Published : 26 Aug 2023, 09:13 AM
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদীর শাখা একটি খালে পাকা সেতুর অভাবে পাঁচ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়নের নতুন আন্ডার চর ও চর দৌলত খান (সিডি খান) ইউনিয়নের নতুন চর দৌলাত খাঁন গ্রামের মাঝ দিয়ে গেছে ওই খাল।
খালের ওপর নির্মিত নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়েই ৫/৬টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। তবে বর্ষা এলে বাড়ে দুর্ভোগ। ঝড়-বৃষ্টিতে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে সাঁকো পারাপার।
এ সময় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাছাড়া ওই এলাকার কৃষক, মৎস্যচাষিরা কৃষিপণ্য ও ঘেরে খাবার পৌঁছাতে মারাত্মক ভোগান্তিতে আছেন। বছরের পর বছর একটি পাকা সেতুর অপেক্ষায় ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আড়িয়াল খাঁ নদীর শাখা ওই খাল পারাপারের জন্য কয়েক হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো। দীর্ঘ বছর ধরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে ওই খাল পারাপার হতে হয়। সাঁকোর বাঁশ নষ্ট হলে এলাকার লোকজনই কিছুটা সচ্ছল গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে নিজেদের উদ্যোগে সাঁকোটির সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন এই পথে চিঠিরচর, নতুন আন্ডারচর ও নতুন চরদৌলাত খাঁনসহ ৫-৬টি গ্রামের স্কুল-কলেজ পডুয়া শিক্ষার্থী, কৃষাণ-কৃষাণী, ব্যবসায়ীসহ হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ওই সাঁকো পারাপার হচ্ছেন। খালের ওপর পাকা সেতু না থাকায় স্থানীয় কৃষকদের মাছ, ধান ও কৃষিপণ্য পারাপারে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে কৃষিপণ্য পরিবহণ সম্ভব না হওয়ায় উভয় পাড়ের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য পাশের হাট-বাজারে নিতে পারেন না।
প্রায় ১২০ থেকে ১৫০ ফুট দীর্ঘ সাঁকোটি পারাপারের সময় থরথর করে কাঁপতে থাকে। বর্ষায় পানির স্রোতে তা আরও ভয়ানক হয়ে ওঠে। আবার অনেক স্থানে বাঁশ-খুঁটি পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ভগ্নপ্রায় বাঁশের সাঁকোটির ওপর দিয়ে অতি কষ্টে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষ। অনেকে সাইকেল কাঁধে নিয়ে একহাত দিয়ে বাঁশ ধরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পার হচ্ছেন।
ওই এলাকার একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, সাঁকো পার হয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হয়। কোনো কিছু সঙ্গে নিয়ে পার হতে গেলে অনেকে প্রায়ই পানিতে পড়ে যায়।
আবু আলেম সরদার, নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, খোকন বেপারী ও লোকমান ঢালী জানান, এই খালের ওপর পাকা সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘ দিনের। নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। ভোটে পাস করার পর আর প্রতিশ্রুতির কথা মনে থাকে না। এই খালের ওপর সেতু না থাকায় আমাদের অনেক ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের কাছে তাদের দাবি, খালটির ওপর যেন দ্রুত একটি পাকা সেতু নির্মাণ করে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, “ওই স্থানে সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমি মেম্বার, আমার একার পক্ষে তো এই সেতু নির্মাণে ভূমিকা রাখা সম্ভব না। তবে, আমাদের পরিষদের চেয়ারম্যান এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন।”
সাহেবরামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহিম মুরাদ সরদার ও চর দৌলত খান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান চাঁন মিয়া উভয়ই বলেছেন, তারা সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) আবেদন করবেন।
কালকিনি উপজেলা প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এবং খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”