Published : 07 May 2025, 07:38 PM
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের রেশ পড়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও। প্রতিবেশীদের যুদ্ধের দামামায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ‘আতঙ্ক’ ছড়ালে প্রায় দেড়শ পয়েন্ট হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক।
বুধবার সকালে লেনদেনের একবারে শুরু থেকে দিনের বাকি অংশেও বড় পতন অব্যাহত থাকায় ডিএসইএক্স সূচক নেমেছে ৪ হাজার ৮০২ পয়েন্টে।
এদিন প্রথম ১৮ মিনিটেই প্রধান এ সূচক কমে যায় ৯২ পয়েন্ট। পরের ১৮ মিনিটে তা কিছুটা ঘোরার চেষ্টা করে পতন কমলেও পরে তা আবার অব্যাহত থাকে।
এর আগে মাঝরাতে ভারত কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার বদলা নিতে পাকিস্তানে আক্রমণ করলে তা সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে ওঠে। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকার খবর দেখেই বিনিয়োগকারীরা লেনদেন শুরু করেন। অনেকের ধারণা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে তা বাংলাদেশেও প্রভাব পড়তে পারে।
এতে সাম্প্রতিক সময়ের নিম্নমুখী পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের আরও আস্থাহীন করে তুললে আতঙ্কে অনেকেই দিনের শুরু থেকে শেয়ার বিক্রি করতে থাকেন।
এতে সব খাতের প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারদর কমতে থাকে। দিন শেষেও সেই প্রবণতা বজায় থাকায় ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৪৯ পয়েন্ট সূচক হারায়।
প্রধান সূচকের ৩ শতাংশ হারানোর দিনে অন্য দুই সূচকেও পতন দেখা দেয়। শেয়ার বিক্রির প্রতিযোগিতায় তড়তড়িয়ে সূচক কমলেও ক্রেতাও একেবারে উধাও হয়ে যায়নি। এতে দিন শেষে লেনদেন পাঁচশ কোটি টাকার বেশি হয়। লেনদেন হয় ৫১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকার।
ছয় মাসের বেশি সময় আগে গত ২৭ অক্টোবরও একদিনে ১৪৯ পয়েন্ট সূচক হারিয়েছিল ডিএসই। সেদিন লেনদেন কমে হয়েছিল ৩০৩ কোটি টাকা।
সেদিনের পতনকে অস্বাভাবিক মনে করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কিন্তু সেই প্রতিবেদন এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
সূচকের এত বড় পতনের বিষয়ে বিএসইসি মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘বিএসইসি বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। সার্ভিল্যান্স বিভাগ প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করে লেনদেন। যদি কোনো অস্বাভাবিক কিছু ঘটে থাকে, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম মনে করেন ‘প্যানিক সেল’ করে একটি গোষ্ঠী লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘‘পাক-ভারত যুদ্ধকে সামনে নিয়ে এসে একটি প্যান্কি সৃষ্টি করা হয়েছে। রিউমার (গুজব) ছড়িয়েছে অনেকে। যুদ্ধ ভিন্ন দেশের আর এখানে তার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। শেয়ারদর পতন করে একটি গ্রুপ ফের কম দামে কেনার সুযোগ পেল।’’
সাধারণত শেয়ারদরে বড় পতন হলে লেনদেন আরো কমে যাওয়ার কথা। ডিএসইতে বুধবার তা হয়নি। এটিও একটি ঈঙ্গিত বলে মনে করছেন তিনি।
ডিএসইর লেনদেন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট শেয়ার হাতবদল হয় ৫১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকার। আগের দিন হয় ৫৪৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকার, এটি ছিল গত আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন।
দিনশেষে মোট লেনদেনের ২২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বা ১১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয় ব্যাংক খাতের। স্বাভাবিক সময়ে ব্যাংক খাতের শেয়ার হাদবদল হয় ৬০ থেকে ৮০ কোটি টাকার। আগের দিনও লেনদেন হয় ১৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার। গত দুই দিন শত কোটি টাকার বেশি লেনদেন হল এ বাজারে।
লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানির শেয়ার হাতবদল করে ৬৩ কোটি ৩৩ কোটি টাকার। তৃতীয় অবস্থানে থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের লেনদেন ছিল ৫৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকার।
লেনদেনের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, লেনদেনে আসাদের মধ্যে ৯টি বাদে বাকি ৩৮৫ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর হারায়। কোম্পানি ও ফান্ড মিলিয়ে মিলিয়ে আগের দরে লেনদেন হয় ৫টির।
দিন শেষে ক্লোজিং প্রাইস বিবেচনায় ডিএসইতে শেয়ার দর বৃদ্ধিতে শীর্ষে উঠে আসে বসুন্ধরা পেপার মিল, মিডল্যান্ড ব্যাংক ও এনআরবি ব্যাংক।
অন্যদিকে ক্লোজিং প্রাইস বিবেচনায় শেয়ার দর হারানোর শীর্ষে চলে আসে প্রাইম টেক্সটাইল, বিচ হ্যাচারি ও মাইডাস ফাইন্যান্স।