিকরা সড়কে নামেন। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান হলে বিকালে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অপরদিকে পিস রেট, বাৎসরিক ছুটির টাকা ও অন্যান্য দাবিতে সকাল থেকে গাজীপুর মহানগরের নাওজোড় এলাকার মাস্টার চ্যান ইন্ডাস্ট্রিজের লিংকিং সেকশনের শ্রমিকদের কর্মবিরতি পালনের খবর পাওয়া গেছে।