Published : 09 Jun 2025, 10:24 AM
সতীর্থরা যখন বাঁধনহারা উদযাপনে ছুটোছুটি করছেন মাঠময়, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো তখন কাঁদছেন। হাঁটু গেড়ে মাঠে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। কেউ একজন চেষ্টা করলেন তাকে টেনে তুলতে। কিন্তু তিনি তখন যেন অন্য জগতে। নিজেকে সমর্পণ করে দিয়েছেন সময়ের হাতে!
রোনালদোর কান্না সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেশ কয়েকবারই দেখা গেছে। ২০২২ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে। সৌদি আরবে কিংস কাপ ফাইনাল হেরে। ইউরোয় স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টিতে গোল করতে ব্যর্থ হয়ে। আলোচনা-সমালোচনা, ট্রল, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, কী হয়নি সেসব কান্না নিয়ে! এবারের কান্না কেবলই প্রাপ্তির, শুধুই তৃপ্তির।
চোখের জল আর মুখের হাসি মিলেমিশে একাকার। কতদিন পর রোনালদো বুঝলেন, এই কান্নার মতো সুখ আর হয় না!
একটি ট্রফি, বহু কাঙ্ক্ষিত একটি ট্রফির ছোঁয়ায় এলো এমন সুখের কান্না। স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়ে নেশন্স কাপ জিতে তিনি দেখা পেলেন এই মুহূর্তটির। সমতায় ফেরানো গোল করে দলকে শিরোপার পথে এগিয়ে নেওয়ার কৃতিত্বও তার।
ক্যারিয়ারে ট্রফি কম জেতেননি তিনি। দেশের হয়েও জিতেছেন। তার পরও এবারেরটি সত্যিই বিশেষ কিছু। অনেক দিন অপেক্ষার পর যে এই স্বাদ পেলেন রোনালদো! তার হাসি, তার কান্না, তার অনুভূতির প্রকাশ, সবকিছুতেই মিশে থাকল তা।
শুধুই কি পর্তুগালের জয়? বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখানো, সংশয়-ভ্রুকুটিকে মাড়িয়ে, অনেক অনেক প্রশ্নকে উড়িয়ে এগিয়ে চলা, এত বছর পরও নিত্য নিজেকে প্রমাণ করা আর প্রাসঙ্গিক রাখার চ্যালেঞ্জ, সব মিলিয়ে এবারের নেশন্স লিগ যেন রোনালদোর গ্রেটনেসেরও একটি জয়।
৯ ম্যাচে ৮ গোল, কোয়ার্টার-ফাইনাল, সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে গোল, এই ৪০ বছর বয়সে এমন পারফরম্যান্স তো প্রায় অবিশ্বাস্য!
ট্রফি নিয়ে রোনালদোর নানা উদযাপন, বাচ্চাদের মতো করে নানা ভঙ্গি, এসবেই বোঝা যাচ্ছিল তার খুশি। ম্যাচের পর তা ফুটে উঠল কণ্ঠেও।
“কী আনন্দ! এই প্রজন্মের জন্য এটা জরুরি ছিল, এই মানের একটি ট্রফি যাদের প্রাপ্য। আমাদের পরিবারের জন্যও.. আমার বাচ্চারা এসেছে এখানে, আমার স্ত্রী, ভাই, বন্ধুরা…।”
“পর্তুগালের কথা যখন হয়, এই অনুভূতিই বিশেষ কিছু। এই প্রজন্মের অধিনায়ক হতে পারা দারুণ গর্ব ও সম্মানের। জাতীয় দলের হয়ে কোনো শিরোপা জিততে পারা মানে সবসময়ই প্রাপ্তির চূড়া।”
পর্তুগালের ফুটবল সংস্কৃতি ও ইতিহাস অনেক পুরোনো। তার পরও সেটিকে এখন পরিষ্কার ভাগ করা যায় রোনালদো-পূর্ব ও রোনালদো-যুগ হিসেবে। তার আবির্ভাবের আগে কোনোদিন বড় কোনো আসরের সেমি-ফাইনালে খেলতে পারেনি তারা। রোনালদোর হাত ধরেই সেই দলটি একটি ইউরো ও দুটি নেশন্স কাপ জিতে নিল। সেমি-ফাইনাল খেলল মোট চারবার, প্রতিটিতেই ছিল রোনালদোর গোল!
ক্লাব ফুটবলে রেকর্ড-অর্জন-ট্রফিতে সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারের পরও তাই দেশের প্রাপ্তিতে রোনালদোর উচ্ছ্বাস স্পর্শ করে সর্বোচ্চ চূড়া।
“পর্তুগালের জন্য কিছু জিততে পারা সবসময়ই স্পেশাল। ক্লাবের জয়ে অনেক ট্রফি জিতেছি, কিন্তু পর্তুগালের হয়ে জয়ের চেয়ে সুখের কিছু আর নেই। এজন্যই এই কান্না। দায়িত্ব পালন করেছি এবং এই আনন্দের সীমা নেই।”
“এটা সুন্দর, দারুণ। গোটা জাতির জন্য এটি উপহার। আমরা ছোট্ট একটি দেশ, কিন্তু আমাদের আকাঙ্ক্ষা অনেক বড়।”
তার ক্লাব ক্যারিয়ার খানিকটা অনিশ্চয়তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। নতুন কোথাও যাবেন নাকি আল নাস্রেই থাকবেন, নিশ্চিত নয় এখনও। নেশন্স কাপের ফাইনালে চোট নিয়েই খেলেছেন, গোল করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাঠ থাকতে পারেননি। চোটের কারণে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ৯০ মিনিটের আগে। সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারের যে পর্যায়ে আছেন, তাতে শেষটা বেশি দূরে নয়।
তিনিও বেশি দূরে তাকাচ্ছেন না। ক্যারিয়ারের বাকি সময়টায় এগোতে চান স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনায়।
“ভবিষ্যৎ ভাবনা চলতে থাকবে সংক্ষিপ্ত মেয়াদ ধরে। তবে আপাতত সময়টা বিশ্রামের। চোট নিয়ে খেলেছি এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, নিজেকে ঠেলে নিয়েছি সবটুকু… কারণ, জাতীয় দলের জন্য নিজেকে সর্বোচ্চটুকু চেষ্টা করতেই হবে।”