Published : 01 Jul 2023, 10:49 PM
দেশের বাজারে কাঁচামরিচের দাম বাড়তি। প্রতিকূল আবহাওয়া, বৃষ্টি, ঈদের বন্ধ, সরবরাহ সংকটসহ নানা কারণে এ নিত্যপণ্যটির দাম লাগাম ছাড়িয়েছে বলে ধারণা বাজার সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশের যেসব স্থানে সবচেয়ে বেশি কাঁচামরিচ উৎপাদন হয় তার অন্যতম ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা। শনিবার দিনের একপর্যায়ে শৈলকুপা হাটে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ এক হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়েছে বলে বিক্রেতা জানিয়েছেন।
যদিও দিনের শুরুতে মরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকায়।
শৈলকুপা হাটের খুচরা ব্যবসায়ী মজিবর রহমান বলেন, “সকাল ৮টার দিকে হাট শুরু হলে চাষিরা পাইকারি প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি করছিল ৭০০ টাকায়। খুচরা বিক্রি হচ্ছিল ৮০০ টাকা কেজিতে। এরপর পাইকারি বাজারে দাম চড়তে থাকে।
“সকাল ৯টার সময় পাইকারি প্রতি কেজির দাম হয় ৮০০ টাকা। আর খুচরা বিক্রি হয় এক হাজার টাকা কেজি দরে। তবে বিকাল ৩টার দিকে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম কমে। দিনশেষে পাইকারি প্রতি কেজি ৭০০ টাকা ও খুচরা ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।“
শৈলকুপা উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের চাষি আওলাদ হোসেন জানান, এ বছর ১০ কাঠা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন তিনি। তাপ প্রবাহের কারণে বহু গাছ মরে গেছে, পাতা কুঁকড়ে গেছে, ফুল-ফলও কম ধরছে।
তিনি জানালেন, বাজারে ২ কেজি কাঁচামরিচ এনেছিলেন, ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহের উপ-পরিচালক মো. আজগর আলি জানিয়েছেন, এই মৌসুমে এক হাজার ৭৩৭ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে। কিন্তু তাপ প্রবাহের কারণে মরিচের গাছ মরে গেছে, পরে আবার বৃষ্টিতে ফুল পচে গেছে। ফলে উৎপাদন কমে গেছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে এলে উৎপাদন আবার বাড়বে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাজারগুলোতেও তীব্র সংকটের মধ্যে কাঁচামরিচের দাম লাফিয়ে বেড়েছে। দিনশেষে শহরের আনন্দবাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকায়।
মূলত ঈদের আগের দিন থেকে বাড়তে থাকে মরিচের দাম। তবে শহরের চেয়ে গ্রামের বাজারগুলোয় দাম বেশি। সকাল থেকে আখাউড়া উপজেলার বাজারগুলোয় প্রতি কেজি কাঁচামরিচ পাইকারি ৮০০ টাকা এবং খুচরা বিক্রি হয়েছে ৯০০-১০০০ টাকায়।
এ ছাড়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
দুপুরে আনন্দবাজার ঘুরে দেখা গেল, অধিকাংশ সবজির দোকানেই কাঁচামরিচ নেই। হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে কাঁচামরিচ থাকলেও তার পরিমাণ কম, দাম বেশি।
সবজি বিক্রেতা মুসলিম মিয়া জানালেন, ঈদের বন্ধের কারণে বাজারে চাহিদামত পণ্য আসছে না। এর ফলে কাঁচামরিচের সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া আড়ৎ থেকেও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে। তবে আগামী তিন-চারদিনের মধ্যে দাম কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আর ঝিনাইদহের তুলনায় কিছুটা কম দামে ফরিদপুরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ।
জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায় কাঁচামরিচ বিক্রি হতে দেখা গেছে।
পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা বৃষ্টিতে মরিচ গাছে পচন দেখা দিয়েছে। আবার ঈদের ছুটির ফাঁদে পড়েছে সরবরাহ ব্যবস্থা। সব মিলিয়েই কাঁচামরিচের বাজারে ‘আগুন লেগেছে’।
ফরিদপুর শহরের হাজী শরিয়তুল্লাহ বাজারের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার যে মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৫০-৩০০ টাকায়, সেটাই দুদিনের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়।
ক্রেতারা বলছেন, ১৫ দিন আগেও তারা কাঁচামরিচ কিনেছেন ৮০ টাকা কেজিতে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন, এমন অভিযোগ তাদের। নিয়মিত বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকাকেও দুষলেন তারা।
বোয়ালমারীর চতুর ইউনিয়নের বাইখির গ্রামের ক্রেতা মনিরুজ্জামান মনির বলেন, “দাম শুনে কাঁচামরিচ না কিনে শুকনা মরিচ কিনে বাড়ি ফিরছি। অবশ্য অন্যান্য সবজির দামও আকাশছোঁয়া।”
শহরের টেপাখোলা কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা গেল, কোথাও কাঁচামরিচ নেই। দোকানিরা দিনের শুরুতে যেটুকু মরিচ তুলেছিলেন, তা দুপুরের আগেই শেষ হয়ে গেছে।
এই বাজারের সবজি বিক্রেতা হাবিব মোল্লা বলেন, “কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে মরিচ গাছ নষ্ট হয়েছে। ঈদের ছুটিতে বাজারে কাঁচামরিচ আসছে না। আমরা সামান্য লাভ করি। বেশি দামে কিনলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। দাম বাড়ানো বা কমানোর কিছু্ই আমাদের হাতে নেই।”
ফরিদপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সোহেল শেখ বলেন, “জনবল সংকট থাকলেও আমরা নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করছি। মূলত আবহাওয়া ও ছুটির কারণেই কাঁচামরিচের দাম উর্দ্ধমুখী হয়ে উঠেছে। তবু আমরা বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অতিরিক্ত দাম রুখতে কাজ করছি।”