Published : 24 May 2025, 11:17 AM
দুয়োর শব্দ কানে যেতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ইয়ুর্গেন ক্লপ। শুরুতে ভেবেছিলেন, তার নিজেরই কানের সমস্যা, হয়তো ভুল শুনছেন। পরমুহূর্তে যখন তিনি বুঝতে পারলেন সত্যিই দুয়ো দেওয়া হচ্ছে ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডকে, বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ লিভারপুলের সাবেক কোচ বন্ধ করে দিলেন টিভি।
হতাশাময় সেই ঘটনার কথা শোনালেন ক্লপ নিজেই। লিভাপুলের মাঠে ক্লাবের একজন গ্রেটকে দুয়ো দেওয়া হয়েছে, মানতেই পারছেন না তিনি।
ছয় বছর বয়সে লিভারপুলের একাডেমিতে পা রাখার পর এই ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত লিভারপুলের সঙ্গেই মিশে আছেন অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ড। একাডেমি ও যুব দল হয়ে মূল দলে জায়গা করে নিয়ে গত ৯ বছরে ক্লাবের অনেক সাফল্যের সঙ্গী তিনি। তবে সেই বন্ধন ছিন্ন হচ্ছে এই মৌসুম শেষে। ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। নতুন ক্লাবের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও না এলেও গোটা ফুটবল দুনিয়ার জানা, তার ঠিকানা হতে যাচ্ছে রেয়াল মাদ্রিদ।
ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর গত ১১ মে অ্যানফিল্ডে আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচে সমর্থকদের একটি অংশ দফায় দফায় দুয়ো দেন অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডকে। এই ঘটনা প্রবল প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়, যার রেশ চলছে এখনও। সেখানে সামিল এখন ক্লপও।
লিভারপুল ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে সাবেক এই কোচ বললেন, ক্লাবের প্রতি অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডের অবদান যেন ভুলে না যান সমর্থেকরা।
“কাউকে আমি বলতে চাই না যে কোনটি তাদের ভাবা উচিত বা কোনটি ভাবতে হবে। তবে এটুকু বলতে পারি যে, আপনার ভাবনাটি ভুল।”
“আমি এটা বলব না যে, কেউ হতাশ হবেন না বা ক্ষুব্ধ হবেন না (অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ড চলে যাওয়ায়)। তবে এটুকু বলব, ভুলে যাবেন না সে কী করেছে ক্লাবের হয়ে। এই ক্লাব তো কখনও এসব ভুলে যায় না!”
২০১৫ সালের লিভারপুলের কোচের দায়িত্ব নেন ক্লপ। পরের বছর তার হাত ধরেই মূল দলে অভিষেক অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডের। সেই সময়ের সম্ভাবনাময় তরুণ ক্রমেই হয়ে ওঠেন দলের ভরসা আর কোচের প্রিয় শিষ্যদের একজন। দুজনের মেলবন্ধন ক্লাবকে এনে দেয় কাঙ্ক্ষিত অনেক সাফল্য। প্রিমিয়ার লিগ জমানায় ক্লাবের প্রথম শিরোপা, পরে আরেকটি লিগ ট্রফি, ১৪ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা এবং আরও কত কী!
সমর্থকদের কাছে সবসময় দারুণ জনপ্রিয়ও ছিলেন অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ড। এমন একজনকে দুয়ো দিতে দেখে অবিশ্বাস্য লাগছিল ক্লপের।
“যখন সে নামল, খেলাটি দেখছিলাম আমি এবং দুয়ো শুনতে পেলাম। বয়স অনেক হয়েছে আমার। ভাবলাম, হয়তো আমার কানের সমস্যা, ভুল শুনছি। ভলিউম বাড়িয়ে দিলাম এবং আবার দুয়ো শুনতে পেলাম। আরও ১০ সেকেন্ডের মতো লাগল বুঝতে এবং এরপর টিভি বন্ধ করে দিলাম।”
“সত্যি বলতে, ওই সময় এর চেয়ে বেশি হতাশ আর হতে পারতাম না। আমরা তো এমন নই, শতভাগ সত্যি যে এমন নই। প্রতিটি দিন সে এই ক্লাবের জন্য একদম সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে। এখন, ২০ বছরে সবকিছু দেওয়ার পর সে অন্য কোথাও যেতে চায়। কারও যদি ক্ষুব্ধ হওয়া উচিত, সেটা মালিকপক্ষ। কিন্তু তারা তো হয়নি!”
দুয়োর ঘটনার পর সতীর্থদের বেশ কজনকেই পাশে পেয়েছেন অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ড। কদিন আগে মোহামেদ সালাহও এই ঘটনার প্রবল সমালোচনা করে বলেছেন, লিভারপুলের ক্লাবের সঙ্গে এসব যায় না।
সেই দুয়োকে ভুলিয়ে অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডকে দারুণভাবে বিদায় দেওয়ার একটি সুযোগ ক্লাব ও সমর্থকদের আছে। লিভারপুলের জার্সিতে তিনি শেষ ম্যাচটি খেলতে নামবেন রোববার ঘরের মাঠে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে।