উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ
Published : 16 Oct 2024, 02:47 PM
ইচ্ছে করলে সিরাত জাহান স্বপ্না খেলা চালিয়ে যেতেই পারতেন। থাকতে পারতেন এবারের উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে। কিন্তু স্বপ্নের রাশ স্বপ্না টেনে ধরলেন নিজেই। গত বছর হঠাৎ করেই দিলেন অবসরের ঘোষণা। সতীর্থদের বিশ্বাস ছিল স্বপ্না ফিরবেন, কিন্তু ফেরেননি। না ফেরা নিয়ে সাফজয়ী এই ফরোয়ার্ডের অবশ্য আক্ষেপ নেই একটুও। এখন চাওয়া শুধু একটাই- গতবারের মতো এবারও অর্জনের আলোয় আলোকিত হোক দল।
ফুটবলের পাট চুকিয়ে দেওয়ার পর স্বপ্না গত জানুয়ারিতে জীবনের নতুন পর্ব শুরু করেছেন, সংসার পেতেছেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দুই বছর আগের সাফ জয়ের ঝলমলে স্মৃতিতে ডুব দেওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবন, বৃহস্পতিবার নেপালে শুরু হতে যাওয়া সাফ, বর্তমান দলসহ অনেক বিষয় নিয়ে কথা বললেন মন খুলে।
মাত্র ২২ বছর বয়সে অবসর নিয়ে নিলেন। তা না হলে তো এবারও দলের সঙ্গী থাকতেন। মিস করবেন না?
সিরাত জাহান স্বপ্না: যত দিন বেঁচে আছি, ততদিন মিস করব। এটাকে তো আর অনুভূতি থেকে মুছে ফেলার সুযোগ নেই। একটা সময় ফুটবলই আমার জীবনের সবকিছু ছিল, যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন এই অনুভূতি আমার সাথে থাকবে।
যখন সবাই মুকুট ধরে রাখার লড়াইয়ে নামবে, নিজেকে সেখানে না দেখে আক্ষেপ হবে না?
সিরাত জাহান স্বপ্না: আক্ষেপ বলতে, আমি যেহেতু নিজেই চলে এসেছি এবং সিদ্ধান্তটা যেহেতু আমার নিজেরই ছিল, তাই আক্ষেপের ওরকম জায়গা নেই। আসলে অবসর নেওয়ার পর কখনও মনে হয়নি আরও কিছুদিন থাকতে পারতাম বা খেলা চালিয়ে যেতে পারতাম। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, চাইলে আমি আরও তিন-চার বছর থাকতে পারতাম, সে সামর্থ্য ছিল, কিন্তু (এখনও) ভালো আছি। দুই জীবনেই ভালো আছি। ফুটবলার হিসেবেও ভালো ছিলাম, এই জীবনেও ভালো আছি।
সাবিনা-কৃষ্ণা-মারিয়াদের সাথে কথা হয়? দীর্ঘদিনের এই সতীর্থরা কখনও বলেনি অবসর ভেঙে ফিরে আসতে?
সিরাত জাহান স্বপ্না: ওদের সাথে তো এখনও কথা হয়। আসলে আমি যখন চলে আসি, তখনও ওরা ভেবেছে আমি ফিরব। অনেকেই বলেছে যে, আমার অপেক্ষায় তারা আছে। আমাকে মিস করে। বলেছে, আমার জায়গায় যারা আছে বা নতুন এসেছে, তাদের সাথে হচ্ছে না বা মিলছে না; অনেক সমস্যা হচ্ছে। মাঝখানে যে খেলাগুলো হলো, সেসময়ও অনেকে বলেছে ফিরতে। এতদিনের একটা বনিবনা, হঠাৎ করে নতুন একজনের সাথে মানিয়ে নেওয়া… তাই ওরা আমাকে বলেছিল, আমার অপেক্ষায় আছে। ওদের প্রত্যাশা ছিল, আমি হয়তো ফিরব।
আমি যখন চলে আসি, তখন ওরা বলেছিল, ‘তুই যাচ্ছিস, যা, কিন্তু আমাদের বিশ্বাস তুই ফিরে আসবি। গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে ফিরে আসিস।’ কিন্তু আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই চলে এসেছি।
আপনার কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেছেন, স্বপ্নার জায়গা এখনও কেউ নিতে পারেনি…নতুনরা স্বপ্নার জায়গা না নিতে পারলে বা এই দল ব্যর্থ হলে আপনার কি খারাপ লাগবে না?
সিরাত জাহান স্বপ্না: অবশ্যই খারাপ লাগবে। কেননা, আমিও চাই আমরা যেটা অর্জন করেছি, সেটা যে এরা ধরে রাখে। আমার পজিশনে যারা খেলছে, বিশেষ করে তহুরা (খাতুন)…মাঝে যখন বাংলাদেশের খেলা ছিল, আমি কিন্তু দেখতে গিয়েছিলাম। তখন তহুরাকে বলেছি, এত নিচে নেমে খেলিস না। আমাকে যেমন কোচ বলতেন, ‘আমরা যদি ১০টা গোলও খাই, তাহলেও তুমি নিচে নামবে না।’ আমিও তহুরাকে সেটাই বলেছি। যদি দল খারাপ করে, তাহলে তো অনেক খারাপ লাগবে।
আপনি অবসরে, আক্রমণভাবে আপনার সতীর্থ কৃষ্ণা রানী সরকার চোট থেকে এখনও শতভাগ ফিট হয়ে ওঠেননি…
সিরাত জাহান স্বপ্না: এটা নিয়ে আমিও আপসেট। ওর সাথে প্রায়ই কথা হয়। আসলে কৃষ্ণার চোট হওয়াতে আরও সমস্যা হচ্ছে। ওর চিকিৎসাটা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। আক্রমণভাগে ও দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমান দল কেমন মনে হচ্ছে আপনার?
সিরাত জাহান স্বপ্না: চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ দেখে আমি খুবই আপসেট ছিলাম। খেলোয়াড়দের পজিশনও বদল করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে একটু ভালো খেলেছিল দল। এরপর ভুটানের বিপক্ষে আমরা আগে গোল খেয়েছি, যে ভুটানকে আমরা সাফে পাত্তাই দেইনি, সেই ভুটানের কাছে আমরা আগে গোল খাচ্ছি, এটা ভালো লাগেনি আমার।
আফিদা, সাগরিকা-নতুনদের খেলা কেমন লেগেছে আপনার? আপনার শুন্যতা নতুনরা পূরণ করতে পারবে?
সিরাত জাহান স্বপ্না: সাগরিকার খেলা আমার বরাবরই ভালো লাগে। তবে ওর কিন্তু বয়স কম, ওকে সময় দিতে হবে। আমরাও কিন্তু এক দিনে এই পর্যায়ে আসিনি। আমাদেরও সময় লেগেছে। সাগরিকার বয়স কম, অল্পতে হয়তো এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। তবে গুছিয়েও নিতে পারবে। ভুটানের বিপক্ষে ও গোল মিস করেছে, আবার গোল করেছেও। নিজেকে যদি সেভাবে তৈরি করতে পারে, ও ভালো করবে। আফিদাও ভালো।
রক্ষণে আঁখি খাতুনের জায়গা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা এখনও কাটেনি…
সিরাত জাহান স্বপ্না: একজন খেলোয়াড়ের জায়গা অন্য জনকে পূরণ করতে সময় লাগবে। আঁখি দীর্ঘদিন জাতীয় দলে খেলেছে, অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। সেটা হঠাৎ করে নতুন কেউ সেই জায়গা তৈরি করা বা খেলা সম্ভব না। ওকে (আফিদা) সময় দিতে হবে।
আপনি মনে হচ্ছে দল নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন…
সিরাত জাহান স্বপ্না: টিম নিয়ে আশাবাদ বলতে, দলের সাথে অনেকটা সময় ছিলাম। বলতে পারেন, জীবনের অর্ধেকটাই দলের সাথে ছিলাম, তাদের জন্য তো ভালো কিছুই আশা করি। আমরা যেটা অর্জন করেছি, সেটা যেন এই দল ধরে রাখে। বাকিটা নির্ভর করবে, এই দল কীভাবে পারফরম করে, তার উপর।
শেষ প্রশ্ন ভারতকে প্রথমবারের মতো হারানো ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন আপনি। পরে করেছিলেন আরও দুটি। ফিরেছিলেন বিজয়ীর বেশে। দুই বছর পরের অনুভূতি কেমন?
সিরাত জাহান স্বপ্না: সত্যি বলতে তখন ওতটা বুঝতে পারিনি। কিন্তু এখন উপলব্ধি করতে পারি আমরা কী করেছি! আসলে শিরোপা জয়ের পর টিম হোটেলে, আপনাদের সাথে যে আনন্দ, উৎসব করেছি, সেটা আসলে ভুলে যাওয়ার নয়। সময়, পরিস্থিতি হয়তো অনেক কিছু বদলে দেয়, কিন্তু এই অনুভূতিগুলো থেকে যায়। আশা করি, এবারও এমন অনুভূতি নিয়েই দেশে ফিরবে সাবিনা-কৃষ্ণারা।