Published : 26 Dec 2022, 03:51 PM
পৃথিবীর কক্ষপথের আশপাশ দিয়ে ছুটে যায় এবং যে কোনো সময় ভূপৃষ্ঠে আঘাত হানতে পারে এমন গ্রহাণু আর ধূমকেতুর খোঁজে নতুন স্পেস টেলিস্কোপ ‘নিও সার্ভেয়ার’-এর নির্মাণ কাজ শুরু করেছে নাসা।
সম্প্রতি নাসার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের কঠোর পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় পাশ করেছে নাসার ‘নিয়ার-আর্থ অবজেক্ট সার্ভেয়ার (নিও সার্ভেয়ার)’ টেলিস্কোপ। এর খরচ, সম্ভাব্য কারিগরি জটিলতা আর সময়সীমা নির্ধারণের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষষণা সংস্থাটি।
আকারে ১৪০ মিটারের চেয়ে বড় এবং পৃথিবীর কক্ষপথের ৩ কোটি মাইলের মধ্যে আসতে পারে– নাসা পৃথিবীর চারপাশের মহাকাশে ভাসমান এমন বস্তুগুলোর অন্তত ৯০ শতাংশ চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০০৫ সালেই। তারই অংশ হিসেবে নাসার ‘প্ল্যানেটারি ডিফেন্স কোঅর্ডিনেশন অফিস (পিডিসিও)’র কার্যক্রমকে সমর্থন দেবে নিও সার্ভেয়ার টেলিস্কোপ।
আকারে ১৪০ মিটারের চেয়ে বড় যে কোনো মহাজাগতিক বস্তু, গ্রহাণু বা ধূমকেতু ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়লে তার ফলাফল হতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়।
নিও সার্ভেয়ার নির্মাণের মূল উদ্দেশ্যে ব্যাখ্যা করে পিডিসিও কর্মকর্তা লিন্ডলি জনসন বলেন, “পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক বস্তুগুলো দ্রুত চিহ্নিত করা, অনুসরণ করা এবং শ্রেণীভূক্ত করার ক্ষেত্রে নাসার নতুন প্রজন্মের সক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করছে নিও সার্ভেয়ার।”
“আকাশের দিকে সবসময় চোখ রাখতে ভূপৃষ্ঠের টেলিস্কোপগুলো সবসময়েই গুরুত্বপূর্ণ থাকবে। কিন্তু মহাকাশের ইনফ্রারেড অবজার্ভেটরি নাসার পৃথিবী প্রতিরক্ষা কৌশলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।”
সম্ভাব্য হুমকি সম্পর্কে জানতে হবে আগে
নাসা জানিয়েছে, পৃথিবী থেকে ১০ লাখ মাইল দূরে এলওয়ান লাগ্রাঞ্জ পয়েন্টে অবস্থান নেবে নিও সার্ভেয়ার। পৃথিবী আর সূর্যের মাঝামাঝি এ জায়গাটিতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ‘স্থিতিশীল’।
সেখান থেকে ইনফ্রারেড আলোতে পুরো সৌরজগতের দিকে নজর রাখতে পারবে নিও। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাধার ফলে ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত টেলিস্কোপে ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্য ধরা পড়ে না।
অন্যদিকে, মহাকাশের অনেক গ্রহাণু এবং ধূমকেতু দৃশ্যমান আলোতে আলোকিত হয় না। কিন্তু সূর্যের তাপে ওই অন্ধকার গ্রহাণুগুলো উত্তপ্ত হয় বলে তা চিহ্নিত করতে পারবে নিও সার্ভেয়ার।
এ ছাড়াও, সূর্যের দিক থেকে কোনো গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসলে সেটাও চিহ্নিত করতে পারবে নিও।
নিওর ভূমিকা নিয়ে নাসার বিবৃতিতে মিশনের পরিচালক অ্যামি মাইনজার বলেন, “এ গ্রহের ইতিহাসে প্রথমবারের মত পৃথিবীর বাসিন্দারা একে বিপজ্জনক গ্রহাণু থেকে রক্ষার কৌশল নির্মাণ করছে। কিন্তু গ্রহাণুগুলোকে প্রতিহত করার আগে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। সে লক্ষ্যে নিও সার্ভেয়ার গেইমচেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে।”
নাসা জানিয়েছে, মূল নকশা সবুজ সংকেত পাওয়ার পরপরই এর মূল যন্ত্রাংশগুলোর নির্মাণকাজ শুরু করে দিয়েছেন নাসার প্রকৌশলীরা। ইতোমধ্যেই স্পেস টেলিস্কোপটিকে শীতল রাখার জন্য পরিকল্পিত রেডিয়েটরগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
এ ছাড়াও, মূল টেলিস্কোপকে মহাকাশযান থেকে আলাদা রাখার কাঠামোর নির্মাণ কাজও শুরু করেছে নাসা। মহাকাশযানের তাপ আর সানশিল্ড থেকে টেলিস্কোপের শীতল যন্ত্রাংশগুলোকে রক্ষা করবে ওই বিশেষ কাঠামোটি।
এ ছাড়াও টেলিস্কোপের ইনফ্রারেড ডিটক্টের, বিম স্প্লিটার, ফিল্টার নির্মাণে অগ্রগতি হয়েছে এবং টেলিস্কোপের আয়না নির্মাণের কাজও শুরু হয়ে গেছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে নাসা। টেলিস্কোপসহ পুরো মহাকাশযান নির্মাণের দায়িত্বে আছে নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাব (জেপিএল)।