Published : 30 Nov 2024, 01:52 PM
হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপ চ্যাটিং মূত্রথলির ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকা কৃষ্ণাঙ্গদের বাঁচাতে পারে কি না, তা খুঁজে বের করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন গবেষকরা।
যুক্তরাজ্যের অলাভজনক সংস্থা ‘প্রস্টেট ক্যান্সার রিসার্চ’-এর তথ্য অনুসারে, দেশটিতে প্রতি চারজন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষের মধ্যে একজন মূত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। সে তুলনায়, শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে আটজনে একজন ও অন্যান্য বর্ণের প্রতি ১৩ জনে একজনের বেলায় এমনটি ঘটে থাকে বলে উঠে এসেছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে।
এ গবেষণায় কাজ করা কার্ডিফের কমিউনিটি কর্মী স্টিভ খাইরেহ’র মতে, অনেকেই এ উচ্চ ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন নন। তিনি আরও যোগ করেন, ‘এমনকি তারা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কথা শুনতেও নারাজ’।
বর্তমানে এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. সারা ফ্রাই, যিনি কার্ডিফের পুরুষ রোগীদের সঙ্গে কাজ করছেন। এর লক্ষ্য হল, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে এমন ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের কাছে স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য শেয়ার করলে তা কাজে লাগবে কি না, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা।
ওয়েলশের গ্রামীণ অঞ্চল রুজের বাসিন্দা জুলিয়ান ডেলানি বলছেন, পেশাদার চিকিৎসকের বাইরে অন্যদের সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি কৃতজ্ঞ।
২০১৬ সালে তিনি রোটারি ক্লাবের এক আয়োজনে অংশ নেন, যেখানে তাকে একটি পরীক্ষা করার অনুরোধ জানানো হয়। এর ফলে, এই ৭৩ বছর বয়সী এমন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন, যা এর আগে তিনি কখনও দেখেননি।
তিনি স্বীকার করেছেন, ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ না থাকায় তার মনে হয়েছে, তিনি এ রোগে আক্রান্ত হবেন না।
“লোকজন যখন আপনাকে বলবে, আপনার মূত্রথলিতে ক্যান্সার দানা বেঁধেছে, তখন তা নিশ্চিতভাবেই আপনার মধ্যে ভয় সৃষ্টি করবে,” ব্যাখ্যা করেন তিনি।
“কিন্তু আমি অনেক প্রশ্ন করেছি। আর এ বিষয়ে গবেষণা করার পাশাপাশি চেষ্টা করেছি, যত বেশি সম্ভব মানুষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা যায়।”
পরবর্তীতে নিজের মূত্রথলি অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন জুলিয়ান। আর এর পর থেকেই তিনি ক্যান্সারবিহীন জীবন কাটাচ্ছেন।
সাবেক এ ব্রিটিশ গ্যাসস্টেশন কর্মী এ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর তার তিন ভাইকেও ক্যান্সার পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন। এমনকি এদের একজনকে তিনি পেশাদার চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন।
“বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ বিষয়ে স্বল্প ধারণা থাকায় রোগীদের যত বেশি সম্ভব প্রশ্ন করতে বলা হয়। কিন্তু আপনি যদি এটাই না জানেন যে কী প্রশ্ন করতে হবে, এর মানে, আপনি ফেঁসে গেছেন।”
ড. ফ্রাই এ গবেষণা করার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ‘ভেলিন্ড্রে ক্যান্সার সেন্টার’র গবেষণা নার্স হিসেবে কাটানো সময় থেকেই তিনি বুঝতে পারেন, তার ক্লিনিকে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিরা খুব কমই আসেন।
বর্তমানে তিনি এ পাইলট প্রকল্পের জন্য ‘ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে’ থেকে আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করেছেন।
এ গবেষণা পরিচালনা করবেন তার কমিউনিটির পুরুষরা, যেখানে তার আগের এক গবেষণা অনুসৃত হচ্ছে। আর এতে উঠে এসেছে, বন্ধুদের মধ্যে স্বাস্থ্যগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক সাড়া মেলে বিভিন্ন বর্ণের কমিউনিটি থেকে।
“বন্ধুদের মধ্যে তথ্য শেয়ার করা একজন পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শের চেয়ে বেশি কার্যকর। কারণ, পেশাদারদের কাছে গেলে তাদের মাথায় এমন ভাবনা আসতে পারে যে, আচ্ছা! আমাকে হয়ত এটা নিয়ে আরও ভাবতে হবে,” বলেন তিনি।
“আমি যখন পিএইচডি করছিলাম, তখন আমি একদল শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তির সঙ্গেও কাজ করেছি। এমনকি তাদের অনেকে অকপটেই স্বীকার করতেন, ‘আমার মধ্যে হয়ত এমন সমস্যা আছে, যা আমাকে অন্যের সাহায্য না নিয়ে একাই সমাধান করতে হবে।”
এ পাইলট প্রকল্প সফল হলে, এর পরিসর বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা পরবর্তীতে কোনো জাতীয় স্ক্রিনিং প্রকল্পেও কাজে লাগতে পারে।
এমনই একটি মেসেজিং গ্রুপ তৈরি করছেন স্টিভ, যিনি এখন কার্ডিফের গ্রেঞ্জটাউন, রিভারসাইড ও বিউটটাউনের মতো এলাকায় কাজ করছেন।
তিনি বলেছেন, তার পরিকল্পনা বেশ কয়েক ক্ষেত্রেই যুক্তিসঙ্গত।
“বেশিরভাগ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রমিত ইংরেজি ভাষায় কথা বললেও আমাদের কমিউনিটিতে লোকজন এমন বেশ কিছু ভাষায় কথা বলে থাকেন, যেগুলো ‘স্ল্যাং’ বা ‘স্ট্রিট ল্যাঙ্গুয়েজ’ হিসেবে পরিচিত। আর তাদের কাছে এমন ভাষায় বার্তা পৌঁছানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা তারা সহজেই বুঝতে পারেন।”
তবে, শেষমেশ একটি সহজ বার্তা দিয়ে যোগাযোগ তৈরি করাই এ প্রকল্পের লক্ষ্য বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
“আপনার বয়স ৫০ বছরের বেশি হলে, সেক্ষেত্রে সহজ সমাধান হল, ক্যান্সার পরীক্ষা করা।”