Published : 09 Jun 2025, 12:10 AM
ঢাকার সাভারে হরিণধরা এলাকার চামড়া শিল্প নগরীতে এবার কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কম আসার কথা বলছেন ট্যানারি মালিকরা।
কম আসার কারণ হিসেবে দুটি বিষয় সামনে আনছেন তারা। বলছেন, অনেক মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এবার চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে; এছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে চামড়া ঢাকায় ঢুকতে পারছে না।
রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩ লাখ ৫০ হাজার চামড়া সংরক্ষণ করার তথ্য দেন বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
এদিন হেমায়েতপুরের হরিণধরা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ট্যানারিতে চামড়ার স্তূপ তুলনামূলক কম। চামড়ায় লবণ লাগানো নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ব্যস্ততাও খুব একটা নেই।
কিছু ট্যানারিতে কিছু চামড়ায় লবণ মাখিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ চামড়ার সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত অংশ কেটে লবণ লাগাচ্ছেন।
ট্যানারির প্রবেশপথের দুপাশে গড়ে উঠেছে চামড়ার স্থায়ী আড়ত। এসব আড়তের মালিকরা নিজেদের চাহিদা অনুসারে চামড়া কিনছেন। সুযোগ বুঝে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কম দামে কেনার ঘটনাও দেখা গেছে।
এবার গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৫ টাকা এবং ছাগলের চামড়ার দাম ২ টাকা বাড়ায় সরকার।
ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কেনার কথা।
আর ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম পড়ছে ৫৫ টাকা ৬০ টাকা।
এছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হয়। আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট বিক্রি হয় ২০ থেকে ২২ টাকায়।
কিন্তু মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এ বছর সরকার নির্ধারিত দামে ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা চামড়া কিনছেন না। এতে তাদের লোকসান গুনতে হবে।
গাজীপুর থেকে দেড় শতাধিক চামড়া নিয়ে সাভারের ট্যানারিতে এসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে চামড়া সংগ্রহ করেছি। আকার ভেদে চামড়া ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকা করে কিনেছি। এরপর আবার ১০ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া।
“কিন্তু আড়তদাররা দাম বলে ২৫০ টাকা করে। এখন অনেক টাকা লোকসান হবে। চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।”
আরেক মৌসুমি ব্যবসায়ী নাজমুল বলেন, “কাঁচা চামড়া নিয়ে আসা মানেই বিপাকে পড়া। ট্যানারি মালিকরা লোক লাগিয়ে রাখে। তাদের মাধ্যমে কম দামে চামড়া বিক্রি করতে হয়, যার কারণে আমরা ন্যায্য দাম পাই না।”
‘রংপুর হাইটস’ আড়তের মালিক ইসলাম হোসেন বলেন, “অনেকেই চামড়া নিয়ে আসেন। কিন্তু গরমে বা রাস্তায় চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। তাই বেশি দাম বলা যায় না। গাজীপুর থেকে যে চামড়াগুলো নিয়ে এসেছে, সেগুলোর লোম উঠে যাচ্ছে। তাই চামড়ার দাম ২৫০ টাকা করে বলা হয়েছে।”
এবার ঈদের দিন থেকে টানা ১০ দিন বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া ঢাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এই ১০ দিন ঢাকাসহ আশেপাশের চামড়া সংগ্রহ করবেন ট্যানারি মালিকরা। এরপর ঢাকার বাইরে থেকে লবণযুক্ত চামড়া ঢুকতে শুরু করবে সাভারের ট্যানারিগুলোতে।
এতিমখানা ও মাদ্রাসাগুলো যেন যথাযথ সংরক্ষণের মাধ্যমে কোরাবানির চামড়ার ‘উপযুক্ত মূল্য’ পায়, সে লক্ষ্যে সারা দেশে বিনামূল্যে এবার ৩০ হাজার টন লবণ বিতরণ করে সরকার। কাঁচা ও ‘ওয়েট ব্লু’ চামড়া রপ্তানির ওপর থেকে বিধিনিষেধও তুলে নেয়।
সরকার বলছে, তাদের এসব উদ্যোগের প্রভাবে চামড়ার দাম বাড়বে; রপ্তানিও বাড়বে এ খাতে।
কিন্তু ট্যানারি মালিকরা বলছেন, সরকারের এসব উদ্যোগ চামড়া শিল্পের জন্য ‘আত্মঘাতী’ হয়েছে।
হাজী ট্যানারির ব্যবস্থাপক মো. ইমন বলেন, “আমাদের ট্যানারিতে চামড়া আসা শুরু করেছে। তবে আগের তুলনায় কম পাচ্ছি। এই চামড়াগুলো আমরা লবণ দিয়ে রাখতেছি। এগুলো ১০ থেকে ১৫ দিন লবণে থাকবে। এরপর আমরা পরবর্তী প্রক্রিয়ায় যাব।”
তিনি বলেন, “সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে এক সপ্তাহ বা ১০ দিন পর থেকে ঢাকার বাইরের চামড়া কেনা শুরু করবো। তবে প্রতিবছর আমরা যে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করি, এবার তার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম পেয়েছি।”
‘দেশের পরিস্থিতির কারণে’ চামড়া কম আসছে, এমন ধারণা তার।
‘এসবি শাহী ট্যানারি’র সুপারভাইজার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, “আমরা প্রায় তিন হাজার চামড়া কিনেছি। মূলত চামড়াগুলোর ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত দাম পাওয়া যায়। তার বেশি সময় হলে গুণগত মান নষ্ট হতে থাকে এবং দাম কমে যায়। তবে আমরা সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া কিনেছি।”
‘মা সুফিয়া ট্রেডার্সের’ মালিক মোহন বলেন, গতবারের চেয়ে এবার চামড়ার সরবরাহ কম। সরকার নির্ধারিত মূল্যেই আমরা চামড়া কিনছি। যারা ভালো চামড়া আনতে পারেন, তারা মূল্য ভালো পান।”
বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, সরকার এবছর ঢাকার মধ্যে সর্বনিম্ন লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং প্রতি বর্গফুট ৬০ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে, যেটা সাংঘর্ষিক মনে হয়েছে।
“চামড়ার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা হলে প্রতি বর্গফুট পড়বে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। তাই সরকারের এ দাম নির্ধারণ যুক্তিযুক্ত হয়নি। তাছাড়া ঢাকায় বাইরের চামড়া ৮ থেকে ১০ দিনের আগে ঢুকতে পারবে না।”
আরও পড়ুন
চট্টগ্রামে চামড়ার দাম 'কম', আড়তদারদের দুষছেন ফড়িয়ারা
সারা দিন খেটে কাঁচা চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের 'মাথায় হাত'
কোরবানি: ১০ দিন ঢাকায় ঢুকবে না কাঁচা চামড়া
সংগ্রহের 'অভিনব' প্রচেষ্টা, সঙ্গে রপ্তানির সুযোগ, চামড়ার বাজার বদলাবে?