Published : 29 Oct 2024, 08:06 PM
দাবি মানার আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা শেষে আন্দোলন স্থগিতের এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের আট দফা দাবির মধ্যে সাতটি ছিল অ্যাকাডেমিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। আর বাকি একটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও জনসংযোগ কর্মকর্তার পদত্যাগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত চলা পর্যন্ত তিনি তার দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ ছাড়া রেজিস্ট্রার ও জনসংযোগ কর্মকর্তার পদত্যাগের দাবি বিবেচনায় রাখার কথা তাদের জানানো হয়েছে।
উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা শেষে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে সোহেল আহমদ অয়ন প্রেস ব্রিফিং করেন।
তিনি বলেন, “যেহেতু প্রক্টরের বিষয়ে তদন্ত চলছে। সেহেতু তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত প্রক্টরিয়াল দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এছাড়া বাকি সাতটি দাবি দ্রুত বাস্তবায়নে উপাচার্য আশ্বাস দিয়েছেন। ফলে আন্দোলন স্থগিত করে আগামী বৃহস্পতিবার সব ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আলিমুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। তারা আন্দোলন স্থগিত করেছে। বৃহস্পতিবার থেকে যথারীতি ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হবে।”
সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মুখপাত্র হিসেবে মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক সুলতান আহমেদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী প্রক্টর মোজাম্মেল হককে তদন্ত চলাকালীন তার কর্ম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
৭ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি তদন্ত রিপোর্ট পেশ করবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোজাম্মেল তার প্রক্টরিয়াল দায়িত্ব পালন না করলেও ক্লাস-পরীক্ষা নেবেন।”
মঙ্গলবার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার, জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালকের পদত্যাগসহ কয়েকটি দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
সকাল ৯টা থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে দাবি বাস্তবায়নে স্লোগান দিতে থাকেন; বেলা দেড়টার দিকে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন।
আন্দোলনরত একাধিক শিক্ষার্থী তখন জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা সফল হয়নি বিধায় তারা আবার আন্দোলনে নেমেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
গত রোববার সকাল ৯টা থেকে বিকাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা দিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন তারা।
এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ‘বহিরাগতদের’ হামলার পর শিক্ষার্থীরা মারামারিতে জড়ালে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে।
সেদিন আহত হন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে রাত ২টার দিকে সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পাসে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।
এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রদলের কমিটি কেন্দ্রীয়ভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থী বলছেন, সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকায় অবস্থিত এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে লাগানো পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে মাঝরাতে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোজাম্মেল হক ওই সংঘর্ষকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ড’ এবং মারধরের শিকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘ছাত্রলীগ সমর্থিত’ বলে অ্যাখ্যা দিয়ে বক্তব্য দেন। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার, জনসংযোগ ও প্রকাশনা কর্মকর্তা সালাউদ্দিনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা আরও জোরালো এবং সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থায়ীভাবে বন্ধ করা।
এছাড়া ২৪ অক্টোবর রাতের সংঘর্ষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত ছাত্রদলের হামলার বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করে দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভুয়া বিবৃতি প্রত্যাহার করে সত্য ও সঠিক বিবৃতি দেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের অ্যানোনিমাস মার্কিং ও পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যে ফেল করা বিষয়ের মানোন্নয়ন পরীক্ষা নিতে হবে।
শুধু রিক্যারির (একটি বিষয়ে দুবার ফেল) মাধ্যমে ইয়ার ড্রপ ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে; অন্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি পরীক্ষায় ৪০ নম্বরে পাশমার্ক নিশ্চিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র সার্বক্ষণিক খোলা রাখার দাবিও রয়েছে শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসন সোমবার বৈঠকে তাদের দাবি মানা হবে না জানিয়ে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের হুমকি দেয়।
তাই এবার তারা উপাচার্য ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, উপাচার্যের কাছ থেকে দাবি মানার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিবৃতি না আসা পর্যন্ত সব ধরনের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম জন্য বন্ধ থাকবে; তাদের আন্দোলন চলবে।
এ অবস্থায় বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় দাবি আদায়ের আশ্বাস পেয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা আসে।
আরও পড়ুন:
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন