Published : 15 Jan 2024, 11:23 PM
পৌষ সংক্রান্তির গোসাই নবান্ন উপলক্ষে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় হয়ে গেল মার্বেল মেলা। দিনটি ঘিরে এলাকায় বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।
প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো এ মেলা সোমবার সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দেরআঁক গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়।
মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র (বিসি) বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রামানন্দেরআঁক গ্রামের মা সোনাই চাঁদ আউলিয়া মন্দির আঙ্গিনায় দুই দিনব্যাপী মেলা অনুষ্ঠান হয়। ১৭৮০ সাল থেকে এ অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। করোনার সময় তিন বছর বন্ধ ছিল।
তিনি আরও বলেন, এই গ্রামের ছয় বছর বয়সি সোনাই চাঁদের বিয়ে হয়। এক বছর পার হওয়ার আগেই তার স্বামী মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুর বাড়িতে একটি নীম গাছের নিচে বিধবা কিশোরী মহাদেবের আরাধনা ও পূজা অর্চনা শুরু করেন। পূজার্চনা থেকে সাধনা।
এক সময় সাধনার উচ্চ মার্গে সিদ্ধ হলে সোনাই চাঁদের অলৌকিক কর্মকাণ্ড এলাকা ছাপিয়ে বাইরেও প্রচার পায়। সোনাইর জীবদ্দশায় ‘সোনাই চাঁদ আউলিয়া মন্দির’ স্থাপন করা হয়। তার মৃত্যুর পরেও মন্দিরের আঙ্গিনায় চলে নাম সংকীর্ত্তন ও নবান্ন উৎসব।
অন্যান্য বছরের মত এবারও মন্দিরের আঙ্গিনার আশপাশের এলাকায় মেলা বসে। মেলা উপলক্ষে বৈষ্ণব সেবা, হরিনাম সংকীর্ত্তন শেষে সোয়া মণ (৫০ কেজি) চালের গুড়ার সঙ্গে সোয়া মণ গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল ও প্রয়োজনীয় খাদ্য উপকরণ মিলিয়ে তৈরি করা হয় গোসাই নবান্ন। যা মেলায় আগত দর্শনার্থীদের প্রসাদ হিসেবে পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানের একটি পর্ব হচ্ছে মার্বেল মেলা।
হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম পৌষ সংক্রান্তিতে ২৪৪ বছর ধরে এই দিন উৎসব ও মারবেল মেলা হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন বিসি বিশ্বাস।
স্থানীয় বাসিন্দা নিরঞ্জন মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শীতকালে মাঠ-ঘাট শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের পূর্ব পুরুষেরা মেলার এই দিনে মার্বেল খেলার প্রচলন শুরু করে। গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে আজও তারা মার্বেল খেলার ধারা অব্যাহত রেখেছেন।
এই দিনটিকে ঘিরে রামানন্দেরআঁক গ্রামে কয়েকদিন পর্যন্ত উৎসবের আমেজ বিরাজ করে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের পিঠা পায়েসের নিমন্ত্রণ জানানোর সঙ্গে মার্বেল খেলায় আমন্ত্রণ জানান। এলাকার প্রতিটি বাড়ির আত্মীয়, স্বজন ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে ওই গ্রাম হয়ে ওঠে লোকে-লোকারণ্য।
বাড়িতে বাড়িতে চিড়া, মুড়ি, খেজুর গুড়ের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় প্রধান আকর্ষণ সব বয়সি নারী-পুরুষের মার্বেল খেলার প্রতিযোগিতা।
সেইসঙ্গে রামানন্দেরআঁক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্পসামগ্রী, মনিহারি, খেলনা, মিষ্টি, ফল, চটপটি, ফুচকাসহ হরেক রকমের খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানের পশরা।