Published : 24 Feb 2025, 08:59 PM
স্কুল-কলেজ পড়ুয়ায়ারা দেখাল বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানোর যন্ত্র, নদীতে ভাসমান আবর্জনা সংগ্রহের নৌকা কিংবা জোয়ার-ভাটার নদীর জন্য হাইড্রোলিক ব্রিজের মত প্রকল্প। তাদের চমকপ্রদ সব উদ্ভাবন প্রাপ্তবয়স্ক দর্শনার্থীদেরও ভাবনার খোরাক যোগাল।
সোমবার সকাল থেকে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) ধানমণ্ডি ক্যাম্পাসে তিন দিনব্যাপি এই ‘বিজ্ঞান ও শিল্প প্রযুক্তি মেলা’ শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে মেলা।
দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী মোট ৬৮টি উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়ে মেলায় অংশ নিচ্ছে। রাজধানীর বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয়জিত, সুসময় ও পরশ মেলায় এসেছে ‘হাইড্রোলিক ব্রিজ’ প্রকল্প নিয়ে।
সুসময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “জোয়ার-ভাটায় পানির পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যায়, তাই হাইড্রোলিক শক্তি ব্যবহার করে আমরা এর নকশা প্রস্তুত করেছি। পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে হাইড্রোলিক শক্তি ব্যবহার করে ব্রিজটি খুলে যাবে, ফলে নৌযান এর নিচ দিয়ে চলতে পারবে।
“প্যাসকেলের সূত্র ব্যবহার করে ব্রিজের মূল অংশ বাতাসের চাপ ব্যবহার করে মডেলে খোলা ও বন্ধ করা হচ্ছে। হাইড্রোলিক ফ্লুইড ও বাইরের শক্তি দিয়ে বড় স্কেলে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে।”
চট্টগ্রামের চান্দগাঁও সানোয়ারা বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী পুষ্পল বড়ুয়া ও মইনউদ্দিন আহনান এনেছে নদীতে ভাসমান আবর্জনা সংগ্রহের তৈরি করা ‘রিভার ক্লিনিং বোট’ প্রকল্প।
পুষ্পল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “এই বোটটি নদীতে ভাসমান আবর্জনা ও প্লাস্টিক সংগ্রহ করবে। এর আদলে একই পদ্ধতিতে বড় আকারেও এটি তৈরি সম্ভব। এতে আমরা ব্যাটারিচালিত মোটর ব্যবহার করছি, বাস্তবে হয়ত বড় জাহাজের জন্য ডিজেল চলিত ইঞ্জিন ব্যবহার করতে হবে।”
শেরে বাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাবাসসুম জান্নাত ও তাহসিন সালসাবিল মেলায় নিয়ে এসেছে ‘বাতাসচালিত ইঞ্জিন’ মডেল।
তাবাসসুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “বাতাসকে আটকে এর চাপ ব্যবহার করে আমাদের এই ইঞ্জিনটি চলবে। তবে বাতাস ধরে রাখতে আমরা যে বোতলটি ব্যবহার করছি সেটি ফুটো হয়ে গেছে। তাই এটি এখন চালাতে পারছি না। রাতে বাসায় গিয়ে এটি ঠিক করে আগামীকাল প্রদর্শন করব।”
ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল সানিডেলের শিক্ষার্থী সাদাকাত, শাওকিক ও সাফওয়ান প্রদর্শন করছেন বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানোর প্রকল্প ‘টেরা ট্যাংক’।
সাদাকাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “এখানে আমরা একটা ট্যাংকে মাইক্রোঅ্যালজি মিশ্রিত পানির মধ্য দিয়ে বাতাস প্রবাহিত করছি। এর ফলে বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে মাইক্রোঅ্যালজি অক্সিজেনে রূপান্তরিত করে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াবে। আর ধুলোবালি ও দূষিত পদার্থ পানিতে আটকে যাবে। এখানে আমরা বাতাস প্রবাহিত করার ফ্যানগুলোও সোলার প্যানেল থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ দিয়ে চালাচ্ছি।
“পৃথিবীতে অক্সিজেনের সবচেয়ে বড় উৎস বিভিন্ন মহাসাগরে ভাসমান মাইক্রোঅ্যালজি, গাছ নয়। একটি গাছ বছরে ২২ কেজি অক্সিজেন সাপ্লাই করে আর এক কিউবিক মিটার পানিতে থাকা মাইক্রোঅ্যালজি বছরে ১০৯৫ কেজি অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারে।”
সকালে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন।
তিনি বলেন, “সরকারি খাতে প্রথম গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিসিএসআইআর। এ গবেষাণাগার যাত্রা শুরু করেছিল বা এর উদ্দেশ্য ছিলো আমাদের কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতি উন্নয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করা। এ মেলার মূল আকর্ষণ শিক্ষার্থীরাই।”
পরিষদের সদস্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কাজী আনেয়ার হোসেন বলেন, “বিসিএসআইআর এবং তার ১২ ইউনিটের কেন্দ্র হিসেবে বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় শিক্ষার্থীরা দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প দাখিল করেছেন। যেসব প্রকল্প বিজ্ঞান মেলায় গ্রহণযোগ্য সেগুলো আমরা গ্রহণ করেছি।”
সভাপতির বক্তব্যে পরিষদের চেয়ারম্যান সামিনা আহমেদ বলেন, “বিসিএসআইআর শুরু থেকে বিজ্ঞানমনস্ক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে এদেশে শিল্প উন্নয়ন যেমন ভূমিকা রাখছে, তেমনি সারা দেশে বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যেমে সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশে উৎসাহ করার জন্য নানা আয়োজন করে আসছে।”