Published : 07 Jun 2025, 08:35 PM
চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুনের শুরুতে জমে উঠা আমের বাজার কোরবানির ঈদের ব্যস্ততা আর দীর্ঘ ছুটির প্রভাবে দরপতন ঘটেছে। প্রতি মণ আমের দাম কমেছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা।
আম পরিবহন ও বাজারজাতের অন্যতম ব্যবস্থা কুরিয়ার সার্ভিস। ঈদ উপলক্ষে ৫ জুন থেকে ৮ জুন সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ। ৪ জুন থেকে বন্ধ হয়ে যায় আমের বুকিং নেওয়া। এতে থমকে গেছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো আমের বিশাল অনলাইন মার্কেটিং।
৪ জুন দেশের অন্যতম বড় কনসাট আম বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, আগের দিনের সঙ্গে দামের বেশ ফারাক রয়েছে। একদিকে ছুটি, আরেকদিকে আম পেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কা- দুইয়ে মিলে ভাবাচ্ছে চাষিদের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, এ বছর আম পাড়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় বাধা নেই; অর্থাৎ প্রতিবারের মত ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ নেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাধারণত মে মাসের শেষে অথবা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে গাছে পাকা আম দেখতে পাওয়া যায়। গাছে পাকা আম দেখা দিলে পরিপক্ক ওই আম বাজারে নামান চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
কনসাট বাজারের ফড়িয়া আম ব্যবসায়ী মো. রায়হান আলী বলেন, ৩০ মে আম নামে বাজারে। ১ জুন থেকে কানসাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে আম বাজার জমে ওঠে। শুরুতে বাজারে উঠে গোপালভোগ আম। বাজার দর ১৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
এদিন খিরসাপাত আমও আসে বাজারে। শুরুতেই খিরসাপাত আম প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছিল ২০০০ টাকার উপরে। দুদিন পর ৩ জুন বিক্রি হয় ২২০০ থেকে ২৮০০ টাকা মণ দরে। আর ল্যাংড়া আম বিক্রি হয় ১৪০০ থেকে ২৪০০ টাকা মণ।
ব্যবসায়ী মো. রায়হান আলী বলেন, “কোরবানির ঈদমুখী ব্যস্ততা ও অফিস-আদালতের দীর্ঘ ছুটির প্রভাবে আমের দাম কমে যায়। ৪ জুন বাজারে খিরসাপাত আম ১৬০০ থেকে ২৪০০ টাকা মণ এবং ল্যাংড়া আম প্রতি মণ ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”
নাচোল উপজেলার টঘরইল এলাকা থেকে সাত্তার হোসেন আম বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন কানসাট বাজারে। তিনি জানান, ৩ জুন ক্ষুদি (কিছুটা ছোট আকারের) গোপালভোগ বিক্রি করেছেন ১৬০০ থেকে ২২০০ টাকা মণ। ৪ জুন (বুধবার) দু-একজন দাম বলেছেন অর্ধেক।
“বাজারে কাস্টমার কম। বাজার স্বাভাবিক না হলে গাছের আম গাছেই পেকে নষ্ট হবে।”
ময়মনসিংহ জেলা শহরের নতুনবাজার এলাকার পন্ডিতপাড়া থেকে আম কিনতে এসেছেন রিয়াদ হাসান লিটন। তিনি ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনলাইনে আম মার্কেটিং শুরু করছেন। তিনি জানান, গেল দুই-তিন দিন অনলাইনে অর্ডার নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসে ভোক্তার কাছে আম পাঠিয়েছেন। ঈদ উপলক্ষে কুরিয়ার সার্ভিস বন্ধ। তাই নতুন করে আর অর্ডার নিতে পারেননি।
কনসাট বাজারের আমের আড়তদার মো. মজিবুর রহমান সরকার জানান, ৪ জুন থেকে আমের দর কম। কোরবানি ঈদের ব্যস্ততায় বাইরের বেপারিরা নেই; বিক্রি কমে গেছে।
আম উদ্যোক্তা ও শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল হক হায়দারী বলেন, “আমের তো ছুটি হয় না; সময় হলে পেকে ঝরে পড়বে। আম, কৃষিপণ্য, কাঁচামাল পরিবহনে ঈদের ছুটিতেও ডাক বিভাগের জরুরি পরিষেবার আওতায় বিশেষ ব্যবস্থায় চালু রাখা দরকার।”
কনসাট বাজারের ইজারাদার শফিকুল ইসলাম বলেন, “বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা কম, বেচা- বিক্রি কম হচ্ছে। ঈদের আগে দুদিন এবং ঈদের পরে দুদিন এই চার-পাঁচ দিন পরে আবার বাজার ঠিক হয়ে যাবে।”
কনসাট বাজার এলাকার গোপালনগর মোড়ে জে আর ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ জুন থেকে ৮ জুন কুরিয়ার সার্ভিস বন্ধ থাকবে। ৯ জুন থেকে বুকিং শুরু হবে।