Published : 09 Apr 2023, 04:04 PM
টানা পাঁচদিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় চলছে মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ। কয়েকদিন বেশিরভাগ সময় তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ এর মধ্যে থাকলেও রোববার তা ৩৯ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে। ফলে মৌসুমের শুরুতেই তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে জনজীবন।
তাপদাহে বিশেষ করে রোজাদার, শিশু ও অসুস্থ্ মানুষদের বেশি কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। বয়স্করা তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। একই সঙ্গে হাঁফিয়ে উঠেছে প্রকৃতি ও প্রাণীকুল।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক আলতাফ হোসেন জানিয়েছেন, রোববার বেলা ১২টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬.৬ ডিগ্রি। বেলা ৩টায় যা পৌঁছে যায় ৩৯.০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা জেলায় এ মৌসুমের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা।
রোববার তীব্র রোদের তাপে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন নজরুল ইসলাম। শহরে ফেরি করে শিশুদের তৈরি পোশাক বিক্রি করা এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, “কোর্টে, স্টেশনে, হাসপাতাল এলাকায় ঘুরে ঘুরে পোশাক বিক্রি করতে হয়। রোদে আর ঘুরতে পারছি না। কয়েকদিন ধরে এতো বেশি রোদের তাপ আধা কিলোমিটার পথও হেঁটে যেতে পারছি না।”
একই ধরনের কথা বলেন আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া গ্রামের এনজিও কর্মী হাফিজুর রহমান। গরমে ক্লান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গার শহীদ হাসান চত্বরে থাকা স্থায়ী মঞ্চে বসে ছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমাকে মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়াতে হয়। ঋণ দিতে হয়, ঋণের কিস্তি আদায় করতে হয়। আজ আর পারছি না। সেজন্য এখানে বসলাম।
“এখন ভুট্টা উঠেছে। কাজের চাপ বেশি। অনেকে ঋণ নিয়েছেন, অনেকে নেবেন। কিন্তু এই রোদে কোনো কাজই করতে পারছি না।”
সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার শাখার সামনে তরমুজ বিক্রি করেন শহরের বাজার পাড়ার বাসিন্দা আশরাফ আলী।
তিনি বলেন, “সকাল ১০টার পর রাস্তায় মানুষ কমে যাচ্ছে। দুপুরের দিকে শহর একেবারে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের বেচাকেনাও কমে গেছে।
“রোদে মানুষ বাইরে আসছে না। গলা শুকিয়ে আসছে দুপুরের আগেই। রোজাদারদেরও খুব কষ্ট হচ্ছে।”
তাপমাত্রার এমন আচরেণের প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতেও। ক্ষতি হচ্ছে আমসহ অন্যান্য ফসলের।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের ইদ্রিস আলী একটি আমবাগান দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, “তীব্র রোদের কারণে আমবাগান থেকে গুটি আম ঝরে পড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হলে আরো বেশি ক্ষতি হবে।
“আমরা গাছে পানি স্প্রে করছি। সেচ দিচ্ছি। ওষুধ দিচ্ছি। কোনো কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছে না। আম ঝরে পড়া ঠেকানো যাচ্ছে না।”
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, এখন আমবাগানে মার্বেল আকারের কোথাও আরো একটু বড় আকারের আম রয়েছে গাছে। এ সময় বৃষ্টি না হলে, তীব্র রোদ থাকলে সেচ দিতে হবে। আবহাওয়ার এই অবস্থায় কিছুটা ক্ষতির ভয় থাকে।
“ধানের ক্ষতিরও ভয় রয়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। কৃষক কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে পরিচর্যা করলে ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হবে।”
আবহাওয়া পর্যবেক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, চুয়াডাঙ্গায় মার্চ মাসের শেষের দিকে দু-তিনদিন চুয়াডাঙ্গার আকাশ মেঘলা থেকেছে। কিছুটা বৃষ্টিপাতও হয়েছে। ওইসময় গরমের কষ্ট ছিল না, বরং শীতের আমেজ ছিল।
“এপ্রিলের ২ তারিখের পর থেকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। এ সময় বেশিরভাগ দিনই সূর্যের আলো ছিল তীব্র। আকাশ পরিস্কার থাকায় তাপমাত্রাও বেশি ছিল।”
তিনি জানান, জেলায় ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন ৩ এপ্রিল ৩৫.৫। এরপর ৪ ও ৫ এপ্রিল তাপমাত্রা উঠে গেল ৩৭ ডিগ্রিতে।
৬ এপ্রিল আরও একধাপ বেড়ে তাপমাত্রা হয়ে যায় ৩৭.৫ ডিগ্রি। ৭ এপ্রিল তাপমাত্রা আবার বাড়লো, ৩৮ ডিগ্রি। ৮ এপ্রিল তাপমাত্রা হয়ে গেল ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি বলেন, “আবহাওয়ার হিসাব অনুযায়ী ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত মাঝারি তাপপ্রবাহ। সেই হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় গত শুক্রবার থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে। তার আগে কয়েকদিন ছিল মৃদু তাপপ্রবাহ।
এখন পর্যন্ত আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস তাতে আরও কয়েকদিন এ অবস্থা থাকতে পারে বলে জানান এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।