Published : 05 Apr 2025, 02:45 PM
সামাজিক মাধ্যম জায়ান্ট মেটার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কেনিয়ার উচ্চ আদালত। এর আওতায় ইথিওপিয়ায় সহিংসতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগে দুইশো ৪০ কোটি ডলারের মামলা হয়েছে ফেইসবুকের মূল কোম্পানি মেটার বিরুদ্ধে।
দুই ইথিওপীয় নাগরিকের দায়ের করা এই মামলায় ফেইসবুককে বিদ্বেষমূলক কনটেন্ট প্রচার ও সহিংসতায় উস্কানি দেওয়া বন্ধের জন্য তাদের অ্যালগরিদম পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। পাশাপাশি আফ্রিকায় আরও কনটেন্ট মডারেটর নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
ফেইসবুকে উস্কানি দেওয়া বিদ্বেষমূলক ও সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের জন্য এই মামলায় দুইশো ৪০ কোটি ডলারের ‘ক্ষতিপূরণ তহবিল’ তারা দাবি করেছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা গার্ডিয়ান।
দাবিদারদের মধ্যে একজন হলেন অধ্যাপক মিয়ারেগ আমারে আব্রাহারের ছেলে। ২০২১ সালে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের সময় ফেইসবুকে তার ভাষণ ও হুমকিমূলক পোস্ট প্রকাশ পাওয়ার পর ইথিওপিয়ায় নিজ বাড়িতে খুন হন অধ্যাপক মিয়ারেগ।
আরেকজন দাবিদার হলেন যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক গবেষক ফিসেহা টেকলে। উত্তর ইথিওপিয়ার টাইগ্রেতে সংঘাতের সময় সংঘটিত সহিংসতার ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন তিনি এবং ফেইসবুকে তিনি মৃত্যুর হুমকি পেয়েছিলেন।
মেটার যুক্তি, ফেইসবুকের ইথিওপিয়া মডারেটররা সেই সময়ে কেনিয়ায় থাকলেও এই মামলা করার এখতিয়ার নেই কেনিয়ার আদালতের। তবে বৃহস্পতিবার নাইরোবিতে কেনিয়ার উচ্চ আদালত রায় দিয়েছে, এ মামলাটি দেশটির আদালতের এখতিয়ারের মধ্যেই পড়ে।
মেরেগের ছেলে আব্রাহাম মেরেগ বলেছেন, “আদালতের আজকের সিদ্ধান্তের জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এটা লজ্জাজনক যে, মেটা যুক্তি দিচ্ছে, কেনিয়ায় আইনের শাসনের অধীনে আসা তাদের জন্য উচিত নয়।” তিনি বলেন, “আফ্রিকানদেরও জীবনের মূল্য আছে।”
টেকলে বলেছেন, ফেইসবুককে নিরাপদ করতে মেটার ব্যর্থতার কারণে তিনি ইথিওপিয়ায় ফিরে যেতে পারছেন না।
তিনি বলেছেন, “মেটা আমার যে ক্ষতি করেছে তার ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। তবে, কোম্পানিটি তাদের সকল প্ল্যাটফর্মে ক্ষাতিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিকে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে। যাতে অন্য কাউকে আমার মতো পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে না হয়।”
“আমি এখন আদালতে এই বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ শুনানির অপেক্ষায় রয়েছি।”
‘ফক্সগ্লোভ’ ও ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠক এই মামলায় মেরাগ হত্যার জন্য মেটার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানিয়েছে। মামলার তৃতীয় দাবিদার হচ্ছে কেনিয়াভিত্তিক এনজিও ‘কাতিবা ইনস্টিটিউট’।
২০২২ সালে ‘ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম’ ও ‘অবজারভার’-এর এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, টাইগ্রেতে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে জেনেও ফেইসবুক তাদের ব্যবহারকারীদের বিদ্বেষ ও ভুল তথ্যের মাধ্যমে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার মতো কনটেন্ট পোস্ট করতে দিচ্ছে।
ওই সময় এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মেটা বলেছিল, ইথিওপিয়ায় “ভুল তথ্যের ছড়িয়ে পড়া বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ” নেওয়ার পাশাপাশি বিদ্বেষ ও উস্কানিমূলক বক্তব্য ঠেকাতে “নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করেছে” তারা।
এদিকে, এই চলমান আইনি বিষয়ে মেটা কোনও মন্তব্য করবে না বলে জানিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জায়ান্টটি।