Published : 29 May 2025, 01:56 PM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘বিগ, বিউটিফুল’ নামের কর ও ব্যয়ের মেগা বিলটি গত সপ্তাহে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এ পাস হয়েছে। আর এ বিলটি নিয়ে ‘হতাশা’ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্পেরই ‘ডান হাত’ ইলন মাস্ক।
বিবিসি লিখেছে, এর মাধ্যমে মাস্ক এমন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নিজের ভিন্নমত প্রকাশ করলেন, যাকে ২০২৪ সালের পুনর্নির্বাচনে সাহায্য করেছিলেন তিনি।
গত সপ্তাহে অল্প ভোটের ব্যবধানে ট্রাম্পের ‘বিগ, বিউটিফুল’ বিলটি পাস করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ। এই বিলে বহু ট্রিলিয়ন ডলারের কর ছাড় ও প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর অঙ্গীকার রয়েছে। বিলটি এখন সিনেটে পাঠানো হবে।
প্রযুক্তি দুনিয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তি ও মার্কিন ধনকুবের মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ’কে বলেছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনায় ‘হতাশ’ হয়েছেন তিনি। কারণ প্রেসিডেন্টের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যয় কমানোর জন্য মাস্কের প্রচেষ্টাকে ‘দুর্বল করবে’ এই বিল।
ট্রাম্প প্রসাশনের ফেডারেল ব্যয় কমিয়ে আনতে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’র প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল মাস্ককে। যার মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশে সাহায্যের তহবিল বন্ধ করা’সহ বিভিন্ন প্রকল্প। তবে সম্প্রতি মাস্ক বলেছেন, এই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন তিনি।
সিবিএস-এর ‘সানডে মর্নিং’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেছেন, “সত্যি বলতে, এত বড় ব্যয়ের বিল দেখে হতাশ হয়েছি আমি”। সম্প্রচার শুরুর আগে ভিডিওটির একটি ক্লিপ প্রকাশ করেছে চ্যানেলটি।
তিনি আরও বলেছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা “ঘাটতি কমানোর বদলে বরং বাজেট ঘাটতি আরও বাড়িয়ে দেবে”।
ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের এ আইনটি পরবর্তী অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ব্যয় ও আয়ের মধ্যে পার্থক্য অর্থাৎ বাজেট ঘাটতি প্রায় ৬০ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়াতে পারে।
পাশাপাশি মাস্ক বলেছেন, বিলটি “ডজ টিমের কার্যক্রমকেও দুর্বল করবে”। এখানে ডজ বলতে ট্রাম্প প্রশাসনের খরচ কমানোর উপদেষ্টা সংস্থা ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’র সংক্ষিপ্ত রূপকে বুঝিয়েছেন মাস্ক।
ট্রাম্পের ওই আইনের কথা উল্লেখ করে মাস্ক বলেছেন, “আমি মনে করি, একটি আইন হয় বড় হতে পারে, নয়তো সুন্দর হতে পারে। তবে একসঙ্গে দুটোই হতে পারে কি না তা আমার জানা নেই।”
বিবিসি লিখেছে, মাস্কের এমন মন্তব্য ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের ভেতরের চলমান উত্তেজনাকেই তুলে ধরেছে, যেখানে কর ও ব্যয় সংক্রান্ত পরিকল্পনা নিয়ে দলের বিভিন্ন অংশের বিরোধের কারণে বিলটি প্রতিনিধি পরিষদে পাস করতে বেগ পেতে হয়েছে।
এ আইনটি ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের গুরুত্বপূর্ণ এক নীতি। এতে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে অর্থাৎ ২০১৭ সালে যেসব কর ছাড় দেওয়া হয়েছিল, যেগুলো শিগগিরই শেষ হওয়ার পথে রয়েছে, সেগুলোর সময়সীমা বাড়িয়ে দেবে।
একইসঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় বাড়ানো ও প্রেসিডেন্টের পরিকল্পিত বড় পরিমাণে বিদেশি নাগরিক তাড়ানোর জন্য অর্থ দেবে এই বিল।
আইনটিতে সরকারের ঋণ সীমা চার ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ সরকার যে সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ নিতে পারে, সেটির নতুন সীমা নির্ধারণ করেছে এটি।
এ বিষয়ে মাস্কের এমন মন্তব্য ট্রাম্পের সঙ্গে তার ক্রমাগত দূরত্বের ইঙ্গিত দিয়েছে। অথচ গত বছর ২৫ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ দিয়ে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছিলেন মাস্ক।
ডজ-এর পদ থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরই এমন মন্তব্য করলেন মার্কিন এই ধনকুবের।
এর আগে মাস্ক বলেছিলেন, সরকারকে এক ট্রিলিয়ন ডলার খরচ কমাতে সাহায্য করতে চান তিনি, যার জন্য চুক্তি বাতিল ও সরকারি কর্মী সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনাও করেছিলেন মাস্ক।