Published : 05 Jun 2025, 04:55 PM
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শেষ মুহূর্তে জমেছে কোরবানির হাট। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে গরু-ছাগল কেনাবেচা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুর, ভাদুঘর, মনিপুর বন্দরবাজার, আখাউড়া, চম্পকনগর, আইড়ল, আউলিয়া বাজার গরুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির মধ্যেই খামারিরা গরু, মহিষ, ছাগল নিয়ে বসে আছেন। বৃষ্টির জন্য এসব হাটে খুব একটা ক্রেতা দেখা যায়নি। যারাই হাটে আছেন, ঘুরে ঘুরে দেখছেন।
বিক্রেতারা বলছেন, হাট চালুর পর থেকে বৃষ্টির জন্য তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে মঙ্গলবার ও বুধবার বেচাকেনা বেড়েছে।
সুহিলপুর বাজারে বৃষ্টিতে তিনটি ষাঁড় নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সদর উপজেলার গ্রামের বশির মিয়া।
বশির মিয়ার কাছে হাটের পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “একটু পর পর বৃষ্টি নামে। এমন বৃষ্টি থাকলে কে আসবে গরু কিনতে?। বৃষ্টির জন্য বাজারে কোনো মানুষই আসে না।
“দেড় লাখ টাকা একটি গরুর দাম উঠছিল। ভাবছিলাম আরেকটু বাড়লে দিয়ে দিব। কিন্তু বৃষ্টির জন্য ওই লোকটি আর আসেনি।”
বুধবার বিকালে মনিপুর বন্দরবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ক্রেতা ও খামারিরা মাঠে গরু, মহিষ, ছাগলে নিয়ে ভিড় করে আছেন। ক্রেতারাও মাঠে ঘুরে ঘুরে পছন্দের পশু কিনছেন। তবে বৃষ্টির কারণে এখানেও তার প্রভাব পড়েছে।
মনিপুর বন্দরবাজারের ইজারাদার মো. জুয়েল খান বলেন, “আমাদের বাজারে যারা গরু ছাগল কিনতে আসে তাদের কাছ থেকে নামে মাত্র হাসিল নিয়ে থাকি। এতে ক্রেতারাও খুশি হয়।”
বেচাকেনা ভালই বলে জানান তিনি।
বিজয়নগর উপজেলার আউলিয়া বাজার, চম্পকনগর বাজার, আড়িয়াল বাজারে বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, শেষ সময়ে বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দরদাম নিয়ে বাজার মুখরিত।।
পাহাড়পুর ইউনিয়নের সেজামুড়া গ্রামের লিল মিয়া আউলিয়া বাজারে একটি ষাঁড় নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “শখের পশুকে লালন-পালন করে বিক্রি করতে এনেছি। তা-ও বিক্রি করতে যেন মনে কষ্ট লাগতেছে। ষাঁড়টিকে আমি খুব যত্ন করে লালন-পালন করেছি। ২ লাখ টাকা দাম চাচ্ছি কিন্তু চাহিদা মতো দাম পাচ্ছি না।
“১ লাখ ৮০ হাজারের নিচে বিক্রি করলে লস হয়ে যাবে। কিন্তু দেড় লাখের বেশি কেউ বলে না। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত রাখব। দেখি কত বিক্রি করতে পারি।”
বিজয়নগর উছাপুরা ইউনিয়নের আইড়ল বাজারের ইজারাদার মো. রুবেল মিয়া বলেন, “মঙ্গলবার ও বুধবার প্রচুর বেচাকেনা হয়েছে। পুরো বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রচুর চাপ ছিল। বাজারে হাসিল হিসেবে আমরা খুব কম টাকা করে নিয়ে থাকি এজন্য ক্রেতারাও পশু কিনে খুশি হয়ে বাড়ি যাচ্ছে।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের নয়নপুর এলাকার রূপচান্দ বিবি ডেইরি খামারে গিয়ে দেখা যায় ওই খামারে কোরবানির জন্য শতাধিক দেশীয় গরু লালন-পালন করা হচ্ছে।
খামারের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, “গত বছর আমরা দেড় শতাধিক গরু লালন-পালন করেছিলাম। গত বছর ৩০টি গরু বিক্রি করতে পারিনি। গত বছরের থাকা ৩০টি গরুসহ এই বছর শতাধিক গরু লালন-পালন করেছি। সবগুলোই দেশীয় জাতের। গরুগুলোকে স্বাভাবিক খাওয়ার দেওয়া হয়। বাজারে রেগুলার নিয়ে যাচ্ছি বিক্রিও হচ্ছে ভালো।”
ঈদুল আজহা উপলক্ষে এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৩৫টি গবাদি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে জেলায় কোরবানির জন্য চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৭টি গবাদি পশু। চাহিদার তুলনায় ৮০৮টি গবাদি পশু বেশি রয়েছে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার সদর উপজেলায় ৪ হাজার ১৭১টি খামার, সরাইল উপজেলায় ১ হাজার ২৭৫টি, আখাউড়া উপজেলায় ৭৭৭টি, কসবা উপজেলায় ২ হাজার ৪৪টি, নাসিরনগর উপজেলায় ১ হাজার ৬১৮টি, নবীনগর উপজেলায় ১ হাজার ৭০৩টি, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ১ হাজার ২৮১টি, আশুগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ২৭টি ও বিজয়নগর উপজেলায় ৮৯৬টি খামার রয়েছে।
এসব খামারে ৫ হাজার ৮৮৯৪টি ষাঁড়, ২ হাজার ৩৪২৩টি বলদ, ১ হাজার ৭২৫০টি গাভী, ১ হাজার ২১৬৬টি মহিষ, ১ হাজার ৫৩২১টি ছাগল, ৮ হাজার ৫৮১টি ভেড়া লালন-পালন করা হয়েছে। এছাড়াও অনেক কৃষক পরিবারে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য ২-৩টি করে গবাদি পশু লালন-পালন করছেন। এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোরবানির হাট বসবে ১২১টি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. হাবিবুল ইসলাম বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ বছর চাহিদার তুলনায় বেশি পশু রয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলায় কোরবানির গরু বিক্রি করা যাবে।
“খামারগুলো ছাড়াও জেলায় বহু কৃষক পরিবার কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য ২-৩টি করে গবাদি পশু লালন-পালন করছেন। আশা করি এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার উপরে গবাদি পশু কেনাবেচা হবে।”