Published : 23 Jun 2023, 01:19 AM
সাংবাদিকদের সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম।
তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের মান নিশ্চিত এবং সংরক্ষণ করতে হবে। প্রেসকে স্বাধীন হতে হবে, সে যেন নিরপেক্ষভাবে সব খবর দিতে পারে সেই বন্দোবস্ত রাখতে হবে।”
বৃহস্পতিবার বিকালে গাজীপুর সার্কিট হাউস মিলনায়তনে ‘প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৭৪ ও প্রেস কাউন্সিল প্রণীত সাংবাদিকদের জন্য আচরণবিধি প্রতিপালন’ শীর্ষক সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গাজীপুর জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের বাসন-সদর জোনের সহকারী কমিশনার ফাহিম আসজাদ, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সুপারিনটেনডেন্ট মো. সাখাওয়াত হোসেন, গাজীপুর জেলা তথ্য কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল কবির মোল্লা, মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, গাজীপুরের সাংবাদিক মো. দেলোয়ার হোসেন, সৈয়দ মোকছেদুল আলম লিটন।
প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অনুষ্ঠানে সারাদেশে কর্মরত ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের ডাটাবেজ তৈরিকরণ, সাংবাদিকদের আচারণবিধি ও তাদের করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন।
তিনি বলেন, “যারা সাংবাদিক তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করতে হলে প্রথমে প্রেস কাউন্সিলে আসতে হবে। পরে প্রেস কাউন্সিল মামলাটি আইন-ধারা অনুযায়ী নির্ধারণ ও পরামর্শ দেবে যে সেটা কোনো আদালতে যাবে।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের সম্মান করতেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাংবাদিকদের সুসম্পর্ক ছিল। তিনি তার জীবনে সবসময় সাংবাদিকদের সমর্থন পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সাংবাদিকরা হলেন সমাজের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তিনি সাংবাদিকদের মান উন্নয়নে কাজ করেছেন; প্রেস কাউন্সিল গঠন করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন প্রেস কাউন্সিল হবে স্বাধীন এবং সাংবাদিকদের উন্নয়নে কাজ করবে।”
প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আরও বলেন, “আমি বলতে চাই, যাহা দেখিব তাহাই লিখিব তাহা নয়। যাহা দেখিব, তাহার মধ্যে দেশের ক্ষতি নাই তাহা লিখিব। ভালো কাজগুলো বেশি করে লিখব। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লিখতে হবে, স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধে লেখা যাবে না।”
এ সময় তিনি আরও বলেন, “সাংবাদিকতার মান উন্নয়নের জন্য নতুন সাংবাদিকদের ন্যূনতম স্নাতক পাস বা সাংবাদিকতায় পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা এবং প্রেস কাউন্সিলের সনদ থাকতে হবে। এজন্য সাংবাদিকদের ডাটা বেইজ তৈরির কাজ চলছে। গত এক বছরে দেশের ২২টি জেলার সাংবাদিকদের ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে। বাকি জেলাগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। ডাটাবেজ তৈরি হলে এবং প্রস্তাবিত আইন পাসের পর ইচ্ছা করলেই কেউ সাংবাদিক পরিচয় দিতে পারবেন না।”
সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “সেদিন নাদিম চলে গেলো, বেশ কয়েক বছর আগে সাগর-রুনি চলে গেছে। সাগর-রুনির মামলা চলে যখন, তখন আমি হাই কোর্টের জাস্টিস। সাগর-রুনির কেসের মতো কেস বাংলাদেশে দ্বিতীয় বার যেন না হয়।”
সাংবাদিক নিয়োগ এবং বেতনকাঠামোর বিষয়ে তিনি বলেন, “ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া তাদের ইচ্ছে মতো লোক নেবে। তবে তাদের ওয়েজবোর্ড অনুয়ায়ী সুযোগ দেওয়া উচিত। সকল মিডিয়ার এই ওয়াজবোর্ড মেনে নেওয়া উচিত। সাংবাদিকদের বেতন ভাতা নিঃসন্দেহে সিকির্উড হওয়া দরকার। সাংবাদিকদের বেতন-ভাতার বিষয়ে ঠকানো উচিৎ নয়।”
তিনি মালিক-সম্পাদকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনি সম্পাদক হলে অবশ্যই মাইনা দিতে হবে সাংবাদিকদের। আপনি একটি প্রেস কার্ড দিয়ে ছেড়ে দিবেন এটা হয় না। একটা কার্ড দিয়ে অবৈধ ইনকাম করার পথ করে দিবেন, এটা এলাউ হবে না। এটা দেশ তথা সরকার কেউ এলাউ করবো না। আপনি সাংবাদিক একাধিক নিয়োগ দেন সমস্যা নেই, কিন্তু বেতন দেন। তবে এজন্য সাংবাদিকদেরও আমাদের কাছে অভিযোগ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “৬৪ জেলায় এই ডাটাবেজ করা হবে। ডাটাবেজ তৈরি করা হয়ে গেলে দেশে অপসাংবাদিকতা বন্ধ হয়ে যাবে। প্রত্যেক সাংবাদিকদের তথ্য আমাদের কাছে থাকবে। সেখানে সবার নিয়োগপত্র থাকতে হবে। আমি আশা করি, এই কাজটি শেষ হলে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বড় একটি কাজ হবে। যারা লিস্টে নাম দেননি ডিসির কাছে জমা দেন। ডিসি ও তথ্য অফিসকে তথ্য সংগ্রহ এবং চিঠি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।”
প্রেস কাউন্সিলের সনদ ও সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে তিনি বলেন, “আইনজীবীদের সনদ আছে, তাদের বার কাউন্সিলে পরীক্ষায় পাস করে, সনদ পেয়ে প্রাক্টিস করতে হয়। এর আগে তারা আইনজীবী লিখতে পারেন না, কাজ করতে পারেন না। এজন্য আমরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন নিয়ে আলোচনায় বসলাম। সেখানে আলোচনা হলো বাংলাদেশে সাংবাদিক কত আছে, কোথায় আছে, কী করে, তাদের মান কেমন সব ডাটাবেজে থাকবে।
“বার কাউন্সিলে যেমন চাপ দিলেই দেখা যায়, কে কোথায় কাজ করছেন। আমরাও আমাদের কম্পিউটার চাপ দিলে তাদের তথ্য পেয়ে যাব। আমরা সেই সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী সারা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের লিস্ট করা শুরু হয়।”
“আমরা সারা বাংলাদেশের জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছি। উনি প্রত্যেক সম্পাদকে চিঠি দেবেন, জানতে চাইবেন, আপনার পত্রিকার কয়জন সাংবাদিক আছেন। কে কী পোস্টে কাজ করছেন, কত মাইনা দেন। এগুলো উল্লেখ করে সম্পাদককে চিঠি দেবেন। সেটি সংগ্রহ করে আমাদের দিতে বলা হয়েছে। আমাদের কাজ শুরু হয়েছে,” বলেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান।