Published : 01 Oct 2024, 05:08 PM
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় খাগড়াছড়িগামী একটি বাস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা।
গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে জামাই মামুন (৪০) বরিশাল সদরের চরমোনাই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিমের ছেলে এবং ত্বকী হত্যায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ ওঠা আজমেরী ওসমানের খালাতো বোনের জামাই।
আজমেরী নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের ছেলে এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ভাতিজা।
২০১৪ সালে মার্চে ত্বকী হত্যা মামলায় র্যাবের ফাঁস হওয়া একটি তদন্ত প্রতিবেদনে আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে তার ব্যক্তিগত কার্যালয় ‘উইনার ফ্যাশন’ নামে ‘টর্চার সেলে’ নির্মমভাবে নির্যাতন করে ত্বকীকে হত্যার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডে ১১ জনের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়। তাদের মধ্যে মামুনের নামও রয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, ত্বকী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার একাধিক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার মামুনের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছেন।
মামুন দীর্ঘদিন ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। মঙ্গলবার ভোরে তাবলীগ-জামাতের ছদ্মবেশে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির রামগড় যাওয়ার পথে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানান হয়, গ্রেপ্তারের পর মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমাণ্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
তবে আদালত রিমাণ্ড শুনানির জন্য আগামী ৬ অক্টোবর তারিখ ধার্য করেছেন বলে জানান আদালত পুলিশের পরিদর্শক আব্দুর রশিদ।
নারায়ণঞ্জের সাংস্কৃতিক ও নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক শিল্পী রফিউর রাব্বির বড় ছেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ এই কিশোর শহরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে স্থানীয় একটি পাঠাগারে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হয়।
পরদিন তার ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়, যেখানে দেখা যায় ত্বকী সারা বিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৯৭ পেয়েছিলেন।
৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়।
তবে দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র্যাব।
ত্বকীর পরিবার বরাবরই অভিযোগ করে আসছিলেন, প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্যরা জড়িত থাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে।
তবে, ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত এক মাসে আলোচিত এই হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা র্যাব।
তাদের মধ্যে একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
আর মামলাটির তদন্ত দ্রুত শেষ করে তিন মাসের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি জানিয়েছিলেন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা।