Published : 22 May 2025, 12:42 PM
সন হিউং-মিন ইতিহাস গড়তে চেয়েছিলেন। কিংবদন্তি হতে চেয়েছিলেন। অবশেষে তিনি পারলেন। বছরের পর বছর ধরে যে স্বপ্নের ছবি তিনি এঁকেছেন হৃদয়ে, বারবার যে ছবি ঝাপসা হয়ে গেছে, যে হৃদয়ে মেঘ জমেছে, সেখানেই অবশেষে সুখের প্রবল বর্ষণ। স্বপ্নপূরণের দিনে গর্বিত কণ্ঠে টটেনহ্যাম হটস্পারের নায়ক বলতে পারলেন, “আমি একজন কিংবদন্তি।”
কিংবদন্তি হতে কি ট্রফি জিততেই হয়? হয়তো তর্কসাপেক্ষ। ইতিহাসের সব কিংবদন্তি তো ট্রফি জেতেননি! তবে এই শর্তটা নিজেকেই বেঁধে দিয়েছিলেন সন। ১০ বছর ধরে এই ক্লাবে আছেন। ক্লাবের ইতিহাসের সেরাদের একজন তিনি হয়েই গেছেন। তবু মৌসুম শুরুর আগে তিনি বলেছিলেন, একটি ট্রফি না জেতা পর্যন্ত তিনি কিংবদন্তি হওয়ার যোগ্য নন।
হ্যাঁ, টটেনহ্যামে ব্যক্তিগত সাফল্যের এই দীর্ঘ পথচলায় দলীয় সাফল্যের স্বাদ পাচ্ছিলেন না সন। সম্ভাবনা কয়েকবার উঁকি দিয়েও মিলিয়ে গেছে। এবার যখন আরেকবার শিরোপার মঞ্চে উঠতে পারলেন, রোমাঞ্চ-শঙ্কা-শিহরণ, সবই ছিল তার। ফাইনালের আগে বলেছিলেন, “আমার জীবনের সেরা দিন হতে পারে এটি… ইতিহাস গড়তে চাই।”
ফাইনালের পর সেই সন আবেগের স্রোতে হাবুডুবু খেয়ে স্যালুট করছেন নিজেকে।
“বলতে পারেন, আমি একজন কিংবদন্তি। কেন নয়? তবে স্রেফ আজকে!”
“১৭ বছর ধরে এটা কেউ পারেনি। এই দুর্দান্ত ফুটবলারদের নিয়ে এটা করতে পারা… আজই সেই দিন। হয়তো আজকেই বলব, আমি এই ক্লাবের কিংবদন্তি।”
হ্যাঁ, নিজের শর্ত জয় করে সন কিংবদন্তি হয়েছেন। ইউরোপা লিগের ফাইনালে বুধবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ১-০ গোলে হারিয়েছে টটেনহ্যাম হটস্পার।
২০০৮ সালে ইংলিশ লিগ কাপ জয়ের পর টটেনহ্যামের প্রথম ট্রফি এটি। ইউরোপিয়ান ট্রফির ছোঁয়া পেল তারা ৪১ বছর পর! সবশেষ সেই ১৯৮৪ সালে উত্তর লন্ডনের ক্লাবটি জিততে পেরেছিল উয়েফা কাপ (এখনকার ইউরোপা)।
বায়ার লেভারকুজেন থেকে ২০১৫ সালে টটেনহ্যামে এসেছেন সন। গোলের পর গোল করেছেন। দলের অনেক জয়ের স্বাক্ষী হয়েছেন। ব্যক্তিগত অনেক পুরস্কার ও স্বীকৃতি জিতেছেন। কিন্তু চূড়ান্ত লক্ষ্য তো দলীয় অর্জন!
এতটা পথ মাড়িয়ে সেই সাফল্যে নিজেদের রাঙাতে পেরে সন ছিলেন আত্মহারা।
“অনুভূতি অসাধারণ। সবসময় এই স্বপ্নই দেখে এসেছি এবং আজকে তা পূরণের দিন। স্বপ্ন সত্যি হলো, সত্যিকার অর্থেই সত্যি হলো। আমি কী যে খুশি! আজকে আমি এই দুনিয়ার সবচেয়ে খুশি মানুষ।”
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চলতি মৌসুমটা টটেনহ্যামের কেটেছে দুঃস্বপ্নের মতো। ৩৭ ম্যাচের ২১টিই হেরে পয়েন্ট তালিকায় তারা আছে ১৭ নম্বরে। স্রেফ অবনমিত তিনটি দলই আছে তাদের নিচে। ইউরোপের মঞ্চে সেই দলের হাত ধরেই ঘুচল ক্লাবের চার দশকের অপেক্ষা। তলানির দিকে থেকেও আগামী মৌসুমে তারা খেলবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে।
লিগে এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পরও গোটা দল একতাবদ্ধ ছিল, বললেন সন।
“গোটা মৌসুমে ফিরে তাকালে, কিছু সময় থাকে যা খুবই কঠিন। তবে আমরা ফুটবলাররা সবসময় এককাট্টা থেকেছি। তরুণরা সবসময় লড়াই করেছে ও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমি চেষ্টা করেছি ওদেরকে ভালো পরামর্শ দিতে, ইতিবাচক কথা বলতে। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে, এমন অসাধারণ ফুটবলারদের পাশে পেয়েছি।”
মাত্র কয়েকদিন আগেই সন অভিনন্দন জানিয়েছেন তার দীর্ঘদিনের সতীর্থ, আক্রমণভাগের সঙ্গী ও বন্ধু হ্যারি কেইনকে। মৌসুমের পর মৌসুম ধরে প্রতিপক্ষের রক্ষণে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন দুজন মিলে। ওই সময়টায় প্রিমিয়ার লিগের আক্রমণভাগের সেরা জুটি তারা। কিন্তু দুজনের বেদনার রঙ ছিল একই, ক্লাব ক্যারিয়ারে ট্রফির দেখা পাননি কেউই।
এর চেয়েও বড় ট্রফির খুব কাছে গিয়েছিলেন তারা ২০১৯ সালে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পেরে ওঠেননি লিভারপুলের সঙ্গে। ২০২১ সালে লিগ কাপের ফাইনালে তারা হেরে যান ম্যানচেস্টার সিটির কাছে।
অধরা ট্রফির আশায় জার্মানিতে পাড়ি জমিয়ে এবার বুন্ডেসলিগা জিতেছেন কেইন। তাকে শুভেচ্ছা জানানোর সপ্তাহখানেকপর সনের অপূর্ণতাও ঘুচে গেল।
ফাইনালে অবশ্য সেরা একাদশে ছিলেন না সন। পায়ের চোট কাটিয়ে মাত্র কিছুদিন আগে তিনি ফিরেছেন মাঠে। ফাইনালে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন ৬৭তম মিনিটে। শেষ বাঁশি বাজার পর বাঁধনহারা উদযাপনে মেতে ওঠেন তিনি সতীর্থদের সঙ্গে।
সেই উদযাপন তিনি থামাতে চান না সহসাই। ট্রফির স্বপ্নে এতটাই মগ্ন ছিলেন যে, ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল তার। এখন ভেসে যেতে চান উপভোগের আনন্দে।
“অবশ্যই চাপ অনুভব করছিলাম। এত তীব্রভাবে চাইছিলাম জিততে! গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিটি দিন শুধু এই সময়টির স্বপ্ন দেখেছি। শেষ পর্যন্ত এটি সত্যি হলো, এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারব ও উপভোগ করতে পারব।”
“আজকের দিনটায় আমরা সত্যিকার অর্থেই উদযাপন করতে পারব। কাজেই এটিকে এতটা স্মরণীয় করে রাখতে হবে যেন কখনোই ভুলতে না পারি। হয়তো কালকে আমি ফ্লাইট মিস করব!”