Published : 01 Jun 2025, 05:40 PM
আদালতের ব্রিফিংয়ে চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের অভিযোগে ধরা পড়ায় মার্কিন আইনজীবীকে শাস্তি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ’র এক আদালত।
ওই আইনজীবী আদালতে এমন কিছু কাগজ জমা দিয়েছেন, যেখানে চ্যাটজিপিটিকে লেখা তৈরি করে দিতে বলেছিলেন তিনি। আর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি সেই নথিতে এমন সব বিষয়ের উল্লেখ ছিল যেগুলোর বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। উদাহরণ হিসাবে, নথিতে এমন এক মামলার উল্লেখ ছিল, যে মামলাটি কখনোই দায়ের হয়নি। এমন ভুলের জন্য আদালত ওই আইনজীবীকে শাস্তি দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা গার্ডিয়ান।
ওই আইনজীবীর নাম রিচার্ড বেডনার তাকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউটাহ’র আপিল আদালত।
আদালতের নথি পর্যালোচনা করে ইউটাহের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সাইট এবিসিফোর প্রতিবেদনে লিখেছে, ওই মামলার আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী ছিলেন রিচার্ড বেডনার ও আরেকজন ইউটাহভিত্তিক আইনজীবী ডগলাস ডারবানো। সময়মতো মামলার আপিলের আবেদন দাখিল করেছিলেন তারা।
আইনজীবীদের পক্ষ থেকে জমা দেওয়া ওই আইনি প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, সেটি একজন সহকারী লিখেছে। ওই সময় বিপরীত পক্ষের আইনজীবী সেখানে বেশ কয়েকটি ভুল খুঁজে পান।
ওই মামলার বিপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, মামলার আবেদনের কিছু অংশ এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে মামলার রেফারেন্স ও উদ্ধৃতিও রয়েছে, যার মধ্যে অন্তত একটি মামলার কোন অস্তিত্বই নেই। এটি কোনো ডেটাবেজে খুঁজে পাওয়া যায়নি, কেবল চ্যাটজিপিটিতেই মিলেছে। আর কিছু রেফারেন্স ছিল এমন বিষয় নিয়ে, যেগুলোর সঙ্গে মামলার কোনো সম্পর্কই নেই।
এবিসিফোর প্রতিবেদনে লিখেছে, ওই আইনি প্রতিবেদনে ‘রয়্যার বনাম নেলসন’ নামের এক মামলার উল্লেখ ছিল। তবে এ নামের কোনো মামলা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ইউটাহ আপিল আদালতের এক নথিতে বলা হয়েছে, ভুল রেফারেন্স ধরা পড়ার পর রিচার্ড বেডনার নিজের ভুল স্বীকার করেছেন ও ক্ষমা চেয়েছেন।
নথিতে আরও বলা হয়েছে, এপ্রিল মাসে এক শুনানির সময় বেডনার ও তার আইনজীবী স্বীকার করেছেন, তারা যে আবেদনের কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন, সেখানে বানানো আইনি রেফারেন্স ছিল, যা চ্যাটজিপিটি থেকে নিয়েছিলেন ও এর দায় স্বীকারও করেছেন তারা।
সংবাদমাধ্যমটি আরও লিখেছে, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন বেডনার। তিনি ভুল করেছেন, আর সেই ভুলের খরচ যেমন অন্যপক্ষের আইনজীবীর ফি তিনি নিজে দিয়ে দিতে চান, যাতে বিষয়টা মিটমাট করা যায়।
ইউটাহ আপিল আদালত এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা এ বিষয়ে একমত যে, আইনি নথি প্রস্তুতের ক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহার গবেষণার উপায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও উন্নত হবে। তবে, আমরা জোর দিয়ে বলছি প্রত্যেক আইনজীবীর দায়িত্ব হলো তার আদালতে জমা দেওয়া প্রতিটি নথি সঠিক কি না তা খতিয়ে দেখা ও নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে, আবেদনকারীর আইনজীবী সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ তারা এমন এক আবেদন জমা দিয়েছেন যেখানে চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে তৈরি ভুয়া মামলার নজির রয়েছে।”
এবিসিফোর প্রতিবেদনে বলেছে, ভুয়া মামলার তথ্য দেওয়ার ফল হিসেবে রিচার্ড বেডনারকে কয়েকটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
যার মধ্যে রয়েছে, বিপক্ষের আইনজীবীর ফি পরিশোধ করতে হবে, যেটি আবেদনের কাজ ও শুনানিতে ব্যয় হয়েছে। নিজের মক্কেলকে টাকা ফেরত দিতে হবে বিশেষ করে আবেদন প্রস্তুত ও শুনানিতে যে সময় লেগেছে, তার জন্য নেওয়া ফি এবং জরিমানা হিসেবে ইউটাহভিত্তিক আইনি সাহায্যকারী সংগঠন ‘অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল’-এ এক হাজার ডলার অনুদান দিতে হবে।