Published : 13 Jul 2024, 11:38 PM
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে মানুষের প্রত্যাশা ও উদ্বেগ দুটোই রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মো. মশিউর রহমান।
তিনি বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে মানুষের প্রত্যাশার জায়গা হলো-দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হলে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিপুল পরিমাণ সহায়ক শক্তি পাব।
“আর উদ্বেগের কারণ হল দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা সম্ভব না হলে আমাদের অগ্রসরতা, পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিসহ তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিষণ্নতা সৃষ্টি হতে পারে।”
শনিবার গাজীপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের সিনেট হলে ২৬তম বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে সিনেট চেয়ারম্যানের অভিভাষণে এসব কথা বলেন উপাচার্য।
উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের অনলাইন সেবা পূর্ণমাত্রায় দেওয়ার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিপূর্ণ আধুনিক ডেটা সেন্টার স্থাপন করা ছাড়াও করোনা মহামারির কারণে পিছিয়ে পড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে, ক্লাশ ও পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে গতিময়তা আনার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে আইসিটি বিষয়কে আবশ্যিক করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রতি কলেজ থেকে দু’জন করে শিক্ষককে আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কলেজ পরিচালনা কমিটির মেয়াদ দুই বছরের পরিবর্তে তিন বছর করার প্রস্তাব পাস হয়েছে।
উপাচার্য মশিউর বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বে আদর্শগত নেতৃত্ব দেবার জায়গায় দেখতে চাই। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের সামনে দাঁড়িয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে তাঁদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে অদম্য গতি, সাহসিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে যেতে চাই।
“জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’ অবশ্য পাঠ্য করে যেমন একদিকে দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী তৈরিতে দৃঢ়তা রেখেছে, তেমনি আইসিটি কোর্সকে অবশ্য পাঠ্য করে তাদেরকে তৈরি করতে চাই যোগ্যতর মানুষ হিসেবে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিবন্ধকতা আমাদের আছে, সমস্যাও আছে বহুমুখী। কিন্তু সেসব উত্তরণে আমাদের নিজস্ব শক্তি, নেতৃত্ব ও ভিত্তি ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে।”
এছাড়া উপাচার্য তার বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের জন্য আলাদা প্লাটফর্ম-রিসোর্স হাব তৈরি, কলেজে স্মার্ট প্রমোশন সেন্টার, মেধা-দক্ষতার ভিত্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি, কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই গঠনসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
সিনেটের এ অধিবেশনে বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য তুলে ধরেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ. বি. তাজুল ইসলাম, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. মোতাহার হোসেন, সংসদ সদস্য মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সংসদ সদস্য এস. এম. কামাল হোসেন, সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসান।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, পিএসসির সাবেক সদস্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তার, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবির বক্তৃতা করেন অধিবেশনে।
শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন সিনেট সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন।
অধিবেশনে বিভাগীয় কমিশনাররা, বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদসহ ৬৪ জন সিনেট সদস্য ও ২ জন আমন্ত্রিত সিন্ডিকেট সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
২ হাজার ৯৭ কোটি ৩১ লক্ষ টাকার বাজেট
সিনেট অধিবেশনে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ৯৭ কোটি ৩১ লক্ষ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার অনুষ্ঠানে ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার এ বাজেট পাঠ করেন।
প্রস্তাবিত এ বাজেটের মধ্যে রাজস্ব বাজেটে ৭২১ কোটি ৬৪ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য ১ হাজার ৩৭৫ কোটি ৬৬ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা দীর্ঘ আলোচনা শেষে সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে।
এছাড়া সিনেট অধিবেশনে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ৫৬৪ কোটি ৫০ লক্ষ ২৬ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদিত হয়।